দিল্লির রকাবগঞ্জ সাহিব গুরুদ্বারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি পিটিআই।
একটানা ২৫ দিন ধরে চলা কৃষক আন্দোলনের পুরোভাগে রয়েছে পঞ্জাবের কৃষক সমাজ। এই অবস্থায় প্রথমে নীরব থেকে এবং বিরোধীদের নিশানা করার পরে গত কয়েক দিন ধরে কখনও নিজের রাজ্য গুজরাতে, কখনও বিজেপি শাসিত আর এক রাজ্য মধ্যপ্রদেশে গিয়ে নতুন কৃষি আইন নিয়ে কথা বলছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিষয়টি নিয়ে লাগাতার প্রচারও করছিল বিজেপি এবং সরকারপক্ষ। কিন্তু তাতেও আন্দোলনের ঝাঁঝ কমেনি। এই অবস্থায় রবিবার আচমকাই দিল্লির রকাবগঞ্জ সাহিব গুরুদ্বারে পৌঁছে গেলেন মোদী। শিখ গুরু তেগ বাহাদুরের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে যান প্রধানমন্ত্রী। গুরুদ্বার ঘুরেও দেখেন। পরে টুইট করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রকাবগঞ্জ সাহিব গুরুদ্বারে সকালে প্রার্থনা করলাম। এখানে গুরু তেগ বাহাদুরের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছিল। নিজেকে ধন্য মনে করছি’। প্রধানমন্ত্রী যখন গুরুদ্বারে, তখন কিছুটা দূরেই কৃষক আন্দোলনে এ যাবৎ মৃত্যু হওয়া সতীর্থদের সম্মান জানাতে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিবস পালন করছিলেন আন্দোলনকারীরা। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ছ’বছরের মাথায় তাঁর ওই গুরুদ্বারে যাওয়াকে ‘লোক দেখানো’ বলে মন্তব্য করে সরব হয়েছেন বিরোধী কংগ্রেস ও আপ নেতৃত্ব। এ দিকে সমাধান সূত্র খুঁজতে মরিয়া কেন্দ্র আগামিকাল বা মঙ্গলবার আন্দোলকারীদের সঙ্গে ফের বৈঠকে বসতে চলেছেন বলে এ দিন জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রাতে কৃষি মন্ত্রকের যুগ্ম-সচিব বিবেক আগরওয়াল কৃষক সংগঠনগুলির নেতাদের চিঠি লিখে জানিয়েছেন, সরকার আইনে একাধিক রদবদলের কথা বলার পরেও কোন কোন বিষয়ে কৃষকদের আশঙ্কা রয়েছে, তা ব্যাখ্যা করে কবে তাঁরা বৈঠকে বসতে পারবেন, তা সরকারকে জানান। যদিও কৃষকদের বক্তব্য, সংশোধন নয়, তিনটি কৃষি আইনকেই প্রত্যাহার করতে হবে সরকারকে।
বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে গত ২৫ দিন ধরে দিল্লির সীমানা অবরোধ করে বসে রয়েছেন চাষিরা। আইন বাতিলের দাবিতে চাপ বাড়াতে আগামিকাল থেকে সবক’টি ধর্নাস্থলে রিলে অনশন করার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন তাঁরা। এগারো জনের এক-একটি দল ওই রিলে অনশনে বসবেন। এই অবস্থায় বছর শেষের আগেই কৃষক আন্দোলনে ইতি টানতে মরিয়া সরকার। আজ অমিত শাহ জানান, জটিলতা যাতে কাটে, তার জন্য সম্ভব হলে আগামিকাল, না হলে মঙ্গলবার ফের কৃষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চলেছেন কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর। ওই বৈঠকের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েও ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ন স্পষ্ট বলে দিয়েছে, বিতর্কিত কৃষি আইনগুলি প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন তুলে নেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমাধানসূত্র না পাওয়া গেলে মাসের শেষ রবিবারে প্রধানমন্ত্রীর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান বয়কট করার পাশাপাশি অনুষ্ঠানের গোটা সময় জুড়ে থালা বাজিয়ে প্রতিবাদ জানানোর কথাও ঘোষণা করেছেন আন্দোলনকারীরা। আজ সাংবাদিক সম্মেলনে ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের নেতা জগজিৎ সিংহ ডালেওয়ালা বলেন, “প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ছ’বছরের মাথায় মোদীর রাকাবগঞ্জ গুরুদ্বার সফরে তাঁর সুমতি ফিরবে। আশা করছি, এর পর উনি কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নেবেন। তা না হলে আগামী ২৭ ডিসেম্বর, রবিবার প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পুরো সময়টা দেশের মানুষকে নিজের ঘরে বসে থালা বাজানোর অনুরোধ রাখছি। যাতে তাঁর কন্ঠস্বর চাপা পড়ে যায়।’’
আন্দোলনের তীব্রতা বাড়াতে কাল থেকে হরিয়ানার সমস্ত টোল প্লাজা অবরোধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। ভারতীয় কিসান ইউনিয়নের মুখপাত্র রাকেশ টিকায়েতের অভিযোগ, “আন্দোলনকারীদের দিল্লিতে পৌঁছতে বাধা দিচ্ছে হরিয়ানা প্রশাসন। সেই কারণে খট্টর প্রশাসনের বিরুদ্ধেও আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কৃষকেরা।’’ একই সঙ্গে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে জেডিইউ, এলজেপি-র মতো এনডিএ-র অন্য শরিকদের কাছে ওই আইনের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে। রাকেশ টিকায়েত বলেন, এনডিএ-র শরিক দলগুলি আমাদের পাশে না দাঁড়ালে সংশ্লিষ্ট রাজ্যে এনডিএ-র সেই শরিক দলের বিরুদ্ধেও আন্দোলনে নামবেন কৃষকেরা।
বেসরকারি মতে এখনও পর্যন্ত কৃষক আন্দোলনে মারা গিয়েছে তিরিশের উপরে ব্যক্তি। গত কাল রাতে পঞ্জাবের ভাটিণ্ডার এক আন্দোলনকারী আত্মহত্যা করেন। আজ শিখ গুরু তেগ বাহাদুরের মৃত্যুবার্ষিকীতে মৃত সতীর্থদের সম্মান জানাতে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিবস পালন করেন আন্দোলনকারীরা। বিকালে ধর্নাস্থলে মোমবাতি মিছিলও করেন কৃষকেরা। শ্রদ্ধাঞ্জলি দিবসের অনুষ্ঠানটি ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক মাধ্যমে লাইভ প্রচার করেন কৃষক নেতারা। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, অনুষ্ঠানের পরেই ওই নেতাদের সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্ট ‘ব্লক’ হয়ে গিয়েছে। এ নিয়ে আঙুল উঠেছে প্রশাসনের দিকেই। সরকারের এমন মনোভাবের ফলে আগামী বৈঠকে সমাধান সূত্র বেরোনোর সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই মনে করছেন আন্দোলনকারীরা। ফেসবুক কর্তৃপক্ষের দিকেও আঙুল তুলছেন নেটিজেনরা।
আজ রাকাবগঞ্জ সাহিব গুরুদ্বারে পৌঁছে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি উৎসাহীদের সঙ্গে মোবাইলে নিজস্বী তুলতেও আপত্তি করেননি প্রধানমন্ত্রী। কৃষক আন্দোলনের আবহে ওই সফর নেহাতই ‘লোক দেখানো’ বলে কটাক্ষ করে আপ নেতা সৌরভ ভরদ্বাজ বলেন, “বোঝাই যাচ্ছে পঞ্জাবের মানুষকে বার্তা দিতে আজ গুরুদ্বারে গেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু আন্দোলনকারীরা ঠাণ্ডায় মারা যাচ্ছেন। কেন তাদের সম্পর্কে একটি কথাও নেই প্রধানমন্ত্রীর মুখে? আন্দোলনের ঠেলায় এখন চাপে পড়ে গুরুদ্বার সফরের মাধ্যমে তিনি কি বোঝাতে চাইছেন, তা সকলের কাছেই স্পষ্ট।’’ কংগ্রেস নেতা রণদীপ সুরজেওয়ালার কথায়, “এখনও পর্যন্ত ৩৩ জন কৃষক মারা গিয়েছেন। আজ আন্দোলনকারীদের শ্রদ্ধাঞ্জলি দিবস ছিল। তা-ও প্রধানমন্ত্রী নীরব কেন? কেন মৃত কৃষক ও কৃষকদের পরিবারগুলির উদ্দেশে একটি কথাও বললেন না তিনি?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy