গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
কংগ্রেসের সদস্যপদ ছেড়ে সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসরের কথা ঘোষণা করেছিলেন বছর তিনেক আগে। প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কন্যা শর্মিষ্ঠা এ বার নিশানা করলেন তাঁর ছেড়ে আসা রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে। উপলক্ষ, সদ্যপ্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের দিল্লিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের দাবি ঘিরে বিজেপি-কংগ্রেসের তরজা।
শর্মিষ্ঠা শুক্রবার রাতে সমাজমাধ্যমে একটি পোস্টে লিখেছেন, ‘‘আমার বাবা যখন মারা গেলেন কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি একটা শোকসভাও করেনি। এক প্রবীণ নেতা আমাকে যুক্তি দিয়েছিলেন, প্রয়াত প্রাক্তন ৪ জন রাষ্ট্রপতির ক্ষেত্রেও কোনও শোকসভা হয়নি। কিন্তু তা ছিল ডাহা মিথ্যা কথা। পরে বাবার ডায়েরিতে দেখেছিলাম প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি কেআর নারায়ণনের মৃত্যুর পরে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডেকে শোকপ্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। আর সেই শোকবার্তাটি আমার বাবাই লিখেছিলেন।’’
গত বছর একটি সাক্ষাৎকারে শর্মিষ্ঠা দাবি করেছিলেন, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর কিছু আচরণ প্রণবের মনঃপূত ছিল না। এ প্রসঙ্গে ২০১৩ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহনের সরকারের জারি করা অর্ডিন্যান্স ছিঁড়ে ফেলার জন্য প্রকাশ্যে রাহুলের মন্তব্যের উল্লেখ করেছিলেন তিনি। সে সময় প্রণব ছিলেন দেশের রাষ্ট্রপতি। ‘কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা’ বলে শর্মিষ্ঠা দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের দিকে ইঙ্গিত করেছেন বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে মনে করছেন।
প্রসঙ্গত, মনমোহনের প্রয়াণের পরে খড়্গে শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ফোন করেছিলেন। তার পরে চিঠি লিখে অনুরোধ করেছিলেন, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর শেষকৃত্য এমন জায়গায় হোক, যেখানে তাঁর স্মৃতিস্মারক তৈরি হবে। স্ত্রী গুরশরণ কৌর-সহ মনমোহনের পরিবারেরও তা-ই ইচ্ছে ছিল। এই অনুরোধ জানাতে কংগ্রেসের তরফে প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা এবং কেসি বেণুগোপাল প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে কথাও বলেন শুক্রবার। কিন্তু সেই অনুরোধ উপেক্ষা করে মোদী সরকার শনিবার বেলা পৌনে বারোটায় দিল্লির লালকেল্লার পিছনে নিগমবোধ ঘাট শ্মশানে মনমোহন সিংহের শেষকৃত্যের সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্তকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ আখ্যা দিয়েছে কংগ্রেস নেতৃত্ব। কংগ্রেসের দাবি, দিল্লিতে যমুনার তীরে রাজঘাটের আশপাশে কোনও জমিতে শেষকৃত্য হোক। যেখানে শক্তি স্থল, বীরভূমি, সদৈব অটল-এর মতো ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী, অটলবিহারী বাজপেয়ীর স্মৃতিস্মারক রয়েছে।
একই দাবি তুলছেন, প্রাক্তন এনডিএ শরিক শিরোমণি অকালি দলের নেতা সুখবীর বাদলও। তাঁর অভিযোগ, মোদী সরকার ইচ্ছাকৃত ভাবে দেশের একমাত্র শিখ প্রধানমন্ত্রীকে অসম্মান করতে চাইছে। বিজেপির পাল্টা যুক্তি, কেন ইউপিএ জমানায় প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিংহ রাওয়ের শেষকৃত্য দিল্লিতে হয়নি? কেন স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেনি কংগ্রেস? মোদীর জমানায় রাওয়ের স্মৃতিস্মারক নির্মাণ এবং মরণোত্তর ভারতরত্ন ঘোষণার কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন বিজেপি নেতারা। এ বার সেই বিতর্কে ঢুকে পড়লেন প্রণব-কন্যা শর্মিষ্ঠাও।
প্রসঙ্গত, প্রণবের পর মুখোপাধ্যায় পরিবারে কংগ্রেসের ধ্বজা ধরে রেখেছিলেন তাঁর ছেলে অভিজিৎ এবং মেয়ে শর্মিষ্ঠা। কিন্তু ২০২১ জুলাইয়ে তৃণমূলে যোগ দেন জঙ্গিপুরের প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ অভিজিৎ। চলতি বছরের জুন মাসে কংগ্রেস ফিরে এলেও তিনি আর সে ভাবে ‘সক্রিয়’ নন। অন্য দিকে, খ্যাতনামী কত্থকশিল্পী শর্মিষ্ঠা ২০১৪ সালের গোড়ায় সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন। ২০১৫-য় দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে গ্রেটার কৈলাস আসনে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আম আদমি পার্টি (আপ)-র সৌরভ ভরদ্বাজের কাছে হেরে যান। ২০১৯-এ তিনি কংগ্রেসের জাতীয় মুখপাত্র হন। ওই বছরই দিল্লির প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির জনসংযোগ বিষয়ক প্রধানের পদ থেকে ইস্তফা দেন শর্মিষ্ঠা। ২০২১-এর সেপ্টেম্বরে সক্রিয় রাজনীতি ছাড়ার কথা ঘোষণা করেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy