Advertisement
২১ নভেম্বর ২০২৪
Workplace Fear

অফিস যেতে আতঙ্ক? বস্‌কে ভয় পান? হতে পারে ‘আর্গোফোবিয়া’র মতো মানসিক ব্যাধির লক্ষণ

অফিসে যেতে হবে ভাবলেই বুক ধড়ফড়? অফিসের ফোন বা বসের মেসেজ দেখলেই রক্তচাপ বেড়ে যাচ্ছে? উদ্বেগের অনুভূতি? এই সবই হতে পারে ‘আর্গোফোবিয়া’র লক্ষণ।

বস্‌কে ভয় পান?

বস্‌কে ভয় পান? ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৪ ১৮:৪৬
Share: Save:

আপনি বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে বসে দিব্যি জমিয়ে গল্প করছেন, হাসি-মজা-আড্ডায় বেশ কাটছে সময়, এমন সময়ে এল বসের ফোন। সঙ্গে সঙ্গে শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত হয়ে আপনার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম, গলা-ঠোঁট শুকিয়ে কাঠ। লক্ষণগুলি কি চেনা লাগছে? জানেন কি, এ সব হতে পারে ‘আর্গোফোবিয়া’র লক্ষণ?

আর্গোফোবিয়া, অর্থাৎ, ‘কাজের ভয়’, এটি এক ধরনের উদ্বেগজনিত ব্যাধি। কাজের পরিবেশে অথবা কাজের ভাবনা থেকেই তীব্র ভয় বা উদ্বেগের অনুভূতি হল মূলত এর লক্ষণ। এই ভয় এতটাই তীব্র হতে পারে যে, তা ব্যক্তিকে কর্মস্থলে যেতে, এমনকি চাকরি ধরে রাখতেও বাধা দিতে পারে। আর্গোফোবিয়ায় ভুগছেন, এমন ব্যক্তি প্রায়ই সহকর্মীদের থেকে ভয়, নিজের কর্মক্ষমতা সম্পর্কে হীনম্মন্যতা, ভুল করার ভয় বা কাজে নিয়ন্ত্রণ হারানোর ব্যাপারে চূড়ান্ত উদ্বেগ অনুভব করেন।

লক্ষণ

কাজে যেতে অল্পবিস্তর বিরক্তি, মনখারাপ, এ সব আমরা সকলেই অনুভব করি। এর মানেই কি আর্গোফোবিয়ার শিকার?

আর্গোফোবিয়ার ক্ষেত্রে সাধারণত কিছু স্পষ্ট শারীরিক লক্ষণ থাকে, যেমন— কাজের পরিবেশে তীব্র ভয় এবং উদ্বেগের সঙ্গে ঘাম, কাঁপুনি, হাত-পা অস্বাভাবিক ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট বা গলা-ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়া হতে পারে আর্গোফোবিয়ার লক্ষণ।

প্রবল ভয় আর উদ্বেগের ফলস্বরূপ কাজে মনোনিবেশ করতে অসুবিধা হয়, যার ফলে, কাজে আরও বেশি ভুল হয়ে যায় এবং কাজে নিয়ন্ত্রণ হারানোর ভয় জন্ম নেয়। এর সঙ্গে আসে, সহকর্মীদের প্রতি ভীতি, নিজের কর্মক্ষমতা সম্পর্কে হীনম্মন্যতা। এর ফলে কাজের পরিবেশ এড়িয়ে চলার আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়। এর সঙ্গে জন্ম নেয় কাজে যাওয়ার জন্য অতিরিক্ত চিন্তা এবং উদ্বেগ। এমনকি, কাজ ছেড়ে দেওয়া বা চাকরির সুযোগগুলি প্রত্যাখ্যান করার মতো সিদ্ধান্তও কেউ কেউ নিয়ে ফেলেন।

কারণ

আর্গোফোবিয়ার সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায় না। তবে জিনগত, পরিবেশগত এবং মনস্তাত্ত্বিক কারণগুলির মিশ্র প্রভাব থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে সম্ভাব্য কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:

অতীতের অভিজ্ঞতা: অতীতে কর্মক্ষেত্রে নেতিবাচক অভিজ্ঞতা, কাজের পরিবেশে বেদনাদায়ক বা হতাশাজনক অভিজ্ঞতা, যেমন কঠিন সমালোচনা, হয়রানি বা বরখাস্ত হয়ে যাওয়ার ঘটনা এই মানসিক ব্যাধির কারণ হতে পারে।

কর্মস্থলে পূর্বের খারাপ অভিজ্ঞতা হীনম্মন্যতার জন্ম দিতে পারে।

কর্মস্থলে পূর্বের খারাপ অভিজ্ঞতা হীনম্মন্যতার জন্ম দিতে পারে। ছবি: সংগৃহীত।

হীনম্মন্যতা: কোন ব্যক্তি যদি স্বভাববশত হীনম্মন্যতায় ভোগেন বা নিজের কর্মক্ষমতা সম্পর্কে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তবে আর্গোফোবিয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে।

সামাজিক উদ্বেগ: সামাজিক উদ্বেগে ভুক্তভোগী মানুষ কাজের পরিবেশে অন্যদের সঙ্গে মেলামেশা করতে ভয় পান, ফলে নানা সমস্যায় পড়তে পারেন।

মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা: কোনও মানসিক সমস্যা, যেমন উদ্বেগের ব্যাধি আগে থেকে থাকলে, তা আর্গোফোবিয়ার বিকাশে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে।

চিকিৎসা

আর্গোফোবিয়ার চিকিৎসায় সাধারণত থেরাপি এব ওষুধ, দুইয়েরই ভূমিকা থাকে।

থেরাপি: কগনিটিভ-বিহেভিয়ারাল থেরাপি আর্গোফোবিয়ার জন্য সবচেয়ে কার্যকর থেরাপিগুলির মধ্যে একটি। এতে রোগীদের নেতিবাচক চিন্তাভাবনা এবং আচরণ চিহ্নিত করে সেগুলি পরিবর্তন করার চেষ্টা করা হয়। এ ছাড়া, ‘এক্সপোজ়ার থেরাপি’ও এই সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এতে ব্যক্তির যে বিষয় থেকে ভীতি, সেই বিষয়ের দিকেই তাঁকে বেশি করে ঠেলে দেওয়া হয় এবং ধীরে ধীরে সেই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার পদ্ধতি শেখানো হয়।

ওষুধ: যদি চিকিৎসক বিবেচনা করে দেখেন, রোগীর অবস্থা এতটাই সঙ্কটজনক, যে তাঁর চিকিৎসার জন্য থেরাপির সঙ্গে ওষুধও প্রয়োজন, তবে ওষুধ প্রয়োগ করে ব্যক্তির চিকিৎসা করা হয়।

অন্যান্য ‘ফোবিয়া’র মতো, আর্গোফোবিয়ার চিকিৎসাও সময়সাপেক্ষ। তবে, মনের জোর এবং সঠিক চিকিৎসায় সহজেই এড়িয়ে যাওয়া যায় আর্গোফোবিয়ার ভয়াবহ প্রভাব এবং আক্রান্ত ব্যক্তি পেতে পারেন এক চিন্তামুক্ত কর্মজীবন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy