Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

৮৪ ঘণ্টা ধরে চলা উদ্ধারপর্বের মিলল সুজিতের পচাগলা দেহ

তামিলনাড়ুর তিরুচিরাপল্লির নাডুকাট্টুপাত্তিতে এই ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শুক্রবার বিকেলে খেলতে খেলতে নলকূপের জন্য খোঁড়া পরিত্যক্ত গর্তটিতে পড়ে গিয়েছিল বছর তিনেকের সুজিত উইলসন।

ফুলে ঢাকা সুজিতের কবর। মঙ্গলবার। পিটিআই

ফুলে ঢাকা সুজিতের কবর। মঙ্গলবার। পিটিআই

সংবাদ সংস্থা 
তিরুচিরাপল্লি শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:১২
Share: Save:

কুরুক্ষেত্রের প্রিন্স ফিরলেও ফিরল না সুজিত। চার দিন পরিত্যক্ত গর্তে আটকে থাকার পরে, আজ সকালেই উদ্ধার হল সুজিতের পচাগলা দেহ।

তামিলনাড়ুর তিরুচিরাপল্লির নাডুকাট্টুপাত্তিতে এই ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শুক্রবার বিকেলে খেলতে খেলতে নলকূপের জন্য খোঁড়া পরিত্যক্ত গর্তটিতে পড়ে গিয়েছিল বছর তিনেকের সুজিত উইলসন। প্রায় ৮৪ ঘণ্টা ধরে চলা ‘উদ্ধারপর্বে’ সুজিতের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রার্থনা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী, ডিএমকে নেতা এমকে স্ট্যালিন, রজনীকান্ত, কমল হাসন-সহ অনেকেই। কিন্তু শেষরক্ষা হল না।

প্রশাসনিক এক কর্তা জানিয়েছেন, সোমবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ পচা গন্ধ পান উদ্ধারকারীরা। চিকিৎসকেরা জানান, সুজিত মারা গিয়েছে। সমান্তরাল গর্ত খুঁড়ে সুজিতকে উদ্ধারের যে শেষ চেষ্টা চলছিল, তা থামিয়ে দেওয়া হয়। এর পরে হুক ও দড়ি দিয়ে তুলে আনা হয় শিশুটির দেহ। আজ সকালে স্থানীয় একটি কবরস্থানে সমাধিস্থ করা হয় সুজিতকে।

সুজিতের মৃত্যুতে মঙ্গলবার দিনভর সরকারি ব্যর্থতার কথাই উঠে এসেছে। বিরোধী নেতা স্ট্যালিন রাজ্য সরকারের ঢিলেমিকেই এর জন্য দায়ী করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী পলানীস্বামী অবশ্য বলেছেন, সুজিতকে বাঁচাতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে সরকার। তা হলে শিশুটিকে কেন বাঁচানো গেল না? কেন দুর্ঘটনার প্রায় ৯ ঘণ্টা পরে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে (এনডিআরএফ) ডাকা হল? প্রশ্ন উঠছে, এই ধরনের ঘটনা তামিলনাড়ুতে প্রথম নয়। গত ১৫ বছরে মুখ-খোলা গর্তে পড়ে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১০টি শিশুর। এত দিনেও কেন সুষ্ঠু উদ্ধার পদ্ধতি নেয়নি রাজ্য? অভিযোগ, উদ্ধারকাজের প্রথম দিকে, যখন প্রত্যেকটা মুহূর্ত মূল্যবান, তখন একের পর এক পদ্ধতি প্রয়োগ করে ব্যর্থ হয়েছেন উদ্ধারকারীরা।

শুক্রবার প্রথমে গর্তের ২৬ ফুট গভীরে আটকে ছিল শিশুটি। তখন দড়ির ফাঁসে সুজিতের হাত আটকে তাকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন উদ্ধারকারীরা। কিন্তু শিশুর হাত ফস্কে গিয়ে আরও ৭০ ফুট গভীরে তলিয়ে যায় সে। শনিবার ওএনজিসি, রাজ্য ও কেন্দ্রের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী-সহ একাধিক সংস্থার আধিকারিকদের পরামর্শমতো ঠিক হয়, মূল গর্তের পাশে সমান্তরাল একটি গর্ত খোঁড়া হবে। তার পর ছোট্ট সুড়ঙ্গ কেটে মূল গর্তে পৌঁছে উদ্ধার করা হবে সুজিতকে। পরিকল্পনা মতো রবিবার গর্ত খোঁড়ার কাজ শুরু হয়। তত ক্ষণে পেরিয়ে গিয়েছে প্রায় দু’দিন। এখানেই শেষ নয়। অত্যাধুনিক খনন যন্ত্র আনা হলেও পাথুরে জমিতে তার গতি বাধা পেয়েছে বারবার। অভিযোগ, ওই এলাকার মাটির চরিত্র সরকারি আধিকারিকদের জানার কথা। তা হলে সিদ্ধান্ত নিতে এত দেরি হল কেন?

সোমবার পর্যন্ত প্রশাসনের কর্তারা বলেছিলেন, সুজিত সাড়া না দিলেও বেঁচে আছে। কিন্তু মঙ্গলবার দেহ উদ্ধারের পরে প্রশ্ন উঠেছে, সুজিতের মৃত্যু নিশ্চয় আগেই হয়েছিল। ইউনিসেফের এক সদস্য বলেছেন, ‘‘দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে, আমরা চাঁদ ছুঁতে চন্দ্রযান বানিয়েছি, কিন্তু মাটি থেকে মাত্র কয়েক ফুট তলায় পড়ে থাকা প্রাণ উদ্ধারে ব্যর্থ।’’

সুজিতের মৃত্যুতে দায়ের হওয়া একটি মামলার শুনানিতে মঙ্গলবার রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে মাদ্রাজ হাইকোর্ট। আদালতের পর্যবেক্ষণ, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা থাকা সত্ত্বেও রাজ্য জুড়ে এই ধরনের মুখখোলা বিপজ্জনক গর্তের সংখ্যা বেড়েছে। ২১ নভেম্বরের মধ্যে রাজ্যকে এ নিয়ে রিপোর্ট জমা করতে নির্দেশ দিয়েছে কোর্ট।

অন্য দিকে, সুজিতের উদ্ধারকাজ দেখতে গিয়ে নিজেদের সন্তানকে হারালেন তুতিকোরিনের এক দম্পতি। কাল রাতে মা-বাবার চোখ যখন টিভিতে, তখন তাঁদের অলক্ষ্যে শৌচাগারে চলে যায় বছর তিনেকের রেবতী। মায়ের যখন মেয়ের কথা খেয়াল হয়, তত ক্ষণে শৌচাগারের বাথটবে ডুবে মৃত্যু হয়েছে একরত্তির।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy