ছবি: সংগৃহীত।
মোদী সরকার জিএসটি ক্ষতিপূরণ মেটাচ্ছে না বলে সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের ক্ষোভ ছিল। কেন্দ্রের জিএসটি ক্ষতিপূরণ মেটানোর দায় নেই বলে অর্থ মন্ত্রক অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে মত চাওয়ায় সেই ক্ষোভের আগুনে ঘৃতাহুতি পড়েছিল।
বৃহস্পতিবার জিএসটি পরিষদের বৈঠকের চব্বিশ ঘণ্টা আগে বুধবার সাতটি বিরোধী শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা জিএসটি ক্ষতিপূরণের দাবিতে সরব তো হলেনই, সেই সঙ্গে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাতের অভিযোগ তুলে কেউ কেউ হুঁশিয়ারি দিলেন, প্রয়োজনে তাঁরা জিএসটি থেকে সরে আসার কথাও ভাববেন। সব মিলিয়ে বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের নেতৃত্বে জিএসটি পরিষদের বৈঠকে রীতিমতো ঝড় উঠতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
আজ সনিয়া গাঁধী অভিযোগ তুলেছেন, কেন্দ্র পেট্রল-ডিজেলে সেস বসিয়ে নিজের সিন্দুকে টাকা ভরছে। সেই রাজস্ব আয় রাজ্যের সঙ্গে ভাগ করছে না। এ দিকে জিএসটি ক্ষতিপূরণও মেটাচ্ছে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে রাজ্যকে অর্ধেক বা তার বেশি দায় নিতে হচ্ছে। কিন্তু সেই সব প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রীর নাম জুড়ে দিয়ে বা বিজেপি-আরএসএস নেতাদের নাম জুড়ে কেন্দ্র তার পুরো কৃতিত্ব তোলার চেষ্টা করছে। অথচ করোনা মোকাবিলা বা আমফানের মোকাবিলার জন্য অর্থসাহায্য করছে না।
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে আজ যুক্তি দিয়েছেন, রাজ্য তো নিজের কর বসানোর সিংহভাগ ক্ষমতা জিএসটি-তে কেন্দ্রের হাতে তুলে দিয়েছে। এখন রাজ্যের সমস্যা হলে আগের ব্যবস্থা ও বর্তমান জিএসটি ব্যবস্থার মাঝামাঝি কিছু ভাবতে হবে। পুদুচেরির মুখ্যমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামী বলেন, ‘‘প্রয়োজনে জিএসটি থেকে বেরিয়ে যাব। নিজের মতো কর বসাব।’’
লকডাউনের আগে থেকেই অর্থনীতির ঝিমুনি শুরু হওয়ায় কেন্দ্র জিএসটি ক্ষতিপূরণ দিতে টালবাহানা করছে। করোনা অতিমারির মোকাবিলা করতে গিয়ে অর্থে টান পড়ায় জিএসটি ক্ষতিপূরণ না-পেয়ে রাজ্যগুলির নাভিশ্বাস উঠেছে বলে মুখ্যমন্ত্রীদের অভিযোগ। চলতি অর্থ বছরে এপ্রিল থেকে জুলাই— চার মাসের ক্ষতিপূরণ বকেয়া। অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বলেছেন, তাঁদের ক্ষতিপূরণ মেটানোর টাকা নেই। আজ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে চিঠি লিখে পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র মনে করিয়ে দিয়েছেন, ক্ষতিপূরণ মেটানোটা কেন্দ্রের সাংবিধানিক দায়। কারণ রাজ্য তার কর বসানোর ৭০ শতাংশ ক্ষমতা কেন্দ্রের হাতে তুলে দিয়েছে।
মমতার অভিযোগ, কেন্দ্র রাজ্যের বকেয়া ৫৩ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে না। চার মাসে জিএসটি ক্ষতিপূরণের প্রায় ৪১০০ কোটি টাকাও পায়নি রাজ্য। কিন্তু অতিমারি সামলাতে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা খরচ করে হয়ে গিয়েছে। আমফানের পরে এক হাজার কোটি টাকা অগ্রিম ছাড়া রাজ্য কিছুই পায়নি। বৈঠকের পরে মমতা বলেন, “মহারাষ্ট্র, পঞ্জাব, পুদুচেরি, ঝাড়খণ্ড, রাজস্থানও বলছে— টাকা পাচ্ছে না। এটা খুব গুরুতর পরিস্থিতি। কেউ কেউ হিসাব চাইছে, মাস্ক কত টাকায় কেনা হয়েছে। আপনারা ক’টাকা দিয়েছেন যে কৈফিয়ত চাইছেন? এই বিপর্যয়ের জন্য আপনারা যে টাকাটা তুলেছেন (পিএম-কেয়ার্স), সেই টাকা কোথায়? সেই টাকাটা সব রাজ্যকে ভাগ করে দিন।”
মোদী সরকার মুখে ‘সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো’-র কথা বললেও সনিয়া ও কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রীদের অভিযোগ, কাজে ঠিক উল্টো। কৃষিতে অধ্যাদেশ, কয়লা খনি বেসরকারিকরণ, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণ, বিমানবন্দর বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া, এমনকি শিক্ষানীতি নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না-করেই সিদ্ধান্ত হচ্ছে। মমতা মনে করিয়েছেন, রাজীব গাঁধীর সময় শিক্ষানীতি নিয়ে সংসদে বিশদ আলোচনা হয়েছিল। সনিয়ার মতে, সেপ্টেম্বরে সংসদের অধিবেশন শুরু হচ্ছে। সেখানেও এই সব বিষয়ে বিরোধীদের মধ্যে সমন্বয় দরকার।
রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতের অভিযোগ, ‘‘আসলে কেন্দ্রের নজর শুধু বিরোধীদের নির্বাচিত সরকার ফেলার দিকে। কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশে সেটা করা হয়েছে। রাজস্থানে পারেনি। এ বার মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ডের পালা কবে আসে— সেটাই দেখার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy