সাংবাদিক বৈঠকে মোহন ভাগবত। শনিবার। রয়টার্স
জমি হয়তো ২.৭৭ একর। কিন্তু আজ অযোধ্যার ওই বিতর্কিত জমি সংক্রান্ত শীর্ষ আদালতের রায়ে প্রশ্ন উঠল, ধর্মনিরপেক্ষ দেশ থেকে কি ক্রমশ হিন্দু রাষ্ট্রের পথে হাঁটছে ভারত? বিশেষজ্ঞ শিবির বলছে, শুধুমাত্র সুপ্রিম কোর্টের রায় দেখেই এমন কথা হয়তো বলা যাবে না। কিন্তু বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে ছবি উঠে আসছে তাতে এটা বলাই চলে যে সংখ্যাগুরুর দাপট ক্রমশ বাড়ছে সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিসরে।
আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং প্রশাসনিক বিভাগের জনসংযোগ আধিকারিক শাফে কিদোয়াই-এর কথায়, ‘‘আগে অপছন্দ হলে মুখের উপরে কথা বলা যেত। তা তিনি যে সম্প্রদায়েরই হোন না কেন। কিন্তু এখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কথা বলতে ভয় পাচ্ছে। সাধারণ তর্ক করতেও ভয় পাচ্ছে।’’ আর এই ভয় থেকেই মুসলিম সমাজও নিজেদের বাঁচাতে পরিচয় সত্ত্বার রাজনীতি (আইডেন্টিটি পলিটিক্স) করতে শুরু করেছে বলেই মনে করেন তিনি।
শুধুমাত্র সাধারণ নাগরিক পরিসরেই নয়। সংখ্যালঘুদের ত্রাস সামরিক ক্যান্টনমেন্ট এলাকাতেও বাড়ছে বলে দাবি করলেন আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্র। বাবা সেনাবাহিনীতে কাজ করার সুবাদে জম্মুর ক্যান্টনমেন্ট-এ বড় হয়েছেন সলমন বশির। জানাচ্ছেন, ‘‘গুরু নানকের জন্মদিনে আমরাও উৎসব করতাম সমান তালে। তবলা শিখতে যেতাম গুরুদ্বারে। মন্দিরে যেতাম হালুয়া প্রসাদ খেতে। অন্য ধর্মের সামরিক পরিবারের সন্তানেরাও আসত আমাদের বাড়িতে ইদের বিরিয়ানি খেতে। এখন আর এ সব হয় না ওখানে।’’ এক ‘অজানা ভয়’-এর গল্প শোনালেন অযোধ্যা-ফৈজ়াবাদের সংখ্যালঘুরা। গত মাসে ইকবালের একটি উর্দু দেশাত্মবোধক কবিতা পড়ানোর অপরাধে সেখানকার সরকারি প্রাইমারি স্কুলের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হেডমাস্টারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে বজরং দল। মাদ্রাসার শিক্ষা সরকারি স্কুলে ‘পাচার’ করার অভিযোগে স্কুল প্রশাসনকে দিয়ে ওই হেড মাস্টারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। স্থানীয়েরা জানিয়েছেন, এসব নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। অভিযোগ, সংখ্যাগুরুর দাপট জেলা এবং শহরের সর্বস্তরে।
আজ রায় ঘোষণার সময়ে আদালত চত্বর ঘেরা ছিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভার সাধু সন্ত মহন্তে। স্বামী চক্রবাণী মহারাজ বাজিয়েছেন শাঁখ। রায় আসার পর সন্তেরা আদালত চত্বরেই জয়ধ্বনিতে ফেটে পড়েছেন।
সমাজবিজ্ঞানী আশিস নন্দীর কথায়, ‘‘এখন প্রধানমন্ত্রীর হাতে যা ক্ষমতা তার ধারে কাছে কেউ নেই। সেটা আরএসএস-ও জানে। এটাও ঘটনা যে দেশের সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ই মোদীর শক্তির উৎস অর্থাৎ তাঁর ভোট ব্যাঙ্ক। ফলে সমাজের এই অংশের মন জয় করে চলাটাই বিধেয় মোদীর কাছে। এই কার্যকারণ থেকেই দেশকে হিন্দু রাষ্ট্রের অভিমুখে চালনা করার প্রশ্নটা উঠে আসছে।’’ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক অশোক মজুমদার অবশ্য জানাচ্ছেন, ‘‘বিশ্বাস করি না যে গোটা দেশ হিন্দু রাষ্ট্রের পথে হাঁটছে। নীচের তলায় হিন্দুত্বের আস্ফালন থাকলেও তা সমাজের সর্ব স্তরে পৌঁছয়নি।’’
রাজনৈতিক শিবিরের মতে, বিষয়টি নিয়ে আরএসএস তথা সঙ্ঘ পরিবার যথেষ্ট সচেতন। আজ মুসলিম সম্প্রদায়ের উদ্দেশে বার্তা প্রসঙ্গে সঙ্ঘ প্রধান মোহন ভাগবত বলেছেন, ‘‘পৃথক ভাবে কোনও সম্প্রদায়কে বার্তা দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। একসঙ্গে দেশ নির্মাণ করতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy