Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

রাজ্যসভায় অঙ্ক মেলাতে মোদীর মন মেলামেশায়

দিল্লি বিপর্যয়ের পরে এ বার নিজের ভাবমূর্তি শুধরে রাজ্যসভার কাঁটা দূর করার কাজে নেমেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দু’দিন পরেই শুরু হচ্ছে সংসদ। বাজেট অধিবেশনও যাতে অচল হয়ে না থাকে, সে জন্য বিরোধীদের উদ্দেশে কাল আনুষ্ঠানিক ভাবে আবেদন জানাতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তার আগে থেকেই বিরোধী নেতাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত পর্যায়ে একটা সুসম্পর্কের বাতাবরণ তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৭
Share: Save:

দিল্লি বিপর্যয়ের পরে এ বার নিজের ভাবমূর্তি শুধরে রাজ্যসভার কাঁটা দূর করার কাজে নেমেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দু’দিন পরেই শুরু হচ্ছে সংসদ। বাজেট অধিবেশনও যাতে অচল হয়ে না থাকে, সে জন্য বিরোধীদের উদ্দেশে কাল আনুষ্ঠানিক ভাবে আবেদন জানাতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তার আগে থেকেই বিরোধী নেতাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত পর্যায়ে একটা সুসম্পর্কের বাতাবরণ তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি।

ক’দিন আগেই শরদ পওয়ারের গড় বারামতীতে মরাঠা ‘স্ট্রংম্যান’-এর সঙ্গে একমঞ্চে হাজির হয়েছিলেন মোদী। আর আজ মুলায়ম সিংহ যাদবের গ্রাম সাইফাই-এ চলে গেলেন তাঁদের পারিবারিক অনুষ্ঠানে। শুধু মুলায়ম নন, কট্টর মোদী-বিরোধী লালুপ্রসাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুললেন একসঙ্গে। মুলায়মের পরিবারের ছেলের সঙ্গে লালুর মেয়ের তিলক অনুষ্ঠানে মোদী তাঁর বিরোধী শিবিরের নেতাদের সঙ্গে অনেকটা সময়ই কাটালেন এ দিন।

তবে বিজেপি জানে রাজ্যসভায় ৮টি অর্ডিন্যান্সের অনুমোদন আটকাতে কংগ্রেস ও বাকি বিরোধীরা এককাট্টা হচ্ছে। ঝড়টা মূলত উঠতে পারে জমি আইনের সংশোধন নিয়ে। এই অবস্থায় কিছুটা নমনীয়তার বার্তাও দিলেন মোদী। সরকারের তরফে আজ সন্ধ্যায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, জমি অধিগ্রহণ অর্ডিন্যান্সকে আইনে পরিণত করতে যে বিল তৈরি হয়েছে, কৃষক-স্বার্থে তাতে কিছুটা বদল করা হতে পারে।

দিল্লি নির্বাচনে ভরাডুবির পর বিরোধীরা বলছেন ‘মোদী-জাদু’ আর খাটছে না। দলেও কিছু নেতা নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের বিভিন্ন একতরফা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। এই পরিস্থিতিতে নিজের মূর্তির পুজো বন্ধ করা, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা বজায় রাখার আবেদন করা, নিজের বিতর্কিত স্যুট নিলামের মতো বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছেন মোদী। বিজেপির এক নেতার কথায়, “মোদী যদি এখনই নিজের ভাবমূর্তি শোধরাতে না পারেন, তবে আগামী দিনের নির্বাচনগুলিতেও হার অবশ্যম্ভাবী।” তাঁর মতে, সামান্য চা-বিক্রেতার ছেলে প্রধানমন্ত্রী হয়ে প্রাথমিক ভাবে কিছুটা সমীহ আদায় করলেও মানুষের মনে তাঁর ভাবমূর্তি বদলাচ্ছে। সে কারণেই জমি বিল থেকে কৃষক-বিরোধী তকমা সরানো প্রয়োজন। দিল্লি নির্বাচনে বিজেপি হারায় বিরোধীরা এখন উৎসাহিত। এই অবস্থায় রাজ্যসভার কাঁটা দূর করতে প্রধানমন্ত্রীকেই উদ্যোগী হতে হবে। নয়তো বাজেট অধিবেশনেও আটকে যাবে বিভিন্ন বিল। ধাক্কা খাবে দেশের অর্থনীতি। থমকে থাকবে সংস্কার।

এই অবস্থায় বিরোধী-ঐক্যে ভাঙন ধরাতে চায় বিজেপি। সেই কৌশলের অঙ্গ হিসেবেই মোদী এখন ঘুরছেন দোরে-দোরে। এই মুহূর্তে রাজ্যসভার ২৪৫টি আসনের মধ্যে বিরোধী-জোটেরই পাল্লা ভারী। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত বিজেপি যদি সবক’টি বিধানসভা নির্বাচনে খুব ভাল ফল করে, তাতেও বর্তমান শরিকদের নিয়ে রাজ্যসভায় গরিষ্ঠতায় পৌঁছবে না। সে কারণেই বিরোধীদের সঙ্গেও ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখার চেষ্টায় নামতে হচ্ছে মোদীকে। পওয়ারদের মঞ্চে তাঁর উপস্থিতির অন্য ফায়দাও হচ্ছে। মহারাষ্ট্র বিধানসভা ভোটের আগে থেকেই শিবসেনার সঙ্গে সম্পর্ক মসৃণ নয় বিজেপির। মোদীকে এত দিন উঠতে-বসতে কটাক্ষ করত শিবসেনা, আজ কিন্তু পুরনো তিক্ততা সরিয়ে রেখে শিবসেনা মোদীর স্যুট মিলামের পক্ষেই সওয়াল করেছে।

দলের মুখপত্র সামনার দাবি, মোদীর মতো মানুষ পরেছেন বলেই ১০ লাখি স্যুটের দাম উঠেছে ৪.৩১ কোটি টাকা। এই টাকা তো গঙ্গা সাফাইয়ের মতো ভাল কাজেই লাগানো হবে। মুখপত্রটি লিখছে, “সমালোচনা বন্ধ রেখে কংগ্রেস বরং রাহুল গাঁধীর জামা-জুতো নিলামে চাপিয়ে দেখুক না, কত দাম ওঠে। অরবিন্দ কেজরীবালও তাঁর মাফলার এবং লালু-মুলায়মরা তাঁদের জিনিসপত্র নিলামে চাপিয়ে দেখতে পারেন।” রাজনীতির দায়ে মোদী আজ লালু-মুলায়মদের সঙ্গে সময় কাটালেও শিবসেনা এ ভাবে পাশে দাঁড়ানোয় আশ্বস্তই বোধ করছে বিজেপি শিবির।

শিবসেনা, অকালি দল, টিডিপি, আরপিআই, নাগাল্যান্ড পিপলস ফ্রন্টের মতো এনডিএ শরিকদের নিয়ে রাজ্যসভায় বিজেপি ষাটের কাছাকাছি পৌঁছতে পারছে। এর সঙ্গে জয়ললিতা, মায়াবতী, নবীন পট্টনায়ক, করুণানিধি, চন্দ্রশেখর রাও ও কিছু নির্দলকে পেলে যোগ হতে পারে আরও জনা চল্লিশ। কিন্তু মুলায়মের ১৫ জন ও পওয়ারের ৬ জন সাংসদের সমর্থন পেলে তবেই টায়ে-টায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া সম্ভব রাজ্যসভায়। মোদীকে এখন তাই বিরোধী নেতাদেরও মন জয়ের চেষ্টায় নামতে হয়েছে। এতে শেষ রক্ষা হবে কি না সে প্রশ্ন অবশ্য আলাদা।

অন্য বিষয়গুলি:

budget modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy