কেন্দ্রের কাছে দাবি করা পুনর্বাসন প্যাকেজে রাজ্য সরকার দাবি করেছিল— ছিটমহল বিনিময় হলে প্রায় ৬৯ হাজার মানুষের ঢল নামবে পশ্চিমবঙ্গে। লোকসভায় কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ রাজ্যের জন্য যে পুনর্বাসন প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, তাতে তিনি বলেন হাজার ৩৫ মানুষ ভারতে আসতে পারেন। কিন্তু ৩১ জুলাই ছিটমহল বিনিময়ের পরে আদতে কত জন নতুন নাগরিকের দায়িত্ব রাজ্য সরকারকে নিতে হবে? বৃহস্পতিবারের পরে এ বিষয়ে যে স্পষ্ট ছবিটি উঠে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে— সংখ্যাটা বড় জোর সাড়ে ১৫ হাজার।
বৃহস্পতিবার ভারতীয় ও বাংলাদেশি ছিটমহলগুলিতে সরকারি সমীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে। ৫১টি বাংলাদেশি ও ১১১টি ভারতীয় ছিটমহলের প্রায় ৫১ হাজার মানুষ সরকারি ক্যাম্পে গিয়ে দু’দেশের অফিসারদের কাছে গিয়ে জানিয়েছেন— কোন দেশের নাগরিকত্ব তাঁরা নিতে চান। সরকারি সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গে যোগ হতে চলা বাংলাদেশি ছিটমহলগুলির ১৪ হাজার ২১৫ জন বাসিন্দার সকলেই ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে চেয়েছেন। আর বাংলাদেশে যুক্ত হবে যে ভারতীয় ছিটমহলগুলি, তার ৩৭ হাজার ৩৬৯ জন বাসিন্দার মধ্যে ১০২৭ জন ভারতীয় নাগরিকত্ব ধরে রাখতে চেয়েছেন। বাকিরা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে পরিচিতি চান। অর্থাৎ, ৫১টি বাংলাদেশি ছিটমহলের প্রায় সাত হাজার একর জমির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে আসতে চলেছেন ১৫ হাজার ২৪২ মানুষ।
কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য কেন্দ্রের কাছে চিঠি দিয়ে সমীক্ষার মেয়াদ বাড়ানোর দাবি জানালেও বিদেশ মন্ত্রক রাজি হয়নি। মন্ত্রকের এক কর্তা জানাচ্ছেন, সামান্য কয়েক জন মানুষ ছাড়া সকলেই নির্দিষ্ট সময়ের আগে ক্যাম্পে তাঁদের পছন্দের কথা জানিয়েছেন। তাই সময়সীমা বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। ওই কর্তা জানিয়েছেন, এ দিন ক্যাম্প বন্ধ হয়ে গেলেও দু-এক দিনের মধ্যেই শুরু হচ্ছে সমীক্ষার দ্বিতীয় পর্যায়। সরকারি অফিসারেরা তখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে কথা বলে মতামত যাচাই করবেন।
ভারতীয় ছিটমহলগুলিতে নাগরিকত্ব বাছাইকে ঘিরে বেশ কিছু পরিবারে ঘোরতর সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ এসেছে বিদেশ মন্ত্রকের কাছে। স্ত্রী ভারতে যেতে চান তো স্বামী বাংলাদেশে থাকতে চান ভিটে আঁকড়ে! একই বাড়ির দু’ভাইয়ের এক জন বাংলাদেশে থাকতে চান, অন্য জনের পছন্দ ভারতে অনির্দেশ যাত্রা। বিদেশ মন্ত্রকের সূত্র জানাচ্ছেন, সমীক্ষার দ্বিতীয় পর্বের এ ধরনের বিতর্ক মেটানোর ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে আলাদা আলাদা ভাবে বসা হবে পরিবারগুলির প্রত্যেকের সঙ্গে। এ ভাবে ২৯ জুলাইয়ের প্রত্যেক ছিটমহলবাসীর নাগরিকত্বের তালিকা চূড়ান্ত করে ফেলা হবে। ৩১ জুলাই মধ্যরাতের পরে ছিটমহলগুলি বিনিময়ের কাজ মিটে যাচ্ছে। তার পরে বর্ষা ও উৎসবের মরসুমে কাজে ব্যাঘাতের বিষয়টি হিসেবের মধ্যে ধরে নভেম্বরের মধ্যেই নাগরিক বিনিময় প্রক্রিয়া শেষ করে ফেলতে চায় নয়াদিল্লি ও ঢাকা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিষয়টির নজরদারি করায়, কাজ এগোচ্ছে একেবারে ঘড়ি ও ক্যালেন্ডার ধরে।
এর মধ্যে কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, ভারতীয় ছিটমহলগুলির বাসিন্দারা যাতে ভারতে যাওয়ার অপশন না-দেন, সে জন্য নানা ভাবে চাপ সৃষ্টি করছে বাংলাদেশের সরকারি দলের সমর্থকরা। কোথাও প্রলোভন, কোথাও আবার চাপা সন্ত্রাসের আবহও তৈরি করা হয়েছে। কুচলিবাড়ি সংগ্রাম কমিটির সাধন পালের দাবি, বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা এই পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন। তাঁরা বাংলাদেশে থাকতে না-চাইলে শেখ হাসিনা সরকারের ভাবমূর্তি খারাপ হতে পারে আশঙ্কা করেই এই কাজ করা হচ্ছে বলে তাঁর অভিযোগ। তবে বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তা বলছেন, ভারতীয় ছিটমহলগুলিতে তাঁদের অফিসারেররা রয়েছেন। কিন্তু সে ভাবে চাপ সৃষ্টির কোনও অভিযোগ তাঁরা পাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy