চন্দ্রশেখর রাও, এমকে স্ট্যালিন, পিনারাই বিজয়ন, জগনমোহন রেড্ডি এবং মল্লিকার্জুন খড়্গে— দক্ষিণের সব রাজ্যেই চালকের আসনে বিজেপি বিরোধী মুখ। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে কর্নাটক বিধানসভা নির্বাচন ছিল বিজেপি এবং কংগ্রেস দুই দলের কাছেই ‘অ্যাসিড-টেস্ট’। কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির কাছে পরীক্ষা ছিল কর্নাটক জয়ের মাধ্যমে লোকসভা ভোটের আগে দাক্ষিণাত্যে ক্ষমতা বিস্তার করা। কংগ্রেসের কাছে লড়াইটা ছিল অস্তিত্ব রক্ষার। শেষ হাসি হাসল দেশের সবচেয়ে পুরনো রাজনৈতিক দল। কর্নাটকে হেরে যাওয়ায় বস্তুত গোটা দক্ষিণ ভারত এখন ‘বিজেপিমুক্ত’। অন্য দিকে, রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রার পর, এই প্রথম দেশের কোনও বড় রাজ্যে ভোট হল। সেই ভোটে জয়ের পর নিচুতলার কর্মীরা যে উজ্জীবিত হবেন, তা বলাই বাহুল্য।
দক্ষিণ ভারতের পাঁচ রাজ্য— অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক, কেরল, তামিলনাড়ু এবং তেলঙ্গানার মধ্যে শুধুমাত্র কর্নাটকে ক্ষমতায় ছিল বিজেপি। আর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পুদুচেরিতে সরকারে রয়েছে বিজেপি সমর্থিত এনআর কংগ্রেস। তাই কর্নাটক ছিল নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। ভোটপ্রচারে বার বার কর্নাটকে সভা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। হিন্দুত্বের প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে হিন্দু অধ্যুষিত কর্নাটকে মোদী-কণ্ঠে বার বার ধ্বনিত হয়েছে রাষ্ট্রপ্রেম এবং উন্নয়নের কথা। কিন্তু দক্ষিণ ভারতের এই রাজ্যে কাজ করল না ‘মোদী-ম্যাজিক’। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কর্নাটকের ২২৪ বিধানসভা আসনের মধ্যে কংগ্রেস এগিয়ে ১৩৪টিতে এবং বিজেপি মাত্র ৬৫টিতে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, কর্নাটকে সাম্প্রতিক অতীতে বড় কোনও সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা নেই। তবে কর্নাটকের রাজনীতিতে হিন্দুদের দুটি প্রধান সম্প্রদায়, লিঙ্গায়েত এবং ভোক্কালিগাদের দ্বন্দ্ব বরাবরই প্রকট। সে দিকে নজর ছিল বিজেপির। লিঙ্গায়েতদের কিছুটা সমর্থন বিজেপির পক্ষে ছিলই। কিন্তু ভোক্কালিগাদের মধ্যে বিজেপির প্রভাব বেশ কম। ভোটের প্রচারে হিন্দুত্বের তাস না খেললেও হিন্দুত্ববাদীদের মন পেতে চেষ্টার কসুর করেনি বিজেপি। তার বড় উদাহরণ হল গত বছরের হিজাব-বিরোধী আন্দোলন। তাতে পদক্ষেপ করতে হয়েছে আদালতকে। এবং শেষ পর্যন্ত কর্নাটকের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব পরা নিষিদ্ধ হয়। শুধু তাই নয়, কর্নাটকে হালাল মাংস বিক্রি নিষিদ্ধের দাবিতে ২০২২ সালে শোরগোল শুরু হয়। শ্রীরাম সেনা, বজরং দল, হিন্দু জাগরণ বেদিকের মতো হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের দাবির পর কর্নাটক বিধানসভায় বিল আনারও প্রস্তুতি নেয় বিজেপি সরকার।
অন্য দিকে, কর্নাটকে কংগ্রেসের জয়ের নেপথ্যে ‘নতুন’ সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের ভূমিকাও বড় হয়ে উঠেছে। একের পর এক নির্বাচন হেরে চলা শতাব্দীপ্রাচীন দলের সভাপতি হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে দুই রাজ্যের কুর্সিতে বসল কংগ্রেস। প্রথমে হিমাচল প্রদেশ এবং এ বার কর্নাটক। লাগাতার নিজের রাজ্যে কর্নাটকের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ডিকে শিবকুমারকে নিয়ে পর পর সভা করেছেন কংগ্রেস সভাপতি। বস্তুত, তিনি সভাপতি হওয়া ইস্তক পরাজয় এসেছে শুধু মোদী-শাহের রাজ্য গুজরাতে। তবে লক্ষ্য যে ‘বড়’ তা বুঝিয়ে দেন খড়্গে। ভোটের ফলাফল স্পষ্ট হতেই কর্নাটকবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আরও অনেক দূর যেতে হবে। ভাল কাজ করলে মানুষ পাশে থাকবেই।’’
‘ভারত জোড়ো’ যাত্রার একটা দীর্ঘ সময় শুধু কর্নাটকেই পাড়ি দিয়েছেন রাহুল। সব মিলিয়ে লোকসভা ভোটের বছর খানেক আগে দক্ষিণের রাজ্যে এই জয় যে কংগ্রেসকে নতুন করে ‘অক্সিজেন’ জোগাল, এ কথা বলাই যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy