Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
India-China

হিন্দি-চিনি ভাই ভাইয়ে মিশেছিল আমের রস

দক্ষিণ চিনের সামান্য কিছু অঞ্চলকে বাদ দিলে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত আম কী জিনিস, জানতেন না চৈনিকরা। বিষয়টি আঁচ করে ‘আমোদিত’ বন্ধুত্ব তৈরিতে অগ্রণী হয়েছিলেন নেহরু গত শতকের পঞ্চাশের দশকে।

An image of Pandit Jawaharlal Nehru

আমের কূটনৈতিক দৌত্যের দিকটি প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। ফাইল ছবি।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০২৩ ০৮:২৩
Share: Save:

আমের কূটনৈতিক দৌত্যের দিকটি প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। কিন্তু আমের দৌত্য যে সর্বদা লক্ষ্যভেদ করেছে এমন নয়। আমের স্বাদ সময়বিশেষে খুবই তিক্ত! সম্প্রতি বিদেশ মন্ত্রক চিন সংক্রান্ত একটি গোপন ফাইলকে জনসমক্ষে আনার পর এমন তথ্যই উঠে আসছে।

দক্ষিণ চিনের সামান্য কিছু অঞ্চলকে বাদ দিলে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত আম কী জিনিস, জানতেন না চৈনিকরা। বিষয়টি আঁচ করে ‘আমোদিত’ বন্ধুত্ব তৈরিতে অগ্রণী হয়েছিলেন নেহরু গত শতকের পঞ্চাশের দশকে। রিপোর্ট বলছে, সেই প্রথম চিন কোনও বাইরের রাষ্ট্রের কাছ থেকে আম উপহার পায়। শুধু ফলই নয়, ধারাবাহিক ভাবে বস্তা বস্তা আম গাছের চারাও পাঠানো হয়েছিল বেজিংকে। কিন্তু শেষ যে বছর (১৯৬১ সাল) তা ভারত থেকে বন্ধুত্বের বার্তা নিয়ে যায়, তার পরের বছরই ভারত-চিনের যুদ্ধ সেই আমের স্বাদ প্রায় চিরকালের মতো তেতো করে দেয়! সম্পর্কের দশা এমনই হয় যে, পরের আম-উপহার পাঠাতে প্রায় পঞ্চাশ বছর অপেক্ষা করতে হয় ভারতকে। ২০০৩-এ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর চিন সফরের পর দু’দেশের মধ্যে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার অধীনে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হয়। এর পরের বছর ভারত থেকে চিনে আম যায় দীর্ঘ ব্যবধানের পর। কিন্তু সেই দৌত্য স্থায়ী বা নিয়মিত থাকেনি। আপাতত যা পরিস্থিতি তাতে আম কেন, সার্বিক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককেই ‘অস্বাভাবিক’ বলে বারবার মন্তব্য করছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন পূর্ব লাদাখে থাবা গেড়ে বসে রয়েছে চিনা সেনা। পরিস্থিতি সংঘাতপূর্ণ। আমের মিষ্টত্ব সেখানে বেমানান।

কিন্তু এমন ছিল না দেশের স্বাধীনতার দশ বছর পরেও। বিদেশ মন্ত্রকের প্রকাশিত নথি বলছে, ১৯৫৫ সাল থেকে ভারত আমগাছের চারা পাঠাতে শুরু করে চিনকে। ১৯৫৪ সালের নভেম্বরে চিনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই নয়াদিল্লি সফরে এসেছিলেন। তিনি উপহার হিসাবে এনেছিলেন এক জোড়া বলগা হরিণ, ১০০টি গোল্ডফিশ, বিভিন্ন বিরল পাখি। ফলে প্রতি-উপহার হিসাবে ভারত তখন সিদ্ধান্ত নেয়, আম এবং গাছের চারা পাঠানোর। শুধুমাত্র দায়সারা ভাবে বিমানে চড়িয়ে পাঠিয়ে দেওয়াই নয়। নেহরু স্থির করেন, একটি সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদল নিয়ে যাবে এই আম্র-উপহার। কলকাতা থেকে মালদহের আম নিয়ে ১৯৫৫ সালের জুন মাসে সেই দল চিনের উদ্দেশে রওনা দেয় বলে লেখা হয়েছে ওই নথিতে। দশেরি, চৌসা, ল্যাংড়া, আলফান্সো গাছের চারা পাঠানো হয়েছিল এয়ার ইন্ডিয়ার উড়ানে। হংকং হয়ে সেই আম-চারা পৌঁছয় বেজিং।

১৯৬২-র যুদ্ধের পর ভারত-চিন তিক্ততার মাঝেই আম নিয়ে চিনের জঠরে প্রবেশ করে পাকিস্তান। ১৯৬৮ সালে পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী মিঞা আর্শাদ হুসেন চিনে পাঠিয়েছিলেন অঢেল আম। চেয়ারম্যান মাও জে দং অভিভূত হয়েছিলেন সেই আমে। শোনা যায়, তিনি গোটা দেশে প্রচারের অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করেছিলেন সেই পাকিস্তানি আম। হয়তোচিন পাকিস্তানের মধ্যে বহুল প্রচারিত ‘সব আবহাওয়ার বন্ধুত্বের’ সূত্রপাত হয়েছিল এই গ্রীষ্মকালীনফলটিকে ধরেই!

অন্য বিষয়গুলি:

India-China Pt. Jawaharlal Nehru Mango
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy