Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

২৬/১১ ধাঁচে হামলা, বলছে মার্কিন সংস্থাও

হামলা হওয়া ইস্তক দুনিয়ার সংবাদমাধ্যম কথাটা বলে চলেছে। একই অনুমান বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থার। কী, না, গত শুক্রবার, ১৩/১১-র প্যারিসের সঙ্গে ২৬/১১-র মুম্বইয়ের প্রচুর মিল। ছবি ও কবিতার শহরে জঙ্গিরা হামলা চালিয়েছে একেবারে ভারতের শিল্প-রাজধানীতে সাত বছর আগের হামলার ধাঁচেই।

সুরবেক বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৫ ০৪:২৯
Share: Save:

হামলা হওয়া ইস্তক দুনিয়ার সংবাদমাধ্যম কথাটা বলে চলেছে। একই অনুমান বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থার। কী, না, গত শুক্রবার, ১৩/১১-র প্যারিসের সঙ্গে ২৬/১১-র মুম্বইয়ের প্রচুর মিল। ছবি ও কবিতার শহরে জঙ্গিরা হামলা চালিয়েছে একেবারে ভারতের শিল্প-রাজধানীতে সাত বছর আগের হামলার ধাঁচেই।

এ বার একই কথা তাদের রিপোর্টে জানিয়ে দিল মার্কিন মুলুকের সংস্থা ‘ন্যাশনাল কনসর্টিয়াম ফর দ্য স্টাডি অব টেররিজম অ্যান্ড রেসপন্সেস টু টেররিজম’ বা ‘স্টার্ট’। ‘স্টার্ট’ সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে তথ্যভিত্তিক পাঠ, পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণ বিশেষজ্ঞ হিসেবে স্বীকৃত। আমেরিকার হোমল্যান্ড সিকিওরিটি দফতরের সহায়তাপ্রাপ্ত ও মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন এই বিশেষজ্ঞ সংস্থার পর্যালোচনা রিপোর্টে মুম্বই ও প্যারিস হামলার সাদৃশ্যের কথা আলোচিত হয়েছে। প্যারিসে জঙ্গি হানার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার ‘স্টার্ট’ তথ্য ও পরিসংখ্যানে ঠাসা ছ’পাতার ‘ব্যাকগ্রাউন্ড রিপোর্ট’ তৈরি করেছে।

প্যারিস ও মুম্বই— দু’টি শহরের হামলার মধ্যে মিল কোথায়?

‘স্টার্ট’-এর রিপোর্ট বলছে, দু’টি ক্ষেত্রেই হামলাকারীদের মধ্যে নিবিড় সমন্বয় ছিল, যাকে বলা হয় ‘কোঅর্ডিনেটেড অ্যাটাক’ বা ‘কমপ্লেক্স অ্যাটাক’। দু’টি ক্ষেত্রেই জঙ্গিরা আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক— দু’রকম অস্ত্র ব্যবহার করেই হামলা চালিয়েছে।

‘স্টার্ট’-এর অধিকর্তা তথা সন্ত্রাসবাদ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক গ্যারি লাফ্রি মঙ্গলবার আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘২৬/১১-র সঙ্গে আমরা ১৩/১১-র প্রচুর মিল পেয়েছি।’’

গ্যারির মতে, মুম্বই ও প্যারিসে একসঙ্গে কিছু জায়গায় হামলা চালানো হয়েছে। দু’জায়গাতেই জঙ্গিদের লক্ষ্য ছিল, যত বেশি সম্ভব প্রাণহানি ঘটানো। দু’টিই ছিল মূলত আত্মঘাতী জঙ্গি হানা। ‘স্টার্ট’-এর ওই পর্যালোচনা রিপোর্ট জানাচ্ছে, ১৯৭০ থেকে ২০১৪— এই ৪৫ বছরে বিভিন্ন দেশে যত জঙ্গি হামলা হয়েছে, তার মধ্যে বিস্ফোরক ও আগ্নেয়াস্ত্র একসঙ্গে ব্যবহৃত হয়েছে চার শতাংশেরও কম ঘটনায়। যে কারণে মুম্বই, প্যারিস এক বন্ধনীতে।

অমিলও পেয়েছেন গবেষকরা। রিপোর্টটি মূলত তৈরি করেছেন মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এরিন মিলার। আনন্দবাজারকে এরিন জানালেন, মুম্বইয়ের ক্ষেত্রে ২৬/১১-র রাতে হামলা শুরু হয়ে চলেছিল ২৯/১১-র সকাল পর্যন্ত। কিন্তু প্যারিসে ঘণ্টা চারেকের বেশি হামলা স্থায়ী হয়নি।

এরিনের মতে, ‘‘মুম্বইয়ে জঙ্গিদের লক্ষ্য ছিল, দীর্ঘ সময় পর্যন্ত আক্রমণ টেনে নিয়ে যাওয়া। প্যারিসে জঙ্গিরা সব কিছু তাড়াতাড়ি শেষ করতে চেয়েছিল বলেই মনে হচ্ছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘মনে হচ্ছে, দু’জায়গায় হামলাকারীদের কৌশল এ ক্ষেত্রে ভিন্ন ছিল। তবে এমনও হতে পারে, জঙ্গিদের মোকাবিলায় নামা নিরাপত্তারক্ষীরা প্যারিসে তাদের দ্রুত নিকেশ করে দিতে পেরেছিলেন। মুম্বইয়ে যেটা কোনও কারণে হয়নি।’’ প্যারিসে হামলাকারীদের শরীরে বোমা বাঁধা ছিল। মুম্বইয়ে আজমল কসাবদের সেটা ছিল না। প্যারিসে এক জঙ্গি নিজেকে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেয়। মুম্বইয়ে এমন ঘটেনি।

এরিনের ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, আইএস জঙ্গিরা একই সময়ে একই শহরের বিভিন্ন তল্লাটে একে অপরের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে হামলা চালাতে অভ্যস্ত হলেও লস্কর-ই-তইবা জঙ্গিরা এমন হামলা ঘন ঘন চালিয়েছে বলে জানা যায়নি। অথচ ভারতে ২৬/১১-র হামলা লস্কর জঙ্গিদেরই কাজ।

তবে প্যারিসের হামলাকে ‘লোন উলফ অ্যাটাক’ আখ্যা দিতে নারাজ ‘স্টার্ট’। এরিনের বিশ্লেষণ, ‘লোন উলফ’ হানায় এক বা একাধিক লোক কেবল আইএসের মতো সংগঠনের মতাদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে হামলা চালাবে। সংগঠনের নেতৃত্বের কোনও হাত থাকবে না। প্যারিসের ক্ষেত্রে আইএস হামলার দায় নিয়েছে। আইএস নেতৃত্ব তাই সরাসরি যুক্ত বলেই মনে হচ্ছে।

‘স্টার্ট’-এর ‘ব্যাকগ্রাউন্ড রিপোর্ট’ অনুযায়ী: ৪৫ বছরে ফ্রান্সের বিভিন্ন রেস্তোরাঁ তথা বিনোদনকেন্দ্র জঙ্গিদের লক্ষ্য হয়েছে ১১৮ বার। এ ক্ষেত্রে ফ্রান্সের স্থান দুনিয়ায় পঞ্চম। ইরাক, ব্রিটেন, স্পেন ও কলম্বিয়ার পরেই।

অন্য বিষয়গুলি:

Al Qaeda plans attack Europe 26 11
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy