—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
সব ‘সেটিং’ হয়ে গিয়েছে! পিসেমশাইয়ের ‘আশ্বাসে’ রাজস্থানের কোটার কোচিং সেন্টার ছেড়ে পটনায় ফিরে এসেছিলেন বিহারের পরিযায়ী পরীক্ষার্থী অনুরাগ যাদব।
২২ বছর বয়সি অনুরাগ পরীক্ষার আগের রাতে ডাক্তারির প্রবেশিকা নিট-এর ফাঁস হওয়া প্রশ্ন আর তৈরি উত্তর হাতে পেয়েছিলেন। কিন্তু ফল বেরোতে দেখা যায়, পদার্থবিদ্যায় তাঁর প্রাপ্ত পার্সেন্টাইল ৮৫.৮, জীববিদ্যায় ৫১। আর রসায়নে? মোটে ৫! এমনটা কেন হল? দুর্নীতিতে টাকা জোগানো অভিভাবকেরা নন, এই প্রশ্ন শ্রীঘরে বসে করেছিলেন তদন্তকারীরা। জবাবে অনুরাগ জানিয়েছিলেন, এক রাতের মধ্যে রসায়নটা আর মুখস্থ হয়নি!
পটনার শাস্ত্রী নগর থানায় অনুরাগ ও প্রশ্ন ফাঁসে অভিযুক্ত নীতীশ কুমার নামে এক জনের দেওয়া স্বীকারোক্তি বিহারের নিট দুর্নীতির একটি খণ্ডচিত্র তুলে ধরেছে। গুজরাতে গোধরার এক স্কুলে পরীক্ষা কেন্দ্র ‘কিনে’ নিয়েছিল পরীক্ষা-মাফিয়ারা, উঠেছে অভিযোগ। কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান এবং পরীক্ষার আয়োজক ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি (এনটিএ) প্রশ্ন ফাঁসের কথা বারবার অস্বীকার করলেও এই সব অভিযোগ বিড়ম্বনা বাড়াচ্ছে কেন্দ্রের।
স্বীকারোক্তিতে নীতীশের বক্তব্য, অমিত আনন্দ নামে অন্য অভিযুক্তের সঙ্গে একটি কাজে দানাপুর পুরসভায় গেলে পুরসভার ইঞ্জিনিয়ার সিকন্দর যাদবেন্দুর সঙ্গে পরিচয় হয়। তাঁরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে ‘বাচ্চাদের’ পাশ করিয়ে থাকেন বলে কথায় কথায় জানিয়েছিলেন। সিকন্দর তাঁদের অনুরাগ ও আরও তিন জনের কথা বলেন। মাথাপিছু ৪০ লক্ষ টাকার দর ধার্য হয়। অনুরাগের স্বীকারোক্তি, পরীক্ষার ঠিক আগের রাতে পিসেমশাই তাঁকে অমিত ও নীতীশের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। সেখানে প্রশ্নোত্তর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলা হয়েছিল পাখিপড়া করে নিতে। পরে সেই জায়গা থেকে আধপোড়া প্রশ্ন উদ্ধার হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন অনুরাগ, সিকন্দর, নীতীশ ও অমিত।
এ হেন পরিস্থিতিতে বিহারে জেডিইউয়ের প্রাক্তন জোট সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী আরজেডি-র তেজস্বী যাদবকে নিশানা করে বর্তমান জোটের উপমুখ্যমন্ত্রী বিজেপির বিজয় কুমারের দাবি, পরীক্ষার আগের দিন সিকন্দরের নামে সরকারি গেস্ট হাউসের ঘর বুক করেছিলেন তেজস্বীর ব্যক্তিগত সচিব প্রীতম কুমার। লালু প্রসাদ রাঁচীর জেলে থাকাকালীন সিকন্দর তাঁর জন্য কাজ করতেন বলেও দাবি বিজয়ের। তেজস্বীর প্রতিক্রিয়া এখনও মেলেনি।
গত ৫ মে প্রায় ২৪ লক্ষ পরীক্ষার্থী নিটে বসেছিলেন। ৪ জুন ফল বেরোয়। দেখা যায়, ৬৭ জন ৭২০ নম্বরের মধ্যে ৭২০ পেয়েছেন। কিছু পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রশ্ন দিতে দেরির জন্য অতিরিক্ত নম্বর দেওয়ায় এটা হয়েছে বলে কেন্দ্র এবং এনটিএ দাবি করলেও সেই যুক্তি শীর্ষ কোর্টে ধোপে টেকেনি। কেন্দ্র ২৩ জুন অতিরিক্ত নম্বর পাওয়া ১৫৬৩ জনের পরীক্ষা ফের নেবে বলে জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার শীর্ষ কোর্ট সেই পরীক্ষায় স্থগিতাদেশ দিতে সম্মত হয়নি।
সাফল্যের চূড়ায় ভিড় বাড়ায় এ বছর ডাক্তারিতে ভর্তির ন্যূনতম নম্বর অনেকটাই বেশি। নিটের এই ফলের ভিত্তিতে মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ভর্তি বন্ধ রাখা ও পুরো পরীক্ষা নতুন করে নেওয়ার দাবি উঠেছে। তবে সুপ্রিম কোর্ট একটি শুনানিতে এ দিন জানিয়েছে, কাউন্সেলিং যেমন চলছে, চলবে। এনটিএ-র আর্জিতে কলকাতা, বম্বে ও রাজস্থান হাই কোর্টে চলা নিট-দুর্নীতির সব মামলায় স্থগিতাদেশ দিয়ে আরও বলা হয়েছে, সেগুলির শুনানি শীর্ষ আদালতেই হবে।
আগামী ৮ জুলাই সুপ্রিম কোর্ট কী করে, সব নজর এখন সে দিকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy