প্রতীকী ছবি।
আর একটু হলেই দিল্লি থেকে লন্ডনের উড়ানে উঠে পড়ছিলেন ওঁরা। শেষ মুহূর্তে বোর্ডিং গেটে এয়ার ইন্ডিয়ার কর্মীরা সাত যাত্রীকে আটকান। সাতটি বোর্ডিং পাস ফের খুঁটিয়ে দেখে বুঝতে পারেন, সেগুলো ভুয়ো। এআই-১৩৩ উড়ানের যাত্রী-তালিকায় ওই সাত জনের নামই নেই! দেখা যায়, কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট-সহ ওই সাত জনের অন্যান্য কাগজপত্রও জাল। গত ২ জানুয়ারি দিল্লির ইন্দিরা গাঁধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এই ঘটনায় সাত জনকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধরা পড়েছে গোটা ঘটনার নেপথ্যে থাকা দালাল-চক্রটিও।
ওই সাত যাত্রীর নাম আরমানদীপ সিংহ, অমৃতপাল সিংহ, জগদীপ সিংহ, গুরবিন্দর সিংহ, রাহুল জঙ্গরা, দীপক এবং মনবীর। দিল্লির দু’জন দালালকে তাঁরা বারো লক্ষ টাকা করে দিয়েছিলেন। দালালেরা বলেছিল, সাত জনকেই নেগেটিভ কোভিড রিপোর্ট-সহ যাবতীয় কাগজপত্র এবং বোর্ডিং পাস তৈরি করে দেওয়া হবে। বোর্ডিং পাস থাকায় সংশ্লিষ্ট উড়ান সংস্থার কাউন্টারে না গিয়ে তাঁরা সরাসরি অভিবাসন কাউন্টারে চলে যেতে পারবেন। এত নিখুঁত হয়েছিল সেই বোর্ডিং পাস যে, অভিবাসন অফিসারেরাও তা ধরতে পারেননি। এ ছাড়া জাহাজ মন্ত্রকের ডিরেক্টরেট জেনারেলের অনুমোদিত ভুয়ো কাগজপত্রও দেওয়া হয়েছিল ওই সাত জনকে, যেখানে নাবিক হিসেবে তাঁদের পরিচয় দেওয়া হয়েছিল। ওই সাত জনের পরিকল্পনা ছিল, ব্রিটেনে পৌঁছনোর পরে তাঁরা নিজেদের সমস্ত কাগজপত্র নষ্ট করে দিয়ে সেই দেশেই আশ্রয় চাইবেন।
কিন্তু সমস্ত পরিকল্পনা ভেস্তে যায় ঠিক বিমানে ওঠার আগে। ভুয়ো বোর্ডিং পাস ধরা পড়ার পরে ওই সাত জনকেই অভিবাসন কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশ জানিয়েছে, এই দালাল-চক্রের মাথা হল পঙ্কজ নামে উত্তরপ্রদেশের ভদোহীর এক বাসিন্দা। বি-টেক পাশ পঙ্কজ মুম্বইয়ে জমি-বাড়ির ব্যবসা করে। পঙ্কজের সঙ্গে এই জালিয়াতি চক্রে তার দুই সহযোগী রঞ্জিত এবং কৃষ্ণকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিন জনে মিলেই জাল বোর্ডিং পাস তৈরি করেছিল বলে ডিএসপি (দিল্লি বিমানবন্দর) সঞ্জয় ত্যাগী জানিয়েছেন। তবে গোটা ঘটনায় বিমানবন্দর বা বিমান সংস্থার কর্মীদের যোগ থাকার সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখবে পুলিশ। মাথায় রাখা হচ্ছে যে, অভিবাসন থেকে সুরক্ষা-তল্লাশি— প্রতিটি ধাপই অনায়াসে পেরিয়ে গিয়েছিলেন ওই সাত জন।
বস্তুত, ভারতের কোভিড শংসাপত্র নিয়ে ব্রিটেন প্রশ্ন তোলায় কেন্দ্রের সঙ্গে বরিস জনসন সরকারের দীর্ঘদিন ধরেই টানাপড়েন চলেছে। অভিযোগ উঠেছে যে, বিদেশি উড়ানের বহু যাত্রীকে এখনও ভুয়ো কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট বানিয়ে দেওয়ার টোপ দিচ্ছে দালাল চক্রগুলি। দেশের খাস রাজধানীতেই এমন জালিয়াতি প্রকাশ্যে আসায় কিছুটা অস্বস্তি বেড়েছে কেন্দ্র তথা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের। অথচ কোভিড অতিমারির তৃতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় শুধু দিল্লিতেই করোনা সংক্রমণের হার ২৫ শতাংশ পেরিয়েছে। আজ সারা দিনে দিল্লিতে সংক্রমণ ধরা পড়েছে ২১,২৫৯ জনের। মারা গিয়েছেন আরও ২৩ জন। মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল অবশ্য ফের জানিয়েছেন যে, দিল্লিতে লকডাউন জারির কোনও পরিকল্পনা তাঁদের নেই।
কোভিডের চিকিৎসার ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যেই হাসপাতাল ঘুরে দেখেছেন কেজরীওয়াল। তিনি জানিয়েছেন, ওমিক্রন স্ট্রেনের সংক্রমণে দ্বিতীয় ঢেউয়ের তুলনায় মৃদু উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। কিন্তু করোনার এই প্রজাতিটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে। ফলে সতর্কতা প্রয়োজন। অত্যাবশ্যক পরিষেবা ছাড়া দিল্লির সমস্ত বেসরকারি অফিসের কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করতে বলা হয়েছে। রাজ্যবাসীর উদ্দেশে কেজরীওয়াল বলেছেন, ‘‘বাধ্য হয়ে নৈশ কার্ফুর মতো কড়া পদক্ষেপ করতে হচ্ছে। চিন্তা করবেন না। আমরা লকডাউন করব না। দিল্লি বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষের বৈঠকে আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের অফিসারদের অনুরোধ করেছিলাম যে, সমগ্র জাতীয় রাজধানী অঞ্চলকে (যা লাগোয়া রাজ্যগুলিতেও বিস্তৃত) বিধিনিষেধের আওতায় আনা হোক। তাঁরা এই বিষয়ে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।’’ দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈনের কথায়, ‘‘(দিল্লিতে) সংক্রমণ হয় ইতিমধ্যেই শীর্ষ ছুঁয়ে ফেলেছে, অথবা দু’এক দিনের মধ্যেই ছোঁবে। তার পরে সংক্রমণ কমতে শুরু করবে। তবে মানুষ যাতে সুরক্ষার বিষয়ে ঢিলেঢালা মনোভাব না নেন, তা মনে করিয়ে দিতে আমরা হয়তো আরও এক দফা কার্ফু জারি করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy