নিহত সিমি জঙ্গিরা। ছবি: সংগৃহীত।
ভোপালের সেন্ট্রাল জেল ভেঙে পালানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ৮ সিমি জঙ্গিকে গুলি করে মারল পুলিশ। সোমবার সকালে ভোপাল থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে ইটখেড়ি গ্রামে পুলিশ জঙ্গিদের সন্ধান পাওয়ার পরই অভিযান চালায়। পুলিশ জানিয়েছে, তাদের উপস্থিতি টের পেয়েই পালাতে শুরু করে জঙ্গিরা। পালনোর সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলিও চালায়। পুলিশের পাল্টা গুলিতে নিহত হয় আট জঙ্গি।
কী ভাবে খবর পেল পুলিশ?
সূত্রের খবর, জেল পালানোর পরই জঙ্গিরা ইটখেড়ি গ্রামে এক ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সেই সময় কয়েক জন গ্রামবাসী মুখ ঢাকা এই অজ্ঞাতপরিচয়দের দেখে পুলিশকে খবর দেন। খবর পেয়েই পুলিশের একটি বিশেষ দল সেখানে পৌঁছয়। কিন্তু তার আগেই ওই বাড়ি থেকে চম্পট দেয় জঙ্গিরা। ধাওয়া করে পুলিশ ওই জঙ্গিদের খতম করে। যে ব্যক্তির বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল জঙ্গিরা তার খোঁজ চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ভোপালের ডিআইজি যোগেশ চৌধুরী বলেন, “জেল থেকে জঙ্গিরা পালানোর পর এসটিএফ, সিটিজি এবং রাজ্য পুলিশের একটি দল জঙ্গিদের খোঁজে চিরুণি তল্লাশি শুরু করে। জঙ্গিরা আচারপুরা নামে একটি জায়গায় পাহাড়ে লুকিয়ে ছিল। তাদের কাছে অস্ত্র ছিল। পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতেই পাল্টা জবাবে নিহত হয় জঙ্গিরা।”
রবিবার রাত তখন ২টো। চার দিকে দিওয়ালি উপলক্ষে তখনও মানুষ উত্সবে মাতোয়ারা। শব্দবাজি ফাটছিল দেদার। সেই সুযোগকেই কাজে লাগিয়ে এক কারারক্ষীকে খুন করে, অন্য এক কারারক্ষীকে বেঁধে জেলের পাঁচিল টপকে পালায় জঙ্গিরা। জঙ্গিরা তাদের সঙ্গে থাকা ধারালো স্টেলের প্লেট ও কাচের টুকরো দিয়ে হেড কনস্টেবল রমা শঙ্করের গলার নলি কেটে দেয়। জেলের পাঁচিল টপকানোর জন্য জঙ্গিরা বিছানার চাদর ব্যবহার করেছিল বলে জানা গিয়েছে।
জঙ্গিদের জেল ভেঙে পালানোর খবর পাওয়া মাত্রই সেন্ট্রাল জেলে হাজির হন রাজ্য পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকরা। এই ঘটনার জন্য জেল সুপার-সহ চার কারা আধিকারিককে সাসপেন্ড করা হয়। সেই সঙ্গে পুলিশকে নির্দেশ দেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জঙ্গিদের গ্রেফতার করতে হবে। পুরো রাজ্যজুড়ে চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করা হয়। দিল্লিতেও জারি করা হয় চূড়ান্ত সতর্কতা। রাজ্য সরকারের কাছে গোটা ঘটনার রিপোর্ট চেয়ে পাঠান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ।
আট জঙ্গির নাম ও ছবি প্রকাশ করে মধ্যপ্রদেশ পুলিশ। ওই আট জঙ্গিরা হল— মুজিব শেখ, আব্দুল মজিদ, মহম্মদ আকিল, খালিদ, জাকির হুসেন সাদিক, মেহবুব গুড্ডু, আমজাদ খান এবং মহম্মদ শালিক। সেই সঙ্গে এদের খুঁজে দিতে পারলে ৫ লক্ষ টাকা পুরস্কারের ঘোষণাও করা হয়। ওই ৮ জঙ্গির মধ্যে জাকির, গুড্ডু এবং আমজাদ ২০১৩-য় খান্ডোয়া জেল ভেঙে পালিয়েছিল। সেই সময় পালানোর সময় বিছানার চাদর ব্যবহার করেছিল। ঠিক একই কায়দায় এ বারও পালিয়েছিল তারা। এ বার ওই তিন জন তাদের সঙ্গে আরও পাঁচ সিমি জঙ্গিকে সঙ্গে নেয়। এদের বেশির ভাগই জঙ্গি কার্যকলাপ এবং ডাকাতি-সহ নানা অপরাধে জড়িত ছিল।
তবে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি পুলিশকে। ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অপারেশনে বড়সড় সাফল্য পায় মধ্যপ্রদেশ পুলিশ।
মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চহ্বাণ পুলিশের এই সাফল্যের প্রশংসা করেন। পাশাপাশি গ্রামবাসীদেরও প্রশংসা করেন যাঁরা জঙ্গিদের সম্পর্কে পুলিশকে খবর দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “আমাদের পুলিশ খুব দ্রুত কাজ করেছে। তাদের ধন্যবাদ। কিন্তু জঙ্গিদের জেল পালানো খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ঘটনা।” সেই সঙ্গে তিনি আরও জানান, এই ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হবে পুলিশের প্রাক্ন ডিজিপি-কে। যে বা যাঁরা এই ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হবেন তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করবে সরকার। এই ঘটনার জন্য কেন্দ্রের কাছে এনআইএ-র তদন্তের আর্জি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
আরও খবর...
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy