জোট সরকারের কর্মসূচির ‘সাফল্য’ তুলে ধরতে প্রচারে অন্যতম শরিক দল। কিন্তু তাতে মুখ্যমন্ত্রীর নামের কোনও উল্লেখই নেই। শুক্রবার এমনই অভিনব ঘটনার সাক্ষী হল মহারাষ্ট্র। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পের নতুন মরাঠা সংস্করণ ‘লাডকি বহিন যোজনা’র প্রচারে চলতি সপ্তাহ থেকে সে রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পওয়ারের নেতৃত্বাধীন এনসিপি ধারাবাহিক কর্মসূচি শুরু করেছে। কিন্তু সেখানে মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের নামের কোনও উল্লেখই নেই!
পাল্টা ‘হামলা’ হয়েছে শিন্ডেসেনার তরফেও। মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ নেতা তথা মহারাষ্ট্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রী তানাজি সাওয়ন্ত শুক্রবার বলেন, ‘‘এনসিপির মতো দলের সঙ্গে জোট রয়েছে ভাবতে গিয়েই আমার বমি পায়।’’ লোকসভা ভোটের পরে টানাপড়েন শুরু হয়েছিল মহারাষ্ট্রের শাসকজোট ‘মহাদ্যুতি’র অন্দরে। বিশেষত শিন্ডেসেনা এবং বিজেপির সঙ্গে অজিতের নেতৃত্বাধীন এনসিপির সংঘাত প্রকাশ্যে চলে এসেছে। এমনকি, পরিস্থিতির সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) নামও।
গত ২৬ অক্টোবর সিন্ধুদুর্গ জেলার মালভানে রাজকোট দুর্গে ভেঙে পড়ে ছত্রপতি শিবাজীর ৩৫ ফুটের একটি পূর্ণাবয়ব মূর্তি। গত ৪ ডিসেম্বর নৌসেনা দিবসে এই মূর্তির আবরণ উন্মোচন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এক বছর পার হওয়ার আগেই কী ভাবে মূর্তি ভেঙে পড়ল, সেই প্রশ্ন তোলে মহারাষ্ট্রের বিরোধী দলগুলি। এর পর অজিত ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রকাশ্যে জানান, এই ঘটনার নেপথ্যে সরকারের গাফিলতি রয়েছে। ঘটনাচক্রে, এই ঘটনার এক সপ্তাহ আগে, গত ১৮ অগস্ট পুণের জুন্নার এলাকায় অজিতের ‘জন সম্মান যাত্রা’র সময় কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন বিজেপির নেতা-কর্মীরা।
অক্টোবর মাসে মহারাষ্ট্রে বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা। এই আবহে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের ধারণা, শাসকজোটে ভাঙন অনিবার্য হয়ে উঠেছে। শাসকজোটের অন্দরে এমন টানাপড়েনের সূত্রপাত অবশ্য লোকসভা ভোটের পরেই। মহারাষ্ট্রে এনডিএ-র সার্বিক খারাপ ফলের জন্য অজিতের এনসিপি-র সঙ্গে বিজেপি নেতৃত্বের হাত মেলানোকে দায়ী করে জুলাই মাসে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) মুখপত্রে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল। তার পরেই সংঘাত প্রকাশ্যে চলে আসে।
শিবাজীর মূর্তি ভেঙে পড়ার ঘটনায় বিজেপি নেতা তথা মহারাষ্ট্রের পূর্তমন্ত্রী রবীন্দ্র চহ্বাণের দিকে অভিযোগের আঙুল উঠেছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে অজিতের দলের পাশাপাশি রবীন্দ্রের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের দাবি তুলেছেন শিন্ডেসেনার প্রথম সারির নেতা রামদাস কদমও! রামদাস সম্প্রতি প্রকাশ্যে রবীন্দ্রের ইস্তফা দাবি করেছেন। তার জেরে প্রতিক্রিয়া জানান বিজেপি নেতা তথা ‘মহাদ্যুতি’ সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস। এমন ‘অনভিপ্রেত মন্তব্য’ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী শিন্ডের সক্রিয়তা দাবি করেন তিনি।
মহারাষ্ট্র বিধানসভায় মোট বিধায়কের সংখ্যা ২৮৮। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জাদুসংখ্যা ১৪৫। বিজেপির ১০৩, অজিতের নেতৃত্বাধীন এনসিপির ৪০ এবং শিন্ডেসেনার ৩৮ জন বিধায়ক রয়েছেন। পাশাপাশি, বহুজন বিকাশ আঘাড়ীর ৩, প্রহার জনশক্তি পার্টির ২ এবং মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা, রাষ্ট্রীয় সমাজ পক্ষ, জেএসএসের এক জন করে বিধায়ক এবং ১৪ নির্দলের সমর্থনও রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের সরকারের পাশে। এই পরিস্থিতিতে শিন্ডে বা অজিত, কোনও এক পক্ষকে পাশে পেলেই বিধানসভা ভোট পর্যন্ত সরকার চালাতে পারবে বিজেপি। বিধানসভা ভোটের আগে কি তেমনই কোনও নতুন সমীকরণ দেখা যাবে মহারাষ্ট্রের শাসকজোটে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy