বন্দে ভারত ট্রেন। —ফাইল চিত্র।
শুক্রবার ওড়িশার ট্রেন দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগেই দিল্লিতে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের নেতৃত্বে রেলের ‘চিন্তন শিবির’ বসেছিল। রেলের সমস্ত জ়োনের তরফে জানানোর কথা ছিল, কোথায় সুরক্ষা ব্যবস্থার কী হাল। কিন্তু একটিমাত্র জ়োন ছাড়া আর কাউকে সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি। তার বদলে নতুন বন্দে ভারত ট্রেন চালু করাও রেলের আয় বাড়ানো নিয়ে আলোচনা হয়।
শনিবারই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘটা করে মুম্বই-গোয়া বন্দে ভারত ট্রেন চালু করবেন বলে কথা ছিল। রেল দুর্ঘটনার কারণে সেই অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ও তাঁর মন্ত্রক কি এখন রেলের সুরক্ষার থেকে প্রধানমন্ত্রীর নিত্যনতুন বন্দে ভারত ট্রেন উদ্বোধন নিয়ে বেশি ব্যস্ত?
কংগ্রেস-সহ বিরোধী শিবির রেলমন্ত্রীর ইস্তফা দাবি করেছে। সেই সঙ্গে কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে, খোদ প্রধানমন্ত্রী ‘স্বাধীন ভারতের ভয়াবহতম’ রেল দুর্ঘটনার দায় নেবেন না কেন? প্রচার, চমকে মন দিতে গিয়ে রেলমন্ত্রী রেলের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার দিকটি অবহেলা করেছেন। মোদী কেন রেলমন্ত্রীর থেকে ইস্তফা চাইবেন না?
কংগ্রেসের অভিযোগ, রেলের চিন্তন শিবির থেকে রেলমন্ত্রী আগেই বেরিয়ে গিয়েছিলেন। কারণ, প্রধানমন্ত্রীর বন্দে ভারত চালুর আয়োজনের জন্য তাঁর গোয়া যাওয়ার ছিল। তাদের বক্তব্য, এখানেই সরকারের অগ্রাধিকার স্পষ্ট। মোদীর ১০-১২টা চকচকে ট্রেন দেখানোর জন্য গোটা কাঠামো যে ভেঙে পড়ছে, সে দিকে কারও নজর নেই। প্রধানমন্ত্রী খানকতক বন্দে ভারত চালু করে দেখাতে চাইছেন, সব ট্রেনই যেন ওই ভাবে চলছে। কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরা বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বড় স্ক্রিনের সামনে বসে মন্ত্রী, অফিসারদের সঙ্গে বালাসোরের রেল দুর্ঘটনা নিয়ে বৈঠক করছেন। সেই ছবি তোলার জন্য চিত্রগ্রাহক ভিতরে ছিলেন। তারপর দুর্ঘটনাস্থলে দেখা হেল, মোদী পোশাক বদলে ফেলেছেন। সবাই খুব চিন্তিত, প্রধানমন্ত্রী রোদে-গরমে ঘটনাস্থলে ঘুরছেন। তাতে কী হল? যখন সবুজ পতাকা নিয়ে ট্রেন উদ্বোধন করতে যান, তখন রোদ-গরম চোখে পড়ে না?” খেরার কটাক্ষ. ট্রেনের সংঘর্ষ এড়ানোর কবচ ব্যবস্থা ওড়িশার ওই রেললাইনে বসানো হয়নি। প্রধানমন্ত্রী নিজের চারদিকে কবচ তৈরি করে ফেলেছেন। তিনি ওই কবচ কাজে লাগিয়ে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্ন, সিএজি রিপোর্ট থেকে গা বাঁচিয়ে চলেন। সেই কবচ দেশের সীমান্ত রক্ষা করতে পারে না। অক্সিজেনের অভাবে মৃতদের বাঁচাতে পারে না। রেলযাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে পারে না। শুধু প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি রক্ষা করতে পারে।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী টুইটে লিখেছেন, ‘এত মৃত্যুর পরেও কোনও জবাবদিহি নেই। মোদী সরকার এই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার দায় থেকে পালাতে পারে না। প্রধানমন্ত্রীর উচিত এখনই রেলমন্ত্রীকে ইস্তফা দিতে বলা।’ অতীতে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী, মাধবরাও সিন্ধিয়া, নীতীশ কুমাররা রেলমন্ত্রী হিসেবে দুর্ঘটনার নৈতিক দায় নিয়ে ইস্তফা দায় নিয়েছিলেন। তা স্মরণ করিয়ে কংগ্রেস অভিযোগ তুলেছে, ইস্তফার অর্থ হল নৈতিক দায় নেওয়া। মোদী সরকারের নৈতিকতাও নেই। দায়বদ্ধতাও নেই।
বিজেপি আজ পাল্টা যুক্তি দিয়েছে, নীতীশ কুমার, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, লালুপ্রসাদের আমলেও ট্রেনের সংঘর্ষ, বেলাইন, মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বিজেপি নেতা অমিত মালবীয়ের যুক্তি, গত সাড়ে সাত দশকে রেল মন্ত্রকের দায়িত্বে সবথেকে যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি রয়েছেন। ইউপিএ আমলেও দুর্ঘটনার কমতি ছিল না। কিন্তুমালবীয় যে পরিসংখ্যান দিয়েছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে, নীতীশ, মমতা, লালুপ্রসাদের জমানার মধ্যে নীতীশের আমলে ট্রেনের সংঘর্ষ, বেলাইন ও মৃত্যুর সংখ্যা সবথেকে বেশি। কংগ্রেসের প্রশ্ন, বিজেপি কি ভুলে গিয়েছে যে নীতীশ অটলবিহারী বাজপেয়ীর সরকারের রেলমন্ত্রী ছিলেন? রেল দুর্ঘটনার পরে লালবাহাদুর শাস্ত্রী, মাধবরাও সিন্ধিয়ার ইস্তফা চেয়ে কি তখনকার বিরোধীরা ভুল করেছিলেন?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy