অনলাইনে বৈঠক সিপিএম পলিটব্যুরোর। ছবি: সংগৃহীত।
আগরতলায় মানিক সরকার। তিরুঅনন্তপুরমে পিনারাই বিজয়ন ও কোডিয়ারি বালকৃষ্ণন। হায়দরাবাদে বি ভি রাঘবুলু। কানপুরে সুভাষিণী আলি। কলকাতায় সূর্যকান্ত মিশ্র ও মহম্মদ সেলিম। এবং দিল্লিতে সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাট। নিজেদের শহরে থেকেই মঙ্গলবার এঁরা সবাই মিলিত হলেন সিপিএমের পলিটব্যুরো বৈঠকে। ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে। কমিউনিস্ট পার্টির অভ্যন্তরীণ ইতিহাসে যাকে ছোটখাটো বিপ্লবই বলা যায়! তবে তাত্ত্বিক নয়। প্রযুক্তিগত!
লকডাউনের বাজারে গোটা কর্পোরেট জগৎ এবং আরও নানা ক্ষেত্রের ভরসা এখন অনলাইন যোগাযোগ। কিন্তু সিপিএমের অনলাইন পলিটব্যুরোর তাৎপর্যই আলাদা! যুগের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে না পারার দায়ে বারে বারে কাঠগড়ায় উঠতে হয়েছে যাঁদের, তাঁরা ভিডিয়ো স্ক্রিনের সামনে বসে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক চালাচ্ছেন— এ কথা জানলে স্বয়ং কার্ল মার্ক্সও চমৎকৃত হতেন বৈকি! আরও উল্লেখ্য, এই ভিডিয়ো কনফারেন্সের জন্য যে অ্যাপের সাহায্য তাঁরা নিয়েছেন, তা চিনের তৈরি। আর চিনের সঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টির যোগের কথা কে না জানে!
প্রথমে পরিকল্পনাহীন লকডাউন, পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা, তার পরে আর্থিক প্যাকেজের নামে ‘ধোঁকা’। লকডাউনের সুযোগ নিয়ে শ্রম আইন থেকে বিদ্যুৎ আইন সংশোধন করে ফেলার কেন্দ্রীয় সরকারি প্রচেষ্টা। এ সবই আলোচনা হয়েছে পলিটব্যুরোয়। কেরলে বিজয়ন সরকারের চার বছর পূর্তিতে দলের অভ্যন্তরীণ রিপোর্টও এসেছে আলোচনায়। তবে আলোচ্য নিয়ে নয়, এ বার রাজনৈতিক শিবিরের চর্চার কেন্দ্রে আলোচনার পদ্ধতিটাই।
আরও পড়ুন: মে মাসে কাজে যোগ দিয়েছেন ২ কোটির বেশি মানুষ, আশা জাগাচ্ছে সমীক্ষা রিপোর্ট
রাজীব গাঁধীর প্রধানমন্ত্রিত্বের জমানায় কম্পিউটার-বিরোধী আন্দোলনের সামনের সারিতে ছিল কমিউনিস্ট পার্টি। যদিও সিপিএম নেতারা বলেন, তাঁদের আন্দোলন কম্পিউটার প্রচলনের বিরুদ্ধে আসলে ছিল না। ছিল কর্মী সঙ্কোচনের প্রতিবাদ। সে বিতর্ক পিছনে ফেলে ভলগা, ইয়াং সিকিয়াঙের মতো গঙ্গা দিয়েও অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। এই লকডাউনেই আলিমুদ্দিনে সাপ্তাহিক রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকের রেওয়াজ বদলে আলোচনা হয়ে যাচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে। সিপিএমের রাজ্য কমিটির সাম্প্রতিক বৈঠকও হয়েছে হোয়াটসঅ্যাপে। বাংলায় দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের সম্পাদনায় তাত্ত্বিক মুখপাত্র ‘মার্ক্সবাদী পথ’-এর বিশেষ ‘প্যান্ডেমিক’ সংখ্যা সোমবারই প্রকাশিত হয়েছে অনলাইন সংস্করণে। সে-ও নতুন ইতিহাস।
ইয়েচুরি, সূর্যবাবুরা বহু দিনই অবশ্য প্রযুক্তি সড়গড়। তবে দলের ব্যবহারিক আঙ্গিকে প্রযুক্তিকে এনে ফেলতে পরিশ্রম লেগেছে বটেই! ইয়েচুরির কথায়, ‘‘সনিয়া গাঁধীর ডাকে বিরোধী দলের বৈঠকও হয়েছে অনলাইনে। এখন ভিন্ন পথ খোলা নেই।’’ মানিকবাবুর মতে, নতুন অনেক কিছু শিখতে শিখতেই অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হচ্ছে। তবে একই সঙ্গে তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, দেশের বিরাট অংশের মানুষের কাছে এখনও অনলাইন যোগাযোগের সুযোগ নেই। তাই ‘ডিজিটাল ডিভাইড’-এর বিরুদ্ধে তাঁদের লড়াই চলছে, চলবে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy