খুব চাপ দিয়েও প্রথম কিস্তির লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক বাড়িতেও নির্ধারিত পর্যায়ের কাছাকাছি নির্মাণ হল না। যা নিয়ে ফের এক বার জেলা-কর্তাদের তৎপর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। গত ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত যে তথ্য রাজ্য সরকার পেয়েছে, তাতে সবচেয়ে কম অগ্রগতি রয়েছে জলপাইগুড়িতে। সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি দেখাতে পেরেছে নদিয়া। এতে নবান্নের নির্দেশ—গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে যুক্ত করে সেখানকার, পঞ্চায়েত দফতর এবং ব্লক উন্নয়ন আধিকারিকের (বিডিও) দফতরের কর্মীদের কাজে লাগিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের সমীক্ষা শুরু করতে হবে। যাতে নির্ধারিত পর্যায়ের নির্মাণ দ্রুত সম্পন্ন হয়।
প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, সরকারি বিধিতে ‘লিন্টেল’ (বাড়ি নির্মাণের একটি নির্দিষ্ট পর্যায়) পর্যন্ত নির্মাণ হলে তবে দ্বিতীয় কিস্তির বরাদ্দ ছাড়ার কথা। গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি ১২ লক্ষ উপভোক্তাকে বাড়ি তৈরিতে (আবাস যোজনা, রাজ্যের নাম ‘বাংলার বাড়ি-গ্রামীণ’) প্রথম কিস্তির বরাদ্দ হিসেবে ৬০ হাজার করে টাকা (মোট ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার মধ্যে) দিয়েছিল রাজ্য সরকার। আগামী মে মাসে বাকি ৬০ হাজার করে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্য সরকার। চলতি এপ্রিল মাস প্রায় শেষের পথে। হাতে সময় রয়েছে খুবই কম। তার মধ্যে সরকারি বিধি মেনে বাড়ির নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত নির্মাণকাজ কতটা শেষ করা সম্ভব, তা নিয়ে চর্চা রয়েছে প্রশাসনের অন্দরে।
সরকারি তথ্য বলছে, ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত রাজ্যের লক্ষ্যমাত্রা থাকা ১২ লক্ষ বাড়ি তৈরির মধ্যে ‘লিন্টেল’ পর্যায় পর্যন্ত বাড়ি তৈরি হয়েছে প্রায় ৫.২৭ লক্ষ। শতাংশের বিচারে তা ৪৩.৯৩%। তবে নির্মাণসামগ্রী জোগাড় এবং বাড়ি তৈরির কাজ শুরু হয়নি প্রায় ২৯ হাজার উপভোক্তার। নির্মাণসামগ্রী জোগাড় করলেও, নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি প্রায় ২৪ হাজার বাড়িতে। সব মিলিয়ে ‘লিন্টেন’ পর্যায় পর্যন্ত যে কাজ হয়েছে তার নিরিখে জলপাইগুড়ি, দক্ষিণ দিনাজপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূম, শিলিগুড়ি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, উত্তর ২৪ পরগনায় অগ্রগতির হার ২৪.৯৩% থেকে ৩৮.৫৫%-এর মধ্যে। দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনার মতো বড় জেলায় সেই হার যথাক্রমে ৩১.৬৪% এবং ৩৮.৫৫%। আবার ঝাড়গ্রাম, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, দুই বর্ধমান, পূর্ব মেদিনীপুর, হুগলি, উত্তর দিনাজপুরে সেই অগ্রগতির হার ৪৩.৯৪% থেকে ৬৮.৬৪%। হাওড়া ও নদিয়ায় তা যথাক্রমে ৭১.০৭% এবং ৮৩.৭৩%।
আধিকারিক মহলের দাবি, এই অবস্থায় নবান্নের নির্দেশ—প্রথম কিস্তির টাকা পাওয়া প্রত্যেক উপভোক্তার বাড়িতে প্রথম পর্যায়ের নজরদারির কাজ শেষ করতে হবে। যাঁরা নির্মাণের কাজ শুরু করেননি বা ‘লিন্টেন’ পর্যায় পর্যন্ত বাড়ি তৈরি হয়নি, সেই উপভোক্তাদের কাছে আবারও পৌঁছতে হবে সরকারি নজরদারি আধিকারিকদের। এর পাশাপাশি, নজরদারির কাজে যুক্ত করতে হবে পঞ্চায়েত এবং বিডিও কার্যালয়ের কর্মী এবং আধিকারিকদের। ভুল তথ্য সংশোধনের কাজও চালাতে হবে এই সবের সমান্তরালে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)