ভাইরাল জ্বর সপ্তাহখানেকের মধ্যেই সেরে যায়, কিন্তু অ্যালার্জি লাগাতার ভোগায়। ছবি: সংগৃহীত।
একটা সময় ছিল যখন নাকি বাঘও মাঘ মাসের শীতকে ভয় পেত। কিন্তু এখন দূষণ আর গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর সৌজন্যে মাঘ মাসেই গরমের আভাস। উষ্ণ আবহাওয়ার দোসর ভয়ানক দূষণ। শহর কলকাতাই হোক কিংবা মফস্সল, গাড়ির ধোঁয়া-ধুলোয় নির্মল বাতাস উধাও। এক দিকে তাপমাত্রার ওঠাপড়া, অন্য দিকে বাতাসে ভাসমান ধুলোয় বাড়ছে অ্যালার্জির প্রকোপ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অ্যালার্জি থেকে সর্দিকাশি ও জ্বর হচ্ছে, বললেন কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নাক-কান-গলার চিকিৎসক দ্বৈপায়ন মুখোপাধ্যায়। একই সঙ্গে ঠান্ডাগরমের কারণে ভাইরাল ফিভার বাড়ছে। অ্যালার্জির কারণে সর্দিজ্বর হোক বা ভাইরাসের কারণে, উপসর্গ প্রায় একই রকম। নাক দিয়ে জল ঝরা, হাঁচি, খুসখুসে কাশি সঙ্গে জ্বর। একটা তফাত আছে— তা হল ভাইরাল জ্বর সপ্তাহখানেকের মধ্যেই সেরে যায়, কিন্তু অ্যালার্জি লাগাতার ভোগায়।
কী করণীয়
দ্বৈপায়ন মুখোপাধ্যায়ের পরামর্শ, জ্বর-সর্দি হলেই তাড়াহুড়ো করে অ্যান্টিবায়োটিক না খাওয়া। অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে। লাগাতার সর্দি-হাঁচি-জ্বর চলতে থাকলে অবশ্যই অ্যালার্জি পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। জ্বর-সর্দি হলে নাকে স্যালাইন ড্রপ, অ্যান্টিঅ্যালার্জিক, গরম জলে গার্গল করতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এতেই উপকার পাওয়া যায়। কোনও খাবারে অ্যালার্জি থাকলে তা খাওয়া বন্ধ করা উচিত।
চিকিৎসকের মতে, বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের পাশাপাশি অনেক সময় জটিল কোনও রোগের প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবেও জ্বর আসে। ইউরিন ইনফেকশন, টনসিলাইটিস, আপার রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন, ফুসফুসের প্রদাহ কিংবা নিউমোনিয়া অথবা মেনিনজাইটিসের প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবেও জ্বর হতে পারে। আবার টিউবারকুলোসিস গাউট, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, কোনও ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, লিম্ফ গ্ল্যান্ড ও রক্তের ক্যানসার-সহ অন্যান্য ক্যানসার হলেও প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে লাগাতার জ্বর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই টানা বা বারে বারে জ্বর হলে অবশ্যই ডাক্তার দেখানো উচিত। ডায়রিয়ার মতোই জ্বর হলেও ডিহাইড্রেশন হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই এই সময় বারে বারে জল পান করা প্রয়োজন।
‘ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ’-এর শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ জয়দীপ চৌধুরী জানালেন যে, বাচ্চাদের জ্বর বাড়লে তড়কা অর্থাৎ কনভালশন হতে পারে। তাই ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি জ্বর হলেই বয়স ও ওজন অনুযায়ী ঈষদুষ্ণ জলে স্পঞ্জ করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি প্যারাসিটামল খাওয়ানো উচিত। তিনি বললেন, ‘‘জ্বর বাড়লে মাথায় জলপটি দেওয়ার যে রীতি আছে, তা-ও মেনে চললে ভাল হয়। তবে শুধু কপালে নয়, জ্বর হয় সমস্ত শরীর জুড়েই। তাই জ্বর ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের উপরে গেলে অবশ্যই মাথা ধুইয়ে গোটা শরীর স্পঞ্জ করিয়ে দেওয়া দরকার। জ্বরের সব থেকে ভাল ওষুধ বিশ্রাম আর পর্যাপ্ত পরিমাণে জল ও জলীয় খাবার। জ্বরে গা-হাত-পা ব্যথা হলে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ ছাড়া আর কোনও ওষুধ খাওয়ার দরকার নেই।
জয়দীপ জানালেন, বাচ্চাদেরই হোক বা বড়দের— জ্বর চলতে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে রক্ত পরীক্ষা করানোর প্রয়োজন হতে পারে। দ্বৈপায়ন জানালেন, ইদানীং অ্যালার্জির চিকিৎসায় ইমিউনোথেরাপি করে অ্যালার্জি সারিয়ে তোলা হচ্ছে। তবে ধৈর্য ধরে চিকিৎসা করাতে হয়। একনাগাড়ে জ্বর-সর্দি-হাঁচি-কাশির ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে ইমিউনোথেরাপি অত্যন্ত উপযোগী। যাঁদের ধুলোয় অ্যালার্জি আছে, তাঁরা বাইরে যাওয়ার সময় মাস্ক পরলে সমস্যা কিছুটা কমে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy