গজগমন বলতে সাহিত্যে যে প্রকার চলনের কথা বলা হয়, এটি তেমন নয়। মকবুল ফিদা হুসেনের ‘গজ গামিনী’ মাধুরী দীক্ষিতও নয়। এটি আক্ষরিক অর্থেই ‘গজগমন’। অর্থাৎ, সত্যিই হাতির মতো হাঁটা। অপ্রস্তুত হওয়ার ভয়ে রাজি হবেন না বোধ হয়। কিন্তু হাতির মতো হাঁটার উপকারিতা শুনলে কাল থেকেই এই ব্যায়াম অভ্যাস করতে পারেন।
হাতির মতো হাঁটা বলতে এখানে ধীরে চলার কথা বলা হচ্ছে না। এমনকি হামাগুড়ি বা চারপেয়েদের মতোও নয়। কিন্তু হাত দু’টি কেবল নীচের দিকে ঝুলবে। আপনাকে ঝুঁকে পড়তে হবে সামনে দিকে। ইংরেজিতে এই ব্যায়ামটিকে ‘এলিফ্যান্ট ওয়াক’ বললেও এখানে হাঁটার দরকার পড়ে না। হাঁটার ভঙ্গী করতে হয় কেবল।
উত্তরপ্রদেশের ক্রীড়াবিষয়ক পুষ্টিবিদ বা স্পোর্টস নিউট্রিশনিস্ট আমন পুরী জানাচ্ছেন, কাঁধ, পিঠ, কোমর, পায়ের বিভিন্ন পেশিকে সক্রিয় রাখার জন্য ‘হাতির চলন’-এর শরীরচর্চা খুব কার্যকরী। এতে পেশিগুলি প্রসারিত হয়ে নমনীয় হয়ে ওঠে। স্ট্রেচ করতে করতে হাঁটার ফলে শরীর আরও বেশি সক্রিয় থাকে। এতে পেশি শক্ত হয়ে যাওয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

কী ভাবে করবেন এই শরীরচর্চা? ছবি: সংগৃহীত।
কী ভাবে করবেন এই শরীরচর্চা?
দাঁড়ানো অবস্থা থেকে সামনের দিকে নীচে ঝুঁকে পড়তে হবে। চেষ্টা করতে হবে, হাতদু’টি যাতে পায়ের সামনের মাটিকে ছুঁতে পারে। শুরুর দিকে মাটি ছুঁতে না পারলে সামনে একটি টুল রেখে তার উপরে হাত রেখে করা যায়। মাটি বা টুল, যেখানে হোক, হাতের তালু দু’টি দিয়ে ভাল করে ভর দিতে হবে। তার পর দু’টি পায়ের হাঁটু অল্প ভাঙতে হবে। এক বারে নয়। একটির পর একটি। বার বার এটি করতে হবে। যেন আপনি হাঁটছেন, কিন্তু জায়গা থেকে নড়ছেন না। ধীরে ধীরে এক বার বাঁ পায়ের হাঁটু ভাঙুন, পরের বার ডান পায়ের হাঁটু ভাঙুন।
এই ব্যায়াম কেন করা উচিত?
১. শরীরের সঠিক ভঙ্গিমা বিঘ্নিত হওয়ার কারণে ঘাড়, পিঠ, কোমর, পশ্চাৎদেশে ব্যথা হয় অনেকের। পুষ্টিবিদ বলছেন, সেই সমস্যা এড়াতে ভঙ্গিমা ঠিক করা দরকার। আর তার জন্য দরকার এলিফ্যান্ট ওয়াকের মতো ব্যায়াম।
২. শরীরের গতিশীলতা এবং নমনীয়তা বৃদ্ধি করতে পারে। আমন পুরী বলছেন, ‘‘রোজ এই ব্যায়াম করলে শিরদাঁড়া, কাঁধ, প্শ্চাৎদেশের পেশির নমনীয়তা বাড়ে।’’
আরও পড়ুন:
৩. শরীরকে সক্রিয় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ শরীরের ভারসাম্য এবং সমন্বয়। এই ব্যায়ামের সময়ে হাঁটু দু’টিকে সামনে পিছনে করার অভ্যাসের ফলে ভারসাম্য এবং সমন্বয় উন্নত হয়।
৪. শরীরের নীচের অংশে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। ফলে সেই অংশে অক্সিজেন এবং পুষ্টির জোগান ভাল হয়। আর সেই কারণে ক্রমাগত ব্যথা হওয়ার সমস্যা থেকে রেহাই মিলতে পারে।
৫. ফিটনেস বাড়ানোর জন্য এই ব্যায়ামের মতো সহজ ব্যায়াম কমই আছে। খুব বেশি হলে একটি টুল বা চেয়ার লাগবে। এ ছাড়া আরও কিছুর প্রয়োজন নেই। যখন-তখন চোট লাগার সম্ভাবনাও কম।
কারা করবেন না?
আমন পুরীর পরামর্শ, সকলেই এই ব্যায়াম অভ্যাস করতে পারেন। তবে কোনও রকম ঝুঁকি এড়াতে সব সময়ে প্রশিক্ষক বা বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থেকে ব্যায়াম করা উচিত।