অমিতকে যখন কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করা হল, তখনই নরেন্দ্র মোদী স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, তাঁর উত্তরসূরি কে।
দিল্লিতে সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠদের এক অনুষ্ঠান হচ্ছিল। প্রধান বক্তা হিসেবে পৌঁছে গিয়েছেন অমিত শাহ। আশীর্বচন দিতে কর্নাটক থেকে উড়ে এসেছেন এক প্রবীণ। ভরা সভাঘরে অমিতকে আশীর্বাদ করে বললেন, ‘ভবিষ্যতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হোন।’ সভাগৃহ জুড়ে করতালির ঝড় বয়ে গেল।
ভুরু কুঁচকে, মাথাটি নাড়িয়ে একটু বিরক্তি প্রকাশ অবশ্য করলেন অমিত। হয়তো বোঝাতে চাইলেন, ‘এমন কথা আবার কেন?’ কিন্তু পরক্ষণেই হাসিমুখে মাথা পেতে গুরুজনের সেই আশীর্বাদ কবুলও করলেন।
রাজনাথ সিংহকে সরিয়ে অমিতকে যখন এ বার কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করা হল, তখনই নরেন্দ্র মোদী স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, তাঁর উত্তরসূরি কে। ৫৪ বছরের অমিত শাহের জন্মদিন আগামিকাল। পাঁচ বছর পরে তাঁর বয়স সবে ষাট ছুঁই ছুঁই হবে। নরেন্দ্র মোদীর হবে ৭৪। বিজেপি শিবিরে কয়েক মাস ধরেই আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে, মোদীর পরে প্রধানমন্ত্রী কি অমিতই? সেই যে আলোচনা এত দিন ঘরোয়া স্তরে ছিল, এখন খোদ অমিত শাহের সামনেই তার প্রকাশ হচ্ছে!
বিজেপি নেতারা বলছেন, বিজেপির মতো সংগঠনভিত্তিক দলে ভবিষ্যতে কী হবে, তা সময়ই বলবে। কিন্তু এ-ও ঠিক, পাঁচ বছর ধরে মোদী-শাহ জুটিই বিজেপিতে সব থেকে বেশি ক্ষমতাধর। আর এখন অমিতের কাঁধের উচ্চতা রোজ বাড়ছে। অনেক সময় এমনও ধারণা তৈরি হচ্ছে যে, প্রধানমন্ত্রী বরং আগের তুলনায় অনেক বেশি নমনীয় হচ্ছেন, আর গর্জন বাড়ছে অমিত শাহের।
কী ভাবে?
দলের অনেকেরই পর্যবেক্ষণ, বিজেপিতে বহু দিন ধরে ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। তা সত্ত্বেও অমিত একাধারে বিজেপির সভাপতি ও দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সভাপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া অবশ্য শুরু হয়েছে। উদাহরণ দিয়ে আরও বলা হচ্ছে, মোদী পাঁচ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী। প্রথম ধাপেও বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জিতেছিলেন। তা-ও জম্মু-কাশ্মীরের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ হল, যখন অমিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হলেন। সর্দার পটেলের সঙ্গেও অমিতের তুলনা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে।
এখানেই শেষ নয়। অরুণ জেটলির প্রয়াণের পরে মোদী সরকারের একাধিক মন্ত্রিগোষ্ঠীর দায়িত্বও গিয়েছে শাহের কাছে। তাবড় তাবড় মন্ত্রীও নিজের মন্ত্রকের বিষয়ে আলোচনা করতে এখন নর্থ ব্লকে ছোটেন। অর্থনীতি কী করে ঘুরে দাঁড়াবে, তা নিয়েও বক্তব্য জানান শাহই। মহারাষ্ট্র, হরিয়ানায় ভোট শেষ হল আজ। এই দুই রাজ্যেও মোদীর পরে যে-নেতার সভার জন্য সব থেকে বেশি দাবি এসেছে, তিনি অমিত শাহ। দুই রাজ্যে মোদীর থেকেও বেশি সভা করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ৩৭০ নিয়ে ‘দেশপ্রেম’ বটিকার সুর চড়িয়ে প্রচার করে গিয়েছেন নিরন্তর। জনসভায় আজকাল তাঁকে ‘হিন্দুস্তান কা শের’ বলে সম্বোধন করা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে মোদীর পরে অমিতই ‘অবিসংবাদী জননেতা’ হিসেবে উঠে আসছেন। আজকাল বিভিন্ন মঞ্চে, সাক্ষাৎকারে এই প্রশ্নের মুখোমুখিও হতে হচ্ছে তাঁকে। আর প্রশ্ন এলেই বিনয়ের সঙ্গে জবাব দিচ্ছেন অমিত শাহ: ‘‘না, না এমন কিছুই নয়। নানা সময়ে এমন অনেক ধারণা তৈরি করা হয়। নরেন্দ্র মোদীই আমাদের সকলের নেতা। তাঁর নেতৃত্বেই আমরা নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করছি মাত্র।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy