দেশের উন্নয়নের চার প্রধান চালিকাশক্তির অন্যতম কৃষি। শনিবার বাজেট পেশের সময় এমনটাই বলেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। অথচ সেই কৃষি ও কৃষক-কল্যাণ ক্ষেত্রের মোট বরাদ্দ গত অর্থবর্ষের তুলনায় বাড়ল মাত্র চার শতাংশ! ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে কৃষিক্ষেত্রের বরাদ্দ ১.৩২ লক্ষ কোটি থেকে বেড়ে হল ১.৩৭ লক্ষ কোটি!
আরও পড়ুন:
নতুন বাজেটে কৃষি খাতে একগুচ্ছ প্রকল্প ও পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছেন নির্মলা। তিনি জানিয়েছেন, দেশের দেড় কোটি কৃষককে সুবিধা দেওয়ার জন্য আনা হচ্ছে ‘প্রধানমন্ত্রী ধন ধান্য কৃষি যোজনা’। কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা এবং শস্যের বৈচিত্র বৃদ্ধি করাই এই প্রকল্পের লক্ষ্য। পাশাপাশি, গ্রামীণ এলাকায় অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতেও সাহায্য করবে এই যোজনা। এই প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের ভর্তুকি, আর্থিক সহায়তা এবং স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেবে সরকার, যার ফলে কৃষকেরা আধুনিক কৃষিপদ্ধতির সাহায্য নেওয়া, ফলন বৃদ্ধি করা এবং উৎপন্ন ফসলের সামগ্রিক গুণমান বৃদ্ধিতে উৎসাহ পাবেন। নতুন এই যোজনায় প্রাথমিক ভাবে ফলনে পিছিয়ে থাকা ১০০টি জেলাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে, যার ফলে উপকৃত হবেন প্রায় ১.৭ কোটি কৃষক। ক্রমে গ্রামীণ যুব প্রজন্ম, মহিলা এবং ভূমিহীন কৃষকদেরও এই প্রকল্পের আওতায় আনা হবে।
এ ছাড়া, শাকসব্জি, ফল এবং উচ্চ ফলনশীল বীজ চাষিদের জন্যও আসছে সুখবর। শাকসব্জি ও ফলের জন্য নয়া বাজেটে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। নির্মলা জানিয়েছেন, ভোজ্য তেল এবং ডালজাতীয় শস্যেও আত্মনির্ভর হওয়ার চেষ্টা করবে ভারত। মূলত তুর, অড়হর এবং মুসুর ডাল উৎপাদনের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হবে। ডালজাতীয় শস্যের জন্য মোট ১০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এ ছাড়া, ভোজ্য তেলে স্বনির্ভরতার জন্য ছয় বছর-ব্যাপী ‘মিশন’ শুরুর কথা বলা হয়েছে বাজেটে। লাভজনক মাখনা চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলতে বিহারে একটি আলাদা বোর্ড গঠনের কথাও ঘোষণা করেছেন নির্মলা। এ জন্য বরাদ্দ হয়েছে ১০০ কোটি। কিসান ক্রেডিট কার্ডে ঋণের পরিমাণও তিন লক্ষ থেকে বৃদ্ধি করে পাঁচ লক্ষ করা হয়েছে নতুন বাজেটে। পাশাপাশি, তুলো চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি করতেও পাঁচ বছরের পরিকল্পনা করছে সরকার। ভারতের টেক্সটাইল সেক্টরকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে শুরু হচ্ছে ‘তুলো উৎপাদনশীলতা মিশন’।
আরও পড়ুন:
২০২৫-’২৬ আর্থিক বছরের বাজেট পেশের শুরুতেই আগামী পাঁচ বছরে ভারতীয় অর্থনীতিকে বিশ্বের দরবারে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেন নির্মলা। মধ্যবিত্তদের পাশাপাশি কৃষক, নারী এবং ক্ষুদ্রশিল্পকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যে বেশ কিছু প্রকল্প ও আর্থিক বরাদ্দের কথাও ঘোষণা করেন তিনি। বিদ্যুৎ, কৃষি এবং ক্ষুদ্রশিল্প-সহ ছ’টি ক্ষেত্রে নানা সংস্কারের কথা ঘোষণা করেছেন নির্মলা। পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, মধ্যবিত্তদের উপরেই ভরসা রাখছে সরকার। ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে কোনও কর দিতে হবে না। আমজনতার জন্য এটিই এ বারের বাজেটের বিশেষ উপহার!