মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-মিছিলে কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরাকে আটকাল পুলিশ। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই
মূল্যবৃদ্ধি প্রশ্নে কংগ্রেস নেতৃত্ব সর্বাত্মক ভাবে মাঠে নামতে নড়েচড়ে বসলেন বিজেপি নেতৃত্ব। মুদ্রাস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আজ রাহুল-প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরার নেতৃত্বে সরকার-বিরোধী বিক্ষোভকে ধর্মের সঙ্গে জুড়ে আক্রমণ শানালেন বিজেপির শীর্ষ নেতা অমিত শাহ। তাঁর কথায়, যেহেতু দু’বছর আগে আজকের দিনে অযোধ্যায় রাম মন্দিরের ভূমিপূজা হয়েছিল, তাই সংখ্যালঘু সমাজকে তোষণের উদ্দেশ্যেই এই দিনটি আন্দোলনের জন্য বেছে নিয়েছেন রাহুল গান্ধীরা। পাল্টা আক্রমণে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, এ হল গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে ধর্মীয় মেরুকরণের মরিয়া চেষ্টা।
আজ দিল্লিতে মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে পথে নামার সিদ্ধান্ত নেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। দলের কর্মীরা পুরুষ-নারী নির্বিশেষে কালো পোশাক পরে আজ পথে নামেন। কংগ্রেস সাংসদেরা সংসদ থেকে রাষ্ট্রপতি ভবন ও দলীয় কর্মীরা দলীয় দফতর থেকে প্রধানমন্ত্রী বাসভবনের দিকে মিছিল করে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন। কংগ্রেস নেতা কর্মীদের আটক করে পুলিশ ও পরে তাঁদের ছেড়েদেওয়া হয়।
পথে নামার আগে আজ সকালে সাংবাদিক বৈঠক করেন রাহুল গান্ধী। শুরুতেই উপস্থিত সাংবাদিকদের রাহুল বলেন, ‘‘কেমন আছেন স্বৈরতান্ত্রিক শাসনে? মজা পাচ্ছেন?’’ এর পরেই তিনি বলেন, বিজেপির আট বছরের শাসনে গণতন্ত্রের মৃত্যু প্রত্যক্ষ করছে দেশ এবং যাঁরা এর প্রতিবাদ করে মুখ খোলার চেষ্টা করছেন, তাঁদের মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে আক্রমণ করা হচ্ছে। জেলে পোরা বা শাস্তিদেওয়া হচ্ছে।
রাজনৈতিক সূত্রের মতে, মুদ্রাস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধির কারণে ক্ষুব্ধ আমজনতা। রয়েছে বেকারত্বের সমস্যা। অর্থনীতির অবস্থা তথৈবচ। এই আবহে যে ভাবে কংগ্রেস নেতৃত্ব উজ্জীবিত হয়ে মাঠে নেমেছিলেন, তাতে অস্বস্তিতে পড়ে যায় বিজেপি শিবির। অনেকেই মনে করছেন, ওই আন্দোলনকে লঘু করতে তাই ধর্মীয় চেহারা দেওয়ার কৌশল নেন বিজেপি নেতৃত্ব। আজ সন্ধ্যায় শাহ বলেন, ‘‘দু’বছর আগে আজকের দিনে রাম জন্মভূমির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছিল। তাই সংখ্যালঘু সমাজকে তুষ্ট করতেই আজ কালো পোশাক পরে পথে নামে কংগ্রেস।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আদালতে মামলা যখন চলছে, তখন ফি দিন আন্দোলন করতে পথে নামার অর্থ কী! তা ছাড়া আজ ইডি কাউকে তদন্তের জন্য ডাকেনি। কোনও তল্লাশি চালানো হয়নি। তা সত্ত্বেও কংগ্রেস হঠাৎ আজ আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নেয়। এর একটাই কারণ— রাম জন্মভূমি। এর থেকেই বোঝা যায় কংগ্রেস কী ভাবে সংখ্যালঘু তোষণ চালিয়ে যেতে চায়।’’ পরে একই কথা বলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। যার জবাবে রমেশ বলেন, ‘‘আন্দোলন যে সফল হয়েছে, তা কিছু অসুস্থ মানসিকতার লোকের অর্থহীন বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট।’’
সম্প্রতি ন্যাশনাল হেরাল্ড দুর্নীতি মামলায় একাধিকবার রাহুল ও সনিয়া গান্ধীকে তদন্তের জন্য ডেকেছে ইডি। শাসক শিবির গান্ধী পরিবারকে তদন্তের নামে কেন হেনস্থার চেষ্টা করছে, তার ব্যাখ্যায় রাহুল বলেন, ‘‘আমাদের মতো দেশে কোটি-কোটি লোক রয়েছেন যাঁরা গণতন্ত্র, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য বছরের পর বছর লড়াই করছেন। আর ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই গান্ধী পরিবারের দায়িত্ব।’’ বিজেপির সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশীর পাল্টা কটাক্ষ, ‘‘সকলেই জানে রাহুল গান্ধী মহাত্মা গান্ধীর বংশধর নন। রাহুল একজন ‘নকলি’ গান্ধী। তাঁর আদর্শ নকল।’’
আজ শাসক শিবিরের বিরুদ্ধে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ করে বর্তমান শাসনকে হিটলারের জমানার সঙ্গে তুলনা করেন রাহুল। তাঁর কথায়, ‘‘নিজের সময়ে হিটলারও বিভিন্ন নির্বাচনে অনায়াসে জিততেন। কারণ, নির্বাচনে জিততে গেলে যে প্রতিষ্ঠানগুলির সমর্থন প্রয়োজন হয়, সেগুলি সব হিটলারের দখলে ছিল।’’ রাহুলের দাবি, তাঁকে গোটা ব্যবস্থার দায়িত্ব দেওয়া হলে তিনিও দেখিয়ে দিতে পারবেন, কী ভাবে নির্বাচন জিততে হয়। পাল্টা জবাবে বিজেপি সাংসদ রবিশঙ্কর প্রসাদের মন্তব্য, ‘‘মানুষ কংগ্রেসকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ফলে নির্বাচনে হারছে কংগ্রেস। এই সহজ সত্যটি বুঝতে পারলেই অহেতুক গণতন্ত্রকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতেন না রাহুল।’’ কংগ্রেস দলে আদৌ গণতন্ত্র রয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন রবিশঙ্কর। তাঁর কথায়, ‘‘কংগ্রেসে অনেক ভাল নেতা থাকলেও, গোটাটাই গান্ধী পরিবার নির্ভর। পরিবারের বাইরে এরা কিছু ভাবতেই পারে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy