দুইয়ের মধ্যে দুই! অর্থাৎ শতকরা হিসেবে একশোয় একশো।
মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের পরে চিত্রটা এমনই। অর্থাৎ, বিজেপির সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি মোট দু’জন সাংসদের দু’জনকেই মন্ত্রী করলেন নরেন্দ্র মোদী। প্রথম জন (নাজমা হেপতুল্লা) মোদী মন্ত্রিসভায় শুরু থেকেই ছিলেন সংখ্যালঘু বিষয়ক দফতরের পূর্ণমন্ত্রী। আর আজ শপথ নিলেন দ্বিতীয় সাংসদ মুখতার আব্বাস নকভি। তিনি পেলেন সংখ্যালঘু ও সংসদ বিষয়ক দফতরের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে আগামী পুরসভা এবং বিধানসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে এবং সে রাজ্যের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত। এক অর্থে যা সংখ্যালঘু প্রতিনিধিদের প্রতি মোদীর বরাভয় বলেই মনে করা হচ্ছে। শুধু পশ্চিমবঙ্গই নয়, সামনেই রয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরের বিধানসভা ভোটও। তার আগে মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক নিশ্চিত করার রাজনৈতিক প্রয়োজনীয়তা আছে বিজেপির। স্থির হয়েছে, উপত্যকার মোট ৮৭টি আসনের বেশির ভাগ আসনেই এ বার লড়বে বিজেপি। নরেন্দ্র মোদী নিজে গিয়ে তাঁর মুসলিম প্রার্থীদের হয়ে প্রচার করবেন।
রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, দু’জন সংখ্যালঘু সাংসদকেই মন্ত্রী করার এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে বিজেপির কৌশলগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত। এর আগে বিজেপি তথা এনডিএ মন্ত্রিসভায় মুখ দেখিয়েছেন হাতে গোনা মুসলিম প্রতিনিধি। সিকন্দর বখত, মুখতার আব্বাস নকভি (১৯৯৮ সালে বাজপেয়ী সরকারেও তিনি ছিলেন প্রতিমন্ত্রী) এবং শাহনওয়াজ হুসেন (এ বার তিনি ভোটে হেরে গিয়েছেন, না হলে তাঁকেও মন্ত্রী করা হত বলে বিজেপি সূত্রের খবর)-- এই তিন জন শুধু এর আগে বিজেপি সরকারের মন্ত্রিসভায় ছিলেন। সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনের সময় কংগ্রেসের অভিযোগ ছিল, মেরুকরণের রাজনীতিকেই উত্তরপ্রদেশে কাজে লাগিয়েছিলেন বিজেপির সে রাজ্যের তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা অমিত শাহ। সে সময় কোনও মুসলিম প্রার্থীকে বিজেপি টিকিট দেয়নি। উল্টে ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন ঘটিয়ে হিন্দুত্বের নামে সব শ্রেণির হিন্দুকে একটি ছাতার তলায় নিয়ে আসা হয়েছিল বলে অভিযোগ।
কিন্তু এখন মোদীর কৌশল আলাদা। পশ্চিমবঙ্গে ক্রমবর্ধমান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিষয়টি তাঁর মাথায় রয়েছে। সম্প্রতি ‘বীরভূম লাইনকে’ গোটা রাজ্যে কী ভাবে ব্যবহার করা যায়, তাও যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে ভাবছেন বিজেপির নেতৃত্ব। রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, সম্প্রতি ওই জেলায় তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের দাপটে অতিষ্ঠ হয়ে তৃণমূল থেকে যে সব কর্মী সাহস করে বেরিয়ে এসেছেন, তাঁদের আশ্রয় দিচ্ছে বিজেপি। ঘটনাচক্রে পাড়ুই ও তার পার্শ্ববর্তী গ্রামে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ বেশি থাকায় বিজেপির রাজনৈতিক সুবিধা হচ্ছে। তারা দেখাতে পারছে, পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘুদের মধ্যে তৃণমূলের তুলনায় বিজেপির প্রভাব বাড়ছে। যেমন রাজনৈতিক হিংসায় অতিষ্ঠ বীরভূমের মাখড়া গ্রামের কৃষক শামিম রেহমান তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “আগে প্রাণ, পরে ধর্ম। বৌ-বাচ্চাকে নিয়ে শান্তিতে দু’টো খেয়ে বাঁচতে হবে, তাই বিজেপি করছি।”
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ভোটের দায়ে অমর্ত্য সেনের ন’ বছর আগে লেখা একটি বইয়ের (আইডেন্টিটি অ্যান্ড ভায়োলেন্স- দ্য ইলিউশান অব ডেস্টিনি) তত্ত্বকে পশ্চিমবঙ্গে আঁকড়ে ধরেছে ‘হিন্দু পার্টি’ বিজেপি। বইয়ে অমর্ত্য সেনের বক্তব্য, ধর্ম মানুষের একমাত্র পরিচয় নয়। ধর্মবিশ্বাসের খোপে তাঁকে আটকে রাখা যায় না। শামিম এবং তাঁর সম্প্রদায়ের আরও অনেকের এই বহুধা পরিচয়কে (যেমন শামিম একাধারে কৃষক, দিনমজুর, সংখ্যালঘু সমাজে প্রভাবসম্পন্ন এবং পরিবারের একমাত্র রোজগেরে) কাজে লাগাতে চাইছেন মোদী। পশ্চিমবঙ্গে সামনেই পুর ভোট। কলকাতার উর্দুভাষা-ভাষী ভোটারের সংখ্যা বিপুল। তার পরই বিধানসভা ভোট। ভোটের লক্ষ্যে সে রাজ্যের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়কে মন্ত্রী করা হয়েছে। মন্ত্রিসভায় শতকরা একশো ভাগ সংখ্যালঘুকে মন্ত্রী করে অন্য সঙ্কেতও কাশ্মীর বা পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলিকে দিতে চাইছে বিজেপি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy