দল ছাড়ার পরেই বুধবার ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) নেতৃত্বকে ‘দিশাহীন’ বলেছিলেন তিনি। শুক্রবার আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চম্পই সোরেন বললেন, ‘‘ঝাড়খণ্ডে জনজাতি সত্তার পক্ষে বড় বিপদের কারণ হল কংগ্রেস। বিজেপি পারে ঝাড়খণ্ডকে সেই বিপদ থেকে রক্ষা করতে।’’
কী সেই বিপদ? চম্পইয়ের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের নেতৃত্বাধীন জেএমএম-কংগ্রেস জোট সরকারের জমানায় বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠছে ঝাড়খণ্ড। জনজাতিরা ক্রমশ নিজভূমে পরবাসী হয়ে পড়ছেন। চম্পইকে বিজেপিতে স্বাগত জানাতে রাঁচীর দফতরে শুক্রবার হাজির ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান এবং অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। ছিলেন সে রাজ্যের বিজেপি সভাপতি তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বাবুলাল মরান্ডীও।
আরও পড়ুন:
বিজেপিতে যোগ দিয়ে চম্পই বলেন, ‘‘আমি কখনও স্বপ্নেও ভাবিনি যে আমি জেএমএম ছাড়ব। ওই দল আমার কাছে একটি পরিবারের মতো ছিল। কিন্তু সেই দলের কাছে অপমানিত হয়ে মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলাম। তখনই জেএমএম ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম।’’ ঝাড়খণ্ডের পাশাপাশি দিল্লি, কলকাতা-সহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর উপর নজরদারি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন চম্পই।
সিংভূম তথা ঝাড়খণ্ডের রাজনীতিতে ‘টাইগার’ নামেই পরিচিতি রয়েছে চম্পইয়ের। ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার দীর্ঘ দিনের নেতা ছিলেন তিনি। হেমন্তের পিতা তথা জেএমএমের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা শিবুকে নিজের ‘রাজনৈতিক গুরু’ বলে মানতেন। এমনকি, ২৮ অগস্ট হেমন্ত মন্ত্রিসভা, বিধায়ক পদ এবং জেএমএম সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরে ‘গুরুজি’ শিবুকে চিঠি লিখে কারণ জানিয়েছিলেন চম্পই। চলতি বছরেই ঝাড়খণ্ডে বিধানসভা ভোট। তার আগে চম্পইয়ের যোগদান পদ্ম-শিবিরকে শক্তিশালী করবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ।
আরও পড়ুন:
গত ৩১ জানুয়ারি ঝাড়খণ্ডে জমি দুর্নীতি সংক্রান্ত বেআইনি আর্থিক লেনদেনের মামলায় হেমন্তকে গ্রেফতার করেছিল কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। গ্রেফতারির আগে মুখ্যমন্ত্রিত্বে ইস্তফা দিয়েছিলেন তিনি। হেমন্তের অনুপস্থিতিতে চম্পইকে মুখ্যমন্ত্রী মনোনীত করেন জেএমএম নেতৃত্ব। পাঁচ মাস রাঁচীর বিরসা মুন্ডা জেলে বন্দি থাকার পরে গত ২৮ জুন ঝাড়খণ্ড হাই কোর্টের নির্দেশে জামিনে হেমন্ত মুক্তি পেয়েছিলেন। তার পরেই চম্পইকে সরিয়ে জেএমএমের পরিষদীয় নেতা নির্বাচিত হন তিনি। ফিরে আসেন মুখ্যমন্ত্রী পদে। সেই সময় চম্পইয়ের উপর চাপ তৈরি করে মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিতে বাধ্য করানো হয়েছিল বলে তাঁর অনুগামীদের অভিযোগ। ৪ জুলাই মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার পরে নয়া মন্ত্রিসভায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চম্পইকে ঠাঁই দিয়েছিলেন হেমন্ত। কিন্তু ‘নাকের বদলে নরুণ’ প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।