এক সময়ে যে জোয়ার-বাজরার দিকে ফিরেও চাইত না বঙ্গের লোকজন, সেই খাবারই এখন চর্চায়। চিরকাল বাঙালির হেঁশেলে ঠাঁই পেয়ে আসা ময়দার তৈরি সাদা নরম ফুলকো লুচি কিংবা তিনকোনা পরোটায় এখন জুড়ছে আটা। কেউ আবার স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে গমের আটার সঙ্গে মিশিয়ে নিচ্ছেন রাগি, সয়া আটাও। ডায়াবিটিস, রক্তচাপ, স্থূলতা, হজমের সমস্যায় জেরবার মানুষজন চাইছেন স্বাস্থ্যকর খাবার। সেই তালিকাতেই নাম রয়েছে বাজরার।
আটা বলতে এত দিন গমের আটাই বুঝে এসেছে এ বাংলার লোকজন। কিন্তু পুষ্টিবিদেরা বলছেন, বাজরার গুণও কিছু কম নয়। বরং বাজরা খাওয়ার বাড়তি উপকারিতাও আছে। তা হলে কি এ বার আটা ছেড়ে বাজরার রুটি খাবেন? পুষ্টিগুণে এগিয়ে কে?
পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘গমের আটা বা বাজরার আটা দু’টিরই নিজস্ব পুষ্টিগুণ রয়েছে। তবে কারও জন্য গমের আটার রুটি ভাল, আবার কারও জন্য বাজরার। শরীর বুঝে তা বাছাই করতে হবে।’’
গ্লুটেন
গমের আটায় গ্লুটেন থাকে, তবে বাজরায় নয়। অনেকেরই গমের আটার রুটি খেলে হজমে সমস্যা হয়। এর কারণ হতে পারে গ্লুটেন। এটি এক ধরনের প্রোটিন। যাঁদের নির্দিষ্ট এই উপাদান হজমে সমস্যা রয়েছে তাঁরা বাজরার রুটি বেছে নিতে পারেন।
গ্লাইসেমিক ইনডেক্স
আটার তুলনায় বাজরার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স হল কোনও খাবার কত দ্রুত রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করে, তা পরিমাপের স্কেল বা সূচক। যে খাবারে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশি, সেই খাবার সুগারের রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। সেই বিচারে ডায়াবিটিস থাকলে আটার চেয়ে বাজরার রুটি বেশি উপকারী।
আরও পড়ুন:
ফাইবার
ফাইবার আটার চেয়ে বাজরার রুটিতেই বেশি। পেট পরিষ্কার রাখার জন্য, ওজন কমাতে ফাইবারের ভূমিকা থাকে। তবে পুষ্টিবিদ শম্পা সতর্ক করছেন, উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার সকলের জন্য ভাল নয়। বিশেষত গ্যাস্ট্রিক,আইবিএস (পেটব্যথা, হজমের সমস্যা)-এর সমস্যা থাকলে অতিরিক্ত ফাইবারে সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া ঠিক নয়। এতে হজমের সমস্যা বাড়তে পারে। এমন সমস্যায় ভুগলে তাঁরা বাজরা নয়, আটার রুটি বেছে নিতে পারেন। তবে তাতেও সমস্যা হলে, বাদ দিতে হবে রুটি।
ক্যালোরি: গমের আটার রুটির চেয়ে বাজরার রুটিতে ক্যালোরি কম। শম্পা বলছেন, ‘‘১০০ গ্রাম বাজরার আটায় ৩৬১ কিলোক্যালোরি মেলে, অন্য দিকে, ১০০ গ্রাম আটায় মোটামুটি ৪৬০ ক্যালোরি মেলে। আবার শর্করা এবং খনিজের পরিমাণ দু’টিতেই প্রায় সমান। এ ক্ষেত্রে ওজন কমাতে চাইলে বাজরার রুটি বেছে নেওয়া যেতে পারে।’’
এগিয়ে কে?
পুষ্টিগুণে যে দুই ধরনের আটায় অনেক তফাত, তা নয়। দু’ধরনের আটাতেই ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রনের মতো খনিজ পাওয়া যায়। তবে ডায়াবিটিস থাকলে, ওজন কমাতে চাইলে এবং গ্লুটেন সহ্য না হলে বাজরার রুটি বেছে নেওয়াই ভাল।