লোকসভা ভোটে ধর্মীয় মেরুকরণের প্রশ্নে এ বার বিতর্কে জড়ালেন খোদ নরেন্দ্র মোদীর আস্থাভাজন সেনাপতি অমিত শাহ। রাজনৈতিক লাভের জন্য সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগে আজ তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানাল কংগ্রেস।
কী বলেছেন অমিত শাহ? মুজফ্ফরনগরের গ্রামের পর গ্রামে প্রচারে গিয়ে গত কয়েকদিন ধরে মোদী ঘনিষ্ঠ এই নেতা বলেন, “যে সরকার জাঠেদের খুনিদের আশ্রয় ও পুনর্বাসন দিচ্ছে, তাদের ক্ষমতা
থেকে তাড়ানোর লড়াই হল এ
বারের নির্বাচন। বদলা নিয়ে মর্যাদা রক্ষা করা ছাড়া এ ভোটের আর কোনও অর্থ নেই।” জাঠেদের উত্তেজিত করতে শাহ এ কথাও বলেন, “নাওয়া-খাওয়া ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে, কিন্তু অপমান সহ্য করে নয়। বদলা চাই, বদলা।”
মোদী-ঘনিষ্ঠ নেতার এই সব বক্তব্য নিয়েই আজ সাড়া পড়ে গিয়েছে। কংগ্রেস মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারি বলেন, “মোদী ও তাঁর সহযোগীদের প্রকৃত চেহারা প্রকাশ পাচ্ছে। মারধর, বদলা নেওয়া, কেটে ফেলা এ সবই ওঁদের দর্শন। গুজরাতের পর এবার গোটা দেশে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়াতে চাইছেন মোদী। এঁদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনবেন কি না, মানুষ ভেবে দেখুন।” পাশাপাশি অমিত শাহকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে আজ নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থও হয়েছে কংগ্রেস।
গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের মুজফ্ফরনগরে গোষ্ঠী সংঘর্ষে অন্তত ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ঘরছাড়া হয়েছিলেন প্রায় ৪০ হাজার মানুষ। বস্তুত তখন থেকেই জাঠ ও সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বলয়ে মেরুকরণের রাজনীতির অশনিসঙ্কেত দেখা গিয়েছিল। কংগ্রেস ও মায়াবতীর অভিযোগ ছিল, নরেন্দ্র মোদী তাঁর আস্থাভাজন সেনাপতি অমিত শাহকে উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব দেওয়ার পর থেকেই রাজ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা শুরু হয়ে গিয়েছে। তাঁদের এ অভিযোগও ছিল, বিজেপি ও মুলায়ম সিংহ যোগসাজস করেই এই গোষ্ঠী সংঘর্ষ বাধিয়েছেন, যাতে মেরুকরণের সুফল উভয়েই নিতে পারে। যদিও ঘটনা হল, ওই গোষ্ঠী সংঘর্ষের পর সংখ্যালঘুরাই মুলায়মের ওপর চটে গিয়েছেন। এমনকী গত কাল দিল্লির জামা মসজিদের ইমাম
সৈয়দ অহমেদ বুখারিও মন্তব্য করেছেন, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দিতে মুলায়ম ব্যর্থ।
কিন্তু কেন্দ্র বা রাজ্যে ক্ষমতায় না থাকায় তেমন কোনও দায় বিজেপির নেই। উল্টে গোষ্ঠী সংঘর্ষে প্রধান দুই অভিযুক্ত স্থানীয় বিজেপি নেতা হুকুম সিংহকে মুজফ্ফরনগর ও আর এক অভিযুক্ত সঞ্জীব বালিয়াঁকে পাশের কৈরানা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করার পরে উত্তরপ্রদেশে বিজেপির রাজনীতি পরিষ্কার হয়ে যায়। বিধায়ক সুরেশ রানার মতো গোষ্ঠী সংঘর্ষে অভিযুক্তদের পাশে নিয়েই গত কয়েক দিন ধরে জাঠ বলয়ে প্রচার করেছেন অমিত শাহ। বিজেপি মুখপাত্র নির্মলা সীতারামন অবশ্য বলছেন, “বদলার কথা বলে মোটেই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়াননি অমিত শাহ। এখন মোগল জমানা নয় যে তীর-ধনুক, গোলা-বারুদ নিয়ে বদলা নিতে হবে। ভোটিং মেশিনে বোতাম টিমেই জবাব দেওয়া যায়, আর অমিত শাহ সেই কথাটাই বলেছেন।”
তবে ভোট যত এগোবে, বিজেপি ও কংগ্রেস মেরুকরণের রাজনীতি ততই তীব্র করে তুলবে বলে মনে করা হচ্ছে। নরেন্দ্র মোদী বা রাহুল গাঁধী উভয়েই জাতীয় স্তরে উন্নয়নের কথা বলছেন ঠিকই, কিন্তু বিজেপিও জানে জাতপাত-দীর্ণ উত্তরপ্রদেশে ধর্মীয় মেরুকরণের মাধ্যমেই একমাত্র জাত সমীকরণ ভাঙা যেতে পারে। আবার সংখ্যালঘু-প্রধান এলাকায় রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে কংগ্রেস নেতারাও মেরুকরণকেই কৌশল হিসেবে বাছতে পারে। তাতে উন্নয়নের ফাঁকফোকর যেমন ঢেকে দেওয়া যাবে, দুর্নীতি ও মূল্যবৃদ্ধির মতো বিষয়ও ঢাকা পড়বে। যুযুধান দুই শিবিরের এই ভাবনার প্রতিফলনই দেখা যাচ্ছে প্রচারে। ক’দিন আগে সাহারানপুরে কংগ্রেসের প্রার্থী ইমরান মাসুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, তিনি মোদীকে টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলবেন বলেছিলেন। আজ তার পাল্টা হিসাবে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া বলেন, “ভোটের পর দেখা যাবে, কে কাকে কাটে।” অন্য দিকে কংগ্রেসের সংখ্যালঘু নেতা আহমেদ খুরশিদ আজ মোদীকে ‘আরএসএসের গুন্ডা’ বলেন।
আবার শাহি ইমাম বুখারিকে আজ ‘পাকিস্তানি এজেন্ট’ বলেছেন বিজেপি প্রার্থী সাক্ষী মহারাজ।
প্রশ্ন উঠেছে, একই কারণে ইমরান মাসুদকে গ্রেফতার করা হলে অমিত শাহকে গ্রেফতারের জন্য কেন পুলিশকে নির্দেশ দেবে না নির্বাচন কমিশন? আজ কমিশনের তরফে অবশ্য এর কোনও জবাব দেওয়া হয়নি। সঙ্গে উঠেছে আর এক প্রশ্নও অমিত শাহ গ্রেফতার হলে কি মেরুকরণের আঁচে আরও হাওয়া লাগবে না? জবাবে কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারি বলেন, “তা বলে কেউ অপরাধ করলে তাকে গ্রেফতার করা হবে না!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy