সংসদে অমিত শাহ। ফাইল চিত্র
দিন দুয়েক আগেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্যসভায় দাবি করেছিলেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে কয়েকটি বিশেষ ধর্মের শরণার্থীদের নাগরিকত্বের বিষয়টি নিয়ে যৌথ সিলেক্ট কমিটির বৈঠকে (প্রথম মোদী সরকারের আমলে) কোনও আপত্তি ওঠেনি। সম্মতি জানিয়েছিল সব দল।
অথচ ওই কমিটির রিপোর্ট বলছে, ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্বের প্রশ্নে কমিটির ৩০ জন সদস্যের মধ্যে পাঁচ দলের অন্তত আট থেকে ন’জন সাংসদ বৈঠকে বিরোধিতা করেন। আপত্তি জানানো হয় লিখিত ভাবেও। বিরোধী নেতাদের মতে, ওই আপত্তিই প্রমাণ করছে, বিল নিয়ে আদৌ সর্বসম্মতি ছিল না।
প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে সত্য কী! শাসক শিবির নীরব। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজ্যসভাকে ভুল তথ্য দিচ্ছেন ওই অভিযোগ জানিয়ে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডুকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। ঘনিষ্ঠ মহলে তৃণমূল নেতাদের দাবি, স্বাধিকার ভঙ্গের প্রস্তাব আনা হোক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। যদিও শেষ পর্যন্ত কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা নির্ভর করছে চেয়ারম্যানের উপরে।
চলতি বিতর্কের সূত্রপাত গত বুধবার। জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) সংক্রান্ত আলোচনায় উঠে আসে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিষয়টি। যে প্রসঙ্গে অমিত শাহ বলেন, ‘‘ওই বিল লোকসভায় পাশ হয়েছিল। পরে সব দলের প্রতিনিধি নিয়ে গড়া যৌথ সিলেক্ট কমিটিও তাতে সবুজ সঙ্কেত দেয়। তা সব দলের সম্মতিতে অনুমোদিত হয়ে ফের সংসদে আসে। কিন্তু বিলটি পাশ হওয়ার আগেই লোকসভার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তাই এখন নতুন করে বিলটি আনা হবে।’’
কিন্তু ঘটনা হল, ওই কমিটির বৈঠকে ৩০ সদস্যের মধ্যে কংগ্রেসের অন্তত চার জন বিলে ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়া নিয়ে আপত্তি তোলেন। সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরী, প্রদীপ ভট্টাচার্য, ভুবনেশ্বর কলিতা (এখন বিজেপিতে) ও সুস্মিতা দেব জানান, এর ফলে সংবিধানের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদ লঙ্ঘিত হবে। আইনের চোখে সকলেই সমান হওয়া সত্ত্বেও, ওই বিলে শরণার্থীদের মধ্যে ধর্মের ভিত্তিতে ফারাক করার কথা বলা হয়েছে। সংশোধনীতে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের যে হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পার্সি আর খ্রিস্টান নাগরিকেরা নিজেদের দেশে ধর্মীয় বিদ্বেষের শিকার হয়ে এ দেশে শরণার্থী হয়েছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব দেবে কেন্দ্র। অথচ মুসলিমদের কোনও উল্লেখ নেই।
ধর্মের ভিত্তিতে শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার নীতির বিরোধিতা করে লিখিত আপত্তি জানান তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন ও সৌগত রায়। দু’জনেই জানান, ধর্মের ভিত্তিতে শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়া কোনও ভাবেই এ দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খায় না। এতে বিশেষ ধর্মের মানুষের মধ্যে সংশয় ও ভয়ের বাতাবরণ তৈরি হবে। সিপিএমের মহম্মদ সেলিম একই ভাবে জানিয়েছিলেন, সংবিধানে মুসলিমদের এ দেশের নাগরিক হিসাবে যে সমানাধিকারের কথা বলা হয়েছে, ওই বিলের ফলে তা ধাক্কা খাবে। একই সুরে আপত্তি জানান বিজু জনতা দলের সাংসদ ভর্তৃহরি মহতাব। এ ছাড়া, শরণার্থীদের গ্রহণ করার প্রশ্নে শুধু তিন দেশের নাম কেন থাকবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। কংগ্রেসের সুস্মিতা দেবেরও প্রশ্ন ছিল, দেশভাগের সময়ে আফগানিস্তান ভারতের অঙ্গ ছিল না। তা হলে কেন সেখানকার শরণার্থীদের আশ্রয় দেবে ভারত? আর যদি ভারতীয় উপমহাদেশের কথা ধরা হয়, সে ক্ষেত্রে মায়ানমার ও শ্রীলঙ্কা থেকে আসা শরণার্থীরা কেন সুযোগ পাবেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy