বন্যায় ডুবেছে বাড়ি। চলছে নিরাপদ আস্তানার খোঁজ। শ্রীনগরে ছবি: পিটিআই
বৃষ্টি এবং হড়পা বানে জম্মু-কাশ্মীরে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১০৭। আজ উধমপুর জেলায় দু’টি পৃথক দুর্ঘটনায় বাড়ি চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের। রাজৌরি জেলা থেকে উদ্ধার হয়েছে আরও ৪টি দেহ। গত ছয় দশকে এ রকম ভয়াবহ বন্যা দেখেননি বলে জানাচ্ছেন রাজ্যবাসী।
বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগামিকাল জম্মু-কাশ্মীরে আসবেন। প্রথমে তিনি জম্মু যাবেন। পরে যাবেন কাশ্মীর। বন্যাদুর্গতদের সব রকম সাহায্য করতে প্রস্তুত কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। আজ এ রাজ্যে আসেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের তরফে আজ এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিল্লি ফিরে বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে মোদীকে জানান। এর পরেই কাশ্মীর যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মোদী।
জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা আজ সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন, আবহাওয়ার উন্নতি হলে আগামিকাল বন্যাদুর্গত মানুষজনকে হেলিকপ্টারে করে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়া হবে। বন্যাদুর্গত মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে আনার জন্য অবন্তিপুর বিমানবন্দরে এক ব্যাটেলিয়ন এনডিআরএফ নামানো হয়েছে। আরও দুই ব্যাটেলিয়ন পাঠানো হয়েছে পুলওয়ামায়। মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, জম্মু ও শ্রীনগরে কপ্টার দাঁড়িয়ে রয়েছে। আবহাওয়া একটু ভাল হলেই, আটকে পড়া মানুষজনকে কপ্টারে করে নিরাপদে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করে দেওয়া হবে। রাজনাথের সঙ্গে আজ জম্মু-কাশ্মীরের বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করতে আসেন প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ। এ দিন ওমরের সঙ্গে বৈঠকও করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আবহাওয়া এতটাই খারাপ যে উড়তেই পারেনি মন্ত্রীর হেলিকপ্টার। তাই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে গাড়িতেই বাঘাট, বারজুল্লা, রামবাগ, জিরো ব্রিজ, বাদশাহ ব্রিজের মতো কয়েকটি বন্যা-কবলিত এলাকা ঘুরে দেখেন তিনি। এ দিন কয়েক জন এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে রাজনাথ ত্রাণের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেন। তিনি জানিয়েছেন, বৃষ্টি ও বন্যায় ২৫০০টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাজ্যের অন্যান্য অংশ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ৪৫০টি গ্রাম।
এক ছাতায় রাজনাথ সিংহ এবং ওমর আবদুল্লা। শনিবার শ্রীনগরের বিমানবন্দরে। ছবি: পিটিআই
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, রাজ্যের ত্রাণ তহবিল থেকে ১১০০ কোটি টাকা খরচ করতে পারবে জম্মু-কাশ্মীর। তিনি আরও জানিয়েছেন, বন্যায় যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের পরিবার প্রতি দু’লক্ষ টাকা করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
আজ উধমপুরের রাখা জগানু এলাকায় বাড়ি চাপা পড়ে পাঁচ জন মারা গিয়েছেন। দু’জনের এখনও পর্যন্ত কোনও খোঁজ নেই। উধমপুরেরই রাখ বাতলা বেল্টে বাড়ি চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে দু’জন শিশুর। গুরুতর জখম হয়েছেন তাদের মা। এ দিকে, বৃহস্পতিবার জলের তোড়ে বরযাত্রীদের যে বাস ভেসে গিয়েছিল, সেই ঘটনায় আজ উদ্ধার করা গিয়েছে আরও চারটি দেহ। বুধবার থেকে শুরু হওয়া বিরামহীন বৃষ্টি এবং হড়পা বানে শুধুমাত্র জম্মুতেই প্রাণ হারিয়েছেন ৮৯ জন। কাশ্মীরে সেই সংখ্যা ১১। বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়া মানুষজনকে উদ্ধার করতে প্রশাসন কাজে লাগিয়েছে সেনাবাহিনী, বায়ুসেনা এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দলকে। তবে বৃষ্টি না থামায় মাঝেমধ্যেই ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধারকাজ।
সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করতে গতকাল পুলওয়ামা জেলার পামোপোর এলাকায় গিয়েছিল ন’জন সেনার একটি দল। নৌকা উল্টে তাঁদের মধ্যে কয়েক জন সেখানে আটকে পড়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে সাত জনকে আজ উদ্ধার করা গিয়েছে। বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে তাউই নদী। অন্ততনাগের সঙ্গম এলাকায় বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে ঝিলম নদী। পুলওয়ামা, অনন্তনাগ, কুলগামের মতো বেশ কিছু এলাকা এখনও প্রবল ভাবে জলমগ্ন। কাশ্মীরের ডিভিশনাল কমিশনার জানিয়েছেন, শ্রীনগরের নিচু এলাকাগুলিতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ধস এবং বন্যার জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জম্মু-শ্রীনগর এবং বাতোতে-ডোডা জাতীয় সড়ক। সাময়িক ভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে বৈষ্ণোদেবী যাত্রাও।
আজ রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ কাশ্মীরের বন্যাকে জাতীয় বিপর্যয় আখ্যা দেওয়ার দাবি করেছেন। প্রধানন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন তিনি। আটকে পড়া মানুষকে যত দ্রুত সম্ভব নিরাপদ এলাকায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদনও করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy