Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

৭ ঘণ্টাতেই জেলভাঙা ৮ সিমি জঙ্গি নিকেশে রহস্য

গভীর রাতে ‘হাই সিকিউরিটি’ সেন্ট্রাল জেলের কনস্টেবলকে খতম করে পালাল ওরা আট জন। সাত ঘণ্টা পরে, শহরতলি এলাকায় তাদের একসঙ্গে ‘সশস্ত্র’ অবস্থায় পেয়ে খতম করল পুলিশ। ‘সশস্ত্র’ বলতে আগ্নেয়াস্ত্র কি না, স্পষ্ট নয়। রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বয়ান অনুযায়ী, জঙ্গিদের হাতে ছিল ধারালো চামচ!

অভিযান শেষ। মালিখেড়ায় নিহতদের দেহের পাশে জওয়ানরা। সোমবার পিটিআইয়ের ছবি।

অভিযান শেষ। মালিখেড়ায় নিহতদের দেহের পাশে জওয়ানরা। সোমবার পিটিআইয়ের ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৬ ০৪:১১
Share: Save:

গভীর রাতে ‘হাই সিকিউরিটি’ সেন্ট্রাল জেলের কনস্টেবলকে খতম করে পালাল ওরা আট জন। সাত ঘণ্টা পরে, শহরতলি এলাকায় তাদের একসঙ্গে ‘সশস্ত্র’ অবস্থায় পেয়ে খতম করল পুলিশ। ‘সশস্ত্র’ বলতে আগ্নেয়াস্ত্র কি না, স্পষ্ট নয়। রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বয়ান অনুযায়ী, জঙ্গিদের হাতে ছিল ধারালো চামচ!

ভোপালের সেন্ট্রাল জেল ভেঙে পলাতক আট সন্দেহভাজন সিমি জঙ্গিকে খতম অভিযানের এই ঘটনা নিয়ে সোমবার দিনভর অসংখ্য প্রশ্ন উঠেছে, দানা বেঁধেছে বিতর্ক। সংবাদমাধ্যমের হাতে আসা ভিডিও ফুটেজ এবং বিরোধী দলগুলির হইচইয়ে, গোটা ঘটনাটি ভুয়ো সংঘর্ষ কি না, সে প্রশ্ন জোরালো হয়েছে। জাতীয়তাবাদী ভাবাবেগ আরও উস্কে দিতেই এমন ঘটনা ‘ঘটানো’ হল কি না, উঠছে সেই প্রশ্নও।

সোমবার বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ছড়িয়ে পড়ে একটি ফুটেজ। যেখানে দেখা যাচ্ছে, মৃতপ্রায় এক ব্যক্তির উপরে বুলেট বৃষ্টি করে চলেছেন কমান্ডোরা। যেখানে মৃতদেহগুলি পড়ে রয়েছে, সেখানে কিন্তু কোনও অস্ত্রশস্ত্র নেই। সাদা পোশাকে এক জনকে দেখা গেল, প্লাস্টিকে মোড়া একটি নতুন ছুরি নিহত এক জঙ্গির ট্রাউজারের পকেট থেকে বের করলেন। আর একটি ভিডিওয়, সংঘর্ষের আগে জঙ্গিরা আত্মসমর্পণ করতে চায় বলেও দেখা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে ঠিক কী কারণে কমান্ডোরা ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি চালিয়ে আট জনকে মেরে ফেললেন, স্পষ্ট নয়।

সংশয় আরও বাড়িয়েছে পুলিশ এবং সরকারের পরস্পর-বিরোধী দাবি। মধ্যপ্রদেশ পুলিশের আইজি যোগেশ চৌধুরি দাবি করেছেন, ওই আট জনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। কিন্তু মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ওদের হাতে জেলের ওই চামচে শান দিয়ে তৈরি ছুরিই ছিল।’’ চামচ-ছুরির মোকাবিলায় গুলি চালিয়ে আট জনকে মেরে ফেলতে হল কেন? ব্যাখ্যা নেই এখনও।

মধ্যপ্রদেশ পুলিশের দাবি, রবিবার দীপাবলির রাতে ২টো থেকে ৩টের মধ্যে ভোপালের সেন্ট্রাল জেলে কনস্টেবল রামশঙ্কর যাদবকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুন করে সিমি-র আট সদস্য। পুলিশের দাবি, ওরা জেলের প্লেট ও চামচে শান দিয়ে ধারা‌লো অস্ত্র তৈরি করেছিল। তা দিয়েই রামশঙ্করকে খুন করা হয়। আর এক রক্ষীকে বেঁধে ফেলে ওই আট জন। তার পর চাদর দিয়ে তৈরি একটা লম্বা দড়ি বেয়ে একের পর এক দেওয়াল টপকে উধাও হয়ে যায় তারা। পুলিশের খাতায় এদের নাম মহম্মদ সালিক, মহম্মদ খালিদ, মেহবুব গুড্ডু, মুজিব শেখ, আব্দুল মজিদ, জাকির হুসেন শেখ, আমজাদ ও আকিল। রাষ্ট্রদ্রোহ, জঙ্গি কার্যকলাপ ও ডাকাতির মতো গুরুতর অভিযোগে বিচারাধীন এই আট জনকে নিয়ে পুলিশের মাথাব্যথা অবশ্য দীর্ঘদিন। ২০১৩ সালে এদের তিন জন খাণ্ডোয়া জেল থেকে পালিয়েছিল। চলতি বছরের গোড়ায় ফের ওড়িশা থেকে গ্রেফতার হয় তারা।

এ বারেও কয়েদিদের পালানোর কথা জানাজানি হতেই ভোর চারটে থেকে শুরু হয় পুরোদস্তুর তল্লাশি অভিযান। বিমানবন্দর, স্টেশন-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পাঠিয়ে দেওয়া হয় আট জনের ছবি। পলাতকদের ধরিয়ে দিলে আর্থিক পুরস্কারের কথাও ঘোষণা করে প্রশাসন। দেশ জুড়ে সতর্কতা জারি করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও। পাশাপাশি দিল্লি পুলিশের স্পেশ্যাল সেলের একটি দল মধ্যপ্রদেশ পৌঁছে যায়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, এই আট জন সিমি-র ‘মাল-এ-গনিমত’ শাখার সদস্য। আবু ফয়জল ওরফে ডক্টরের অধীনে থাকা এই শাখার কাজ চুরি-ডাকাতি করে জেহাদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা। সিমি-র অনেক সদস্যই পরে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনে গিয়েছে।

এ দিন বেলা এগারোটা নাগাদ মধ্যপ্রদেশ পুলিশ দাবি করে, ভোপালের শহরতলি এলাকা মালিখেড়াতে ওই আট জনের সন্ধান পায় পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দারাই পুলিশকে ওই তাদের গতিবিধি সম্পর্কে তথ্য দেন। তার ভিত্তিতেই অভিযান চালায় বাহিনী। মালিখেড়ায় কমান্ডোরা কয়েদিদের ঘিরে ফেলেন। পুলিশের দাবি, এর পরেই কয়েদিরা সশস্ত্র অবস্থায় পুলিশের উপরে চড়াও হয়। প্রত্যাঘাতে খতম হয় আট কয়েদি।

বিরোধীরা কিন্তু ভুয়ো সংঘর্ষের অভিযোগই তুলছেন। কংগ্রেসের দিগ্বিজয় সিংহ, কমল নাথ, এআইএমআইএম নেতা আসাদুদ্দিন ওয়াইসি সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে তদন্তের দাবি করেন। দিগ্বিজয় তো এও দাবি করেন, ‘‘আজকাল আরএসএস কর্মীরা এ ধরনের অনেক বিষয়ে জড়িত থাকছে।’’ বিতর্কের মুখে মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান জানান, এনআইএ তদন্ত করবে। কিন্ত সেই আশ্বাসে বিরোধীরা খুশি নন। দিগ্বিজয়ের দাবি, ‘‘মালেগাঁও তদন্তে এনআইএ যা করেছে, তাদের উপরে আর ভরসা রাখা যায় না।’’

অনেকে মনে করাচ্ছেন, নরেন্দ্র মোদীর মুখ্যমন্ত্রিত্বে গুজরাতে একের পর এক ভুয়ো সংঘর্ষের অভিযোগ উঠেছিল। ব্যপম কাণ্ডে জেরবার শিবরাজ সরকারও জাতীয়তাবাদের তাস খেলতে চাইছে কি না, থাকছে সেই সন্দেহও। বিজেপির মুখপাত্র জি ভি এল নরসিংহ রাও বলেন, ‘‘দিল্লির বাটলা হাউসে জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষের পরে ওই ঘটনাকে ভুয়ো বলেছিলেন দিগ্বিজয়। সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পরে সেনাবাহিনীর বিবৃতি নিয়েও বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

encounter terrorists SIMI
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE