মোদী বললেন,‘‘আমাদের উদ্দেশ্য সৎ ছিল। কিন্তু কৃষি আইনের সুফলের কথা কিছু কৃষককে আমরা বোঝাতে পারিনি।’’ ছবি: পিটিআই।
২০২০ সালে তিনটি কৃষি আইন প্রণয়ন করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকার।
তিনটি কৃষি আইন যথাক্রমে— ১) কৃষকদের উৎপাদিত কৃষিপণ্যে ব্যবসা ও বাণিজ্য সংক্রান্ত আইন ২) অত্যাবশ্যক পণ্য আইন এবং ৩) কৃষি পণ্যের মূল্য নির্ধারণ এবং কৃষি পরিষেবা সংক্রান্ত কৃষক চুক্তি আইন। এই তিন কৃষি আইন প্রণয়ণের পরই সেগুলির বিরোধিতা করে তীব্র প্রতিবাদ জানান ভারতের কৃষকেরা।
কৃষকদের যুক্তি ছিল, প্রধানমন্ত্রী যদিও বলছেন এই কৃষি আইন কৃষকদের হাত শক্ত করবে, কিন্তু আদতে দেশের কৃষকদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেবে এই আইন। বিশেষ করে প্রান্তিক এবং ছোট কৃষকেরা মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে আরও বেশি করে শোষিত হবেন। কৃষকদের ওই দাবি সমর্থন করেন বিরোধীরাও। শুরু হয় আন্দোলন।
কী ভাবে তৈরি হল কৃষি আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, কী ভাবে আন্দোলন থেকে এল সাফল্য, দেখে নিন এক নজরে—
৫ জুন ২০২০: তিনটি নতুন কৃষি আইনের প্রস্তাব আনল কেন্দ্র। তিনটি বিল, যা কেন্দ্রের আয়ত্তাধীন কৃষি ক্ষেত্রকে বেসরকারি আওতায় টেনে আনবে।
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০: পার্লামেন্টে অধ্যাদেশ আনা হল।
১৭ সেপ্টেম্বর: লোকসভায় পাস হল অধ্যাদেশ।
২০ সেপ্টেম্বর: রাজ্যসভায় ধ্বনি ভোটে পাস হয়ে গেল কৃষি বিল।
২৫ নভেম্বর, ২০২০: দেশ জুড়ে কৃষি আইন বিরোধী বিক্ষোভের মধ্যেই দিল্লি অভিযানের ডাক দিলেন পঞ্জাব ও হরিয়ানার কৃষকেরা। দিল্লি সীমান্তে করোনা অতিমারী সংক্রান্ত নিয়মের অজুহাতে তাঁদের আটকে দিল দিল্লি পুলিশ। হাল না ছাড়ায় কৃষকদের লক্ষ্য করে ছোড়া হল জলকামান, কাঁদানে গ্যাস।
২৮ নভেম্বর: কৃষকদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন কৃষকেরা। পরের দিনই ছিল প্রধানমন্ত্রীর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে মোদী বলেন, যাঁরা কৃষকদের উস্কানি দিচ্ছেন, তাঁরা কৃষকদের জন্য কিছু করেননি। তাঁর সরকারই কৃষকদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন করেছে।
৩ ডিসেম্বর, ২০২০: প্রথম মুখোমুখি বৈঠকে কৃষক এবং কেন্দ্র। দু’দিন পরই দ্বিতীয় বৈঠক। শেষ পর্যন্ত রফা-সূত্র পাওয়া গেল না।
৮ ডিসেম্বর: ভারত বন্ধের ডাক দিলেন কৃষকেরা।
৯ ডিসেম্বর: কৃষি আইন সংশোধনের প্রস্তাব ফেরালেন কৃষকেরা।
১১ ডিসেম্বর: কৃষি আইনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গেল ভারতের কিসান ইউনিয়ন।
৪ জানুয়ারি, ২০২১: সরকারের সঙ্গে কৃষকদের সপ্তম দফার কথাবার্তাও ব্যর্থ।
১২ জানুয়ারি: তিন কৃষি আইন বলবৎ করায় স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। গঠন করা হল চার সদস্যের কমিটিও। যা দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে সমাধানসূত্র বার করার চেষ্টা করবে।
২৬ জানুয়ারি: কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে কৃষকদের ট্র্যাক্টর মিছিলে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ। সিংঘু এবং গাজিপুর সীমান্ত থেকে পথ বদলে বিক্ষোভকারীরা দিল্লি শহরের কেন্দ্রে প্রবেশ করেন। লাল কেল্লার দেওয়াল বেয়ে উঠে বিক্ষোভকারীদের একাংশ জাতীয় পতাকা নামে নিশান সাহিবের পতাকা উত্তোলন করে। পুলিশ লাঠি, কাঁদানে গ্যাস চালায়। এক বিক্ষোভকারীর মৃত্যুও হয় সংঘর্ষে।
৪ ফেব্রুয়ারি: কৃষকদের সমর্থনে কথা বলার জন্য দেশের খ্যাতনামী ও বিদ্বজ্জনদের নিন্দা করল সরকার। বলা হল, তাঁরা সঠিক বিষয়ে না জেনেই দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ করছেন। আমেরিকার পপ তারকা রিহানা, পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের বোনঝি মীনা হ্যারিসেরও সমালোচনা করা হল।
১৪ ফেব্রুয়ারি: ২১ বছর বয়সি পরিবেশ কর্মী দিশা রবিকে গ্রেফতার করল দিল্লি পুলিশ। গ্রেটা থুনবার্গের কৃষক আন্দোলন সংক্রান্ত টুলকিট সম্পাদনার অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে।
২৭ মে: আন্দোলনের ৬ মাস পূর্ণ হতে কালাদিবস পালন করলেন কৃষকেরা। ভারতীয় কিসান ইউনিয়নের নেতা রাকেশ টিকায়েত জানিয়ে দিলেন, দরকার হলে ২০২৪ সালে মোদী সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত চলবে আন্দোলন।
জুলাই ২০২১: সংসদে বাদল অধিবেশন শুরু। পাশাপাশি ২০০ জন আন্দোলনকারী কৃষক সংসদ ভবনের বাইরে কিসান সংসদ বসালেন। সেখানেও শুরু হল সমান্তরাল বাদল অধিবেশন। সংসদ চত্বরে মহাত্মা গাঁধীর মূর্তির সামনে অবস্থান বিক্ষোভ করলেন বিরোধী দলের সদস্যরাও।
৭ অগস্ট: দেশের ১৪টি বিরোধী দলের নেতা দিল্লির যন্তর মন্তরে কৃষকদের কিসান সংসদে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। রাহুল গাঁধী জানালেন, তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে সমস্ত বিরোধী দল একজোট হয়ে কৃষকদের পূর্ণ সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
২৮ অগস্ট: কার্নালে কৃষকদের উপর লাঠি চালাল হরিয়ানা পুলিশ। রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বিজেপির একটি বৈঠক নিয়ে বাস্তারায় জাতীয় সড়কের উপর বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন কৃষক আন্দোলনকারীরা। পুলিশের লাঠির আঘাতে জখম হলেন বহু। প্রতিবাদে আইএএস কর্তা আয়ুষ সিংহের সাসপেনশন দাবি করলেন কৃষকেরা। ক্যামেরায় আয়ুষকে বলতে শোনা গিয়েছিল, একজন কৃষকও যেন ফাটা মথা ছাড়া ঘেরাটোপের বাইরে বার হতে না পারেন।
১১ সেপ্টেম্বর: কৃষক বনাম কার্নাল প্রশাসনের টানাপেড়েনে অবশেষে পিছু হঠল হরিয়ানা সরকার। ঘটনার তদন্তের আশ্বাস দেওয়া হল কৃষকদের।
৩ অক্টোবর: উত্তরপ্রদেশের লখিমপুর খেরিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্রের ছেলের দ্রুতগামী গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হল চার কৃষকের। কৃষকেরা ওই এলাকায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। ঘটনার পর অজয়ের ছেলে আশিস মিশ্রর গাড়ি পুড়িয়ে দেন কৃষকেরা।
১০ অক্টোবর: লখিমপুর কাণ্ডে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ছেলের ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ।
১৯ নভেম্বর: কৃষক আন্দোলনের চাপে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নতি স্বীকার। তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা করে মোদী বললেন,‘‘আমাদের উদ্দেশ্য সৎ ছিল। কিন্তু কৃষি আইনের সুফলের কথা কিছু কৃষককে আমরা বোঝাতে পারিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy