নয়াদিল্লিতে নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক। ছবি: পিটিআই।
মন্ত্রিসভার ছিপছিপে আকার নিয়ে অনেকে খুশি হলেও তা নিয়ে জটিলতা কিন্তু কাটছে না। সামনাসামনি নরেন্দ্র মোদীর কাছে হয়তো কেউ অসন্তোষ প্রকাশ করতে পারছেন না, কিন্তু দল ও শরিকদের মধ্যে তলে তলে অসন্তোষের চোরাস্রোত বইতে শুরু করেছে।
প্রায় এক সপ্তাহ ধরে দীর্ঘ আলোচনার পর গত কাল মোদী যে মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন, তাতে কোনও চমক নেই। মন্ত্রী সংখ্যা কমলেও মন্ত্রক কমেনি। এক একজন মন্ত্রীর হাতে একাধিক বড় বড় মন্ত্রকের ভার দেওয়া হয়েছে। তাতে অনেক মন্ত্রীকেই একাধিক মন্ত্রকের দায়ভার নিতে বিভিন্ন দফতরে ছুটতে হয়েছে। যেমন অরুণ জেটলি। অর্থ এবং প্রতিরক্ষা এই দুই মন্ত্রক তাঁর হাতে। আজ সকালে অর্থ দফতরের দায়িত্ব নিয়ে জেটলি জানিয়ে দেন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অতিরিক্ত দায়িত্ব তাঁকে দেওয়া হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী নয়। যার অর্থ, অচিরেই মন্ত্রিসভায় রদবদল করবেন মোদী।
প্রাক্তন সেনা প্রধান জেনারেল ভি কে সিংহ-কে উত্তর-পূর্ব, বিদেশ মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হলেও এখনও তিনি প্রতিরক্ষার দায়িত্ব পেতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু প্রতিরক্ষার ভার মোদী এমন কারও হাতে দিতে চান না, যেখানে পরে কোনও বিতর্ক হতে পারে। বিজেপি সূত্রের খবর, সুরেশ প্রভুর নাম এই মন্ত্রকের জন্য ভেবেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সমস্যা হল, প্রভু এখন লোকসভা বা রাজ্যসভার সদস্য নন। সামনে বিজেপির হাতে থাকা দু’টি রাজ্যসভা পদ খালি হবে। কিন্তু সেখানে সদস্য করতে হবে প্রকাশ জাভড়েকর ও নির্মলা সীতারামনকে। কারণ কোনও কক্ষের সদস্য না হয়েও এ বার তাঁরা মন্ত্রী হয়েছেন।
এই অবস্থায় সুরেশ প্রভু বা অন্য কাউকে যদি প্রতিরক্ষায় আনতে হয়, তা হলে কোনও বর্তমান সাংসদকে রাজ্যসভার সদস্যপদ ছাড়ার অনুরোধ করতে হবে। তার জন্য সময় দরকার। কথা বলতে হবে সঙ্ঘ নেতাদের সঙ্গেও। সে কারণে আপাতত নিজের আস্থাভাজন জেটলির হাতে এই মন্ত্রকটি দিয়েছেন মোদী। জটিলতা এখানেই শেষ নয়। গোবলয়ের অনেক রাজ্যেই বিজেপি এ বারে ভাল ফল করেছে। কিন্তু সেখানকার প্রতিনিধিত্ব সমান ভাবে বণ্টন হয়নি বলে অনেকেই ক্ষুব্ধ। যেমন বসুন্ধরা রাজে দলের কিছু নেতার কাছে প্রশ্ন তুলেছেন, গুজরাতের মতোই তাঁর নিজের রাজ্য রাজস্থান থেকেও সবক’টি আসনেই জিতেছে বিজেপি। অথচ গুজরাত প্রধানমন্ত্রী-সহ চার জনকে মন্ত্রী পেলেও রাজস্থান পেয়েছে মাত্র এক জন! গুজরাতের দু’জন আবার রাজ্যসভার সদস্য! পশ্চিমবঙ্গ, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড থেকেও কোনও মন্ত্রী নেই।
বিজেপির শরিক দলগুলির মধ্যেও রয়েছে অসন্তোষ। শিবসেনা থেকে মাত্র এক জন মন্ত্রিত্ব পাওয়ায় তাঁরা সন্তুষ্ট নয়। যে কারণে উদ্ধব ঠাকরের নির্দেশে আজ ভারী শিল্প মন্ত্রকের দায়িত্বও নেননি অনন্ত গীতে। যদিও পরে মোদীর হস্তক্ষেপে গীতে মন্ত্রিসভার বৈঠকে যোগ দেন। ভোটের আগে ২৫টি দলের সঙ্গে জোট গড়েছিল বিজেপি। কিন্তু মন্ত্রিসভায় শরিকদের মধ্যে ঠাঁই পেয়েছেন মাত্র চারটি দলের প্রতিনিধি। বাকি অধিকাংশ দলের একজনও অবশ্য জিততে পারেননি। কিন্তু যারা ভাল ফল করেছে, তাদের নেতারা মন্ত্রিসভায় আরও বেশি প্রতিনিধিত্বের দাবি তুলছে। যেমন চন্দ্রবাবু নায়ডু। তিনি চান, টিডিপি-র আরও কয়েক জনকে মন্ত্রী করা হোক।
বিজেপি সূত্রের মতে, অনেক কিছু ভাবনাচিন্তা করেই মোদী দফতর ও তাঁর মন্ত্রীদের সাজিয়েছেন। তবে এটি ঠিক, এক-একজন মন্ত্রীর হাতে অনেকগুলি করে দফতর রয়েছে। ফলে সুষ্ঠু ভাবে কাজ চালানোর জন্য আরও রাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়োজন হতে পারে। পরের রদবদলে আরও ১০-১৫ জনকে মন্ত্রী করা হতে পারে। সেখানে এই সব বিষয় বিবেচনা করে ঠিক করা হবে। আরও কিছু মন্ত্রক এক সঙ্গে জুড়ে দেওয়া যায় কি না, তা-ও বিবেচনায় রাখা হবে। সরকারের কাজ আজ থেকে শুরু হয়েছে। একবার চাকা গড়াতে শুরু করলে তার ফাঁকফোকরগুলিও ফুটে উঠবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy