পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনকালীন হিংসার প্রতিবাদে সিপিএমের মিছিল। হাওড়া ময়দানে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
যত ক্ষণ শ্বাস, তত ক্ষণই রাজনীতির আশ।
বুথ ফেরত সমীক্ষা মোদী ঝড়ের পূর্বাভাস দিচ্ছে। শুধু কংগ্রেস নয়, ভরাডুবির ইঙ্গিত বাম শিবিরেও। সমীক্ষা বলছে, যে ১১টি দলকে নিয়ে বামেরা বিকল্প জোট তৈরির স্বপ্ন দেখছেন, তাদেরও মোট আসন একশোর গণ্ডি পার হবে না। কিন্তু বাম নেতারা এখনও আশা করছেন, ভোটের ফল প্রকাশের পর তাঁরা জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবেন। আর তাই ভোট পরবর্তী রণকৌশল ঠিক করতে ফল প্রকাশের দু’দিন পরেই, ১৮ মে দিল্লিতে সিপিএম পলিটব্যুরোর বৈঠক ডাকা হয়েছে।
গত কাল লোকসভা নির্বাচনের শেষ দফা ভোটগ্রহণের পর বুথ ফেরত সমীক্ষা বলছে, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে চলেছে এনডিএ। কেন্দ্রে সরকার গড়তে নরেন্দ্র মোদীকে নতুন কোনও শরিকও খুঁজতে হবে না। অর্থাৎ বাম নেতাদের বিকল্প জোট সরকার তৈরির কোনও চেষ্টারই প্রয়োজন পড়বে না। ১৬ মে-র পরে তাঁরা নিশ্চিন্তে দিবানিদ্রায় যেতে পারেন।
এবিপি আনন্দ-এসি নিয়েলসেনের সমীক্ষা অনুযায়ী, এই ১১টি দল সব মিলিয়ে লোকসভার ৮০টি আসনও জিততে পারবে না। বিজেপিকে নিশানা করে বামেরা যে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী মঞ্চ গড়ে তুলেছিলেন, তাতে প্রধান ভূমিকা নিয়েছিলেন নীতীশ কুমার ও মুলায়ম সিংহ যাদব। কিন্তু সব সমীক্ষাই বলছে, গত বারের তুলনায় দুই লোহিয়াপন্থী নেতারই আসন এ বার কমতে চলেছে। এবিপি আনন্দ-র সমীক্ষা বলছে, নীতীশ কুমারের জেডি (ইউ)-র আসন গত বারের ১৯ থেকে কমে দাঁড়াবে ৪টিতে। উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টির আসনও গত বারের ২১টি থেকে কমে ১২টিতে পৌঁছবে। বিদায়ী লোকসভায় চার বাম দলের ২৪জন সাংসদ ছিলেন। বামেরাও নিজেদের আসন বাড়ানোর অবস্থায় নেই। একমাত্র ভরসা জয়ললিতার এডিএমকে। আম্মা এ বার তামিলনাড়ু থেকে তাঁর আসন সংখ্যা ৯টি থেকে বাড়িয়ে ২২টিতে নিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু বিকল্প জোট তৈরি হলেও জয়ললিতা সেখানে কতখানি থাকবেন, তা নিয়ে আগেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। কারণ নিজের রাজ্যেই বামেদের সঙ্গে আসন সমঝোতায় যেতে রাজি হননি তিনি।
লোকসভার ভোট শেষ হওয়ার আগেই কংগ্রেস নেতারা আঞ্চলিক দলগুলির বিকল্প জোটের সরকার গঠনের সম্ভাবনার কথা বলতে শুরু করেছিলেন। কংগ্রেস যে বাইরে থেকে এই সরকারকে সমর্থন দিতেও পারে, সেই সম্ভাবনাও উস্কে দিয়েছিলেন শীর্ষ কংগ্রেস নেতারা। এমনকী, দিগ্বিজয় সিংহের মতো নেতারা যুক্তি দিয়েছিলেন, কংগ্রেসেরও উচিত এই সরকারে যোগ দেওয়া। অন্য দিকে প্রকাশ কারাট-সীতারাম ইয়েচুরির মতো সিপিএম নেতারা এ বিষয়ে আগ বাড়িয়ে কোনও জল্পনায় যেতে চাননি। উল্টে তাঁদের যুক্তি ছিল, বাইরে থেকে কংগ্রেসের সমর্থন প্রয়োজন পড়েছিল বলেই অতীতে যুক্তফ্রন্ট সরকার দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। আর এ বার? বুথ ফেরত সমীক্ষা বলছে, কংগ্রেসের সমর্থন নিয়েও বামেদের বিকল্প জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতার ধারে কাছে যেতে পারবে না।
সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য কোনও বুথ ফেরত সমীক্ষাকে মানতে রাজি নন। তাঁদের যুক্তি, বিজেপির যে আসন বাড়বে এবং কংগ্রেসের কমবে, এতে কোনও ভুল নেই। কিন্তু বিজেপি তথা এনডিএ এত বেশি আসনে জিতে আসতে পারবে না। এনডিএ নিজের জোরে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। বুথ ফেরত সমীক্ষায় যা দেখানো হচ্ছে, তার থেকে অনেক বেশি আসন পাবে আঞ্চলিক দলগুলি। সিপিএম পলিটব্যুরোর সদস্য এস আর পিল্লাইয়ের দাবি, ২০০৪ ও ২০০৯ লোকসভা নির্বাচনে বুথ ফেরত সমীক্ষা যা দেখিয়েছিল, বাস্তব ফলাফলের সঙ্গে তার ১০ থেকে ৩০ শতাংশ ফারাক ছিল। পিল্লাইয়ের অভিযোগ, “শেয়ার বাজারকে চাঙ্গা করতে এবং ফাটকা বাজারের দিকে তাকিয়ে বুথ ফেরত সমীক্ষায় এই সব ফলাফল দেখানো হচ্ছে। বাস্তব চিত্রটা একেবারেই আলাদা। এ বারের বুথ ফেরত সমীক্ষার সঙ্গে আসল ফলের ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ফারাক হবে।”
ঠিক সেই কারণেই বাম তথা আঞ্চলিক দলগুলির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে ধারণা সিপিএম নেতাদের। সমীক্ষার তুলনায় বামেদের ফলও অনেক ভাল হবে বলে সিপিএম নেতাদের দাবি। এবিপি আনন্দর সমীক্ষা বলছে, বামেরা পশ্চিমবঙ্গে ১২টি, কেরলে ৮টি আসন পাবে। পশ্চিমবঙ্গের বিষয়ে নিশ্চিত না হলেও সিপিএম নেতাদের দাবি, কেরলে বামেরা ২০টির মধ্যে ১০ থেকে ১৪টি আসন পাবে। কেরল রাজ্য কমিটির তরফে তেমনই রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। অন্য আঞ্চলিক দলগুলিও বুথ ফেরত সমীক্ষার তুলনায় অনেক বেশি আসন পাবে বলে সিপিএম নেতারা আশা করছেন। দলীয় সূত্রের খবর, ১৬ মে ভোটের ফল প্রকাশের পরই পরিস্থিতি বুঝে ১১টি দলের বৈঠক ডাকার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy