Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

রঘুবরের পুষ্টি-সপ্তাহকে খেমকা মুর্মুর চ্যালেঞ্জ

এমার্জেন্সির সামনের চত্বরে পড়ে থাকা আদিবাসী শিশুটিকে দেখে ওঁরা চমকে উঠেছিলেন! ওঁরা মানে গোড্ডা সদর হাসপাতালে উপস্থিত অন্য রোগীর আত্মীয়-স্বজনরা। তাঁদেরই তত্পরতায় ছুটে আসেন হাসপাতালের ডাক্তাররা।

অপুষ্টির শিকার খেমকা মুর্মু। —নিজস্ব চিত্র।

অপুষ্টির শিকার খেমকা মুর্মু। —নিজস্ব চিত্র।

আর্যভট্ট খান
রাঁচি শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৩১
Share: Save:

এমার্জেন্সির সামনের চত্বরে পড়ে থাকা আদিবাসী শিশুটিকে দেখে ওঁরা চমকে উঠেছিলেন! ওঁরা মানে গোড্ডা সদর হাসপাতালে উপস্থিত অন্য রোগীর আত্মীয়-স্বজনরা। তাঁদেরই তত্পরতায় ছুটে আসেন হাসপাতালের ডাক্তাররা। কার্যত একটি ছ’বছরের মাতৃহীন আদিবাসী শিশুর কঙ্কাল কোলে নিয়ে ছলছল চোখে বসে রয়েছেন তার বাবা। এই মর্মান্তিক দৃশ্যে প্রথমে কথা জোগায়নি ডাক্তারদের মুখেও। তারপরেই শুরু হয়ে যায় তাঁদের তত্পরতা।

এই তো গত সপ্তাহেই অনেক ঢাক-ঢোল পিটিয়ে রাজ্য জুড়ে পালিত হয়েছে ‘নিউট্রিশন উইক-পুষ্টি সপ্তাহ’। ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৭ সেপ্টেম্বর। অপুষ্টির বিরুদ্ধে ‘জেহাদ’ ঘোষণা করে এই ‘পুষ্টি সপ্তাহ’ পালনের ডাক দেয় রঘুবর দাসের সরকার। মুখ্যমন্ত্রী আবার বিশেষ জোর দেন আদিবাসী ও বিলুপ্তপ্রায় জনজাতির মানুষদের স্বাস্থ্যের উপরে। সেই সপ্তাহ কাটতে না কাটতেই গোড্ডার এই খেমকা মুর্মু তো সরকারি ব্যবস্থার সামনে মূর্তিমান ‘চ্যালেঞ্জ’।

হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শিশুটির নাম খেমকা মুর্মু। তার বাড়ি গোড্ডা জেলার হাতিয়াপাথর গ্রামে। ছ’মাস আগে তার মা মারা যায়। খেমকার বাবা সোম মুর্মু মজদুরের কাজ করে। চার সন্তানের পিতা সোমের সব থেকে ছোট ছেলে এই খেমকা। সোমের কথায়, ‘‘চার ছেলের মুখে অন্ন জোগান দিতে পারি না সব সময়। ওদের মা মারা যাওয়ার পরে গত কয়েক মাস ধরে খেমকা ক্রমশই দুর্বল হতে থাকে। বিছানা থেকে উঠতে পর্যন্ত পারত না।’’ এরই মধ্যে কিছু পয়সাকড়ি জোগাড় করে ছেলেকে গ্রামের এক হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন সোম। ওই চিকিৎসক কিছু জড়িবুটি দেয়। কিন্তু তাতে ছেলের স্বাস্থ্যের উন্নতি তো হয়নি, আরও রুগ্ন হতে থাকে সে। শেষে ওই হাতুড়ের পরামর্শেই সোম তার ছেলেকে নিয়ে চলে আসে গোড্ডার সদর হাসপাতালে। পরিস্থিতি এমনই, ডাক্তাররা যখন খেমকাকে প্রথম ইনজেকশনটি দেয় তখন তার আওয়াজ করে কাঁদার ক্ষমতাও ছিল না। শুধু চোখ থেকে গড়িয়ে পড়েছে জল।

গোড্ডা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডি কে ঠাকুর জানান, ‘‘শিশুটি মারাত্মক অপুষ্টির শিকার। শরীরে রক্ত খুব কম। দীর্ঘদিন শুয়ে থেকে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ঘাও হয়ে গিয়েছে।’’ খেমকার খবরে গোড্ডা জেলা প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। হাসপাতালে ওই শিশুকে দেখতে চলে আসেন জেলা সমাজ কল্যাণ দফতরের আধিকারিক সঞ্জয় পাণ্ডে। আসেন জেলার স্বাস্থ্য দফতরের পদস্থ আধিকারিকরাও। সঞ্জয়বাবু জানান, ‘‘সব খরচ দিয়ে ভাল চিকিৎসার জন্য ওই শিশুকে রিমসে পাঠানো হচ্ছে।’’ প্রশাসনিক তত্পরতায় আজ সন্ধ্যায় খেমকাকে রাঁচির রিমস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

রাজ্য সমাজ কল্যাণ দফতরের কর্মীদের গ্রামে ঘুরে ঘুরে, বিশেষ করে আদিবাসী গ্রামে গিয়ে তাদের স্বাস্থ্যের খোঁজ নেওয়ার কথা। প্রশ্ন উঠেছে, সেই দায়িত্ব তারা সত্যিই পালন করছে কী?

অন্য বিষয়গুলি:

abpnewsletters
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy