রাত করে ভারী খাবার খেয়ে শোয়ার পরেই চোঁয়া ঢেকুর উঠতে শুরু করে। অম্বলের ধাত থাকলে দেখবেন, রাতে শোয়ার পরেই গলার কাছে জ্বালার মতো অনুভূতি হয়। মনে হয় গলা দিয়ে অম্লরস উপরে উঠে আসছে। সেই সঙ্গেই বুকে-পিঠে প্রচণ্ড যন্ত্রণা শুরু হয়। এমন সমস্যা এখন বেশির ভাগেরই। বিশেষ করে বাঙালি বাড়িতে রাতেও থালা সাজিয়ে খাওয়ার অভ্যাস আছে। ভরপুর খাওয়ার পর পরই শুয়ে পড়েন অনেকে। তখনই এই গলা-বুক জ্বালা ভোগাতে শুরু করে। এমন লক্ষণ সাধারণ গ্যাস বা অম্বলের নয়। বরং তার চেয়েও বেশি। এই সমস্যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ‘জিইআরডি’, অর্থাৎ ‘গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজ়িজ়’।
সম্প্রতি পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। রাতের দিকেই বুকে যন্ত্রণা, শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল তাঁর। পরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা জানান, তিনি ‘জিইআরডি’-তে ভুগছেন। এমন সমস্যা থাকলে রাতের দিকেই অম্বল, গলা-বুক জ্বালা বেশি ভোগায়।
কেন রাতেই বেশি ভোগায় ‘জিইআরডি’?
প্রথমত, বেশি রাত করে খাবার খেলে এবং অতিরিক্ত তেল-ঝাল, মশলা দেওয়া খাবার খেলে তা হজম করতে বেশি অ্যাসিড ক্ষরণ করতে হয় পাকস্থলীকে। ফলে অম্বলের সমস্যা বাড়ে।
রাতে বিশ্রামের সময়ে পাকস্থলী থেকে অম্লরস বেশি ক্ষরিত হয়। ‘জিইআরডি’ থাকলে মুখগহ্বর ও পাকস্থলীর সংযোগকারী খাদ্যনালিতে থাকা পেশির বলয়, যার নাম ‘লোয়ার ইসোফেজিয়াল স্ফিঙ্কটার’ বা ‘এলইএস’, সেটি খুলে যায়। ফলে সেই অম্লরস খাদ্যনালি দিয়ে উপরে উঠতে শুরু করে। তখন গলার কাছে জ্বালার মতো অনুভূতি হয়।
আরও পড়ুন:
দীর্ঘ সময়ে পেট ফাঁকা রেখে তার পর রাত করে খাবার খেলেও এমন সমস্যা হয়। রাতের দিকে যাঁরা চা বা কফি বেশি পরিমাণে খান অথবা মদ্যপান করেন, তাঁদের অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা বেশি হতে পারে।
রাত করে গরম দুধ খেলে বা দুধের তৈরি খাবার বেশি খেলেও অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা হতে পারে।
আরাম হবে কিসে?
১) যে দিকে মাথা দিয়ে শোবেন, সেই অংশটি বালিশ দিয়ে একটু উঁচু করে রাখতে হবে। প্রয়োজনে দু’টি বালিশ একসঙ্গে রাখা যেতে পারে।
২) খাবার খাওয়ার ২-৩ ঘণ্টা পরে শুতে হবে। খাবার পরে অন্তত ১০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করলে ভাল হয়।
৩) রাতে ময়দার তৈরি খাবার খাবেন না। রাগি, বার্লি দিয়ে তৈরি খাবার, ওট্স বা ডালিয়া খেলে সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
৪) রাতে শোয়ার আগে ক্যামোমাইল চা খেতে পারেন। ক্যামোমাইল অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে ভরপুর। এই চা খেলে হজম ভাল হয়, শরীরে প্রদাহ কমে।
৫) অ্যালো ভেরার রস অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা কমাতে পারে। খাওয়ার আগে অল্প পরিমাণে অ্যালো ভেরা জুস খেতে পারলে গলা-বুক জ্বালার সমস্যা হবে না।
৬) খাওয়ার আধ ঘণ্টা আগে ও আধ ঘণ্টা পরে এক কাপ ঈষদোষ্ণ জলে এক চামচ অ্যাপল সাইডার ভিনিগার গুলে খেলে অম্বলের সমস্যা অনেক কমে যাবে।
৭) রোজ সকালে খালি পেটে মৌরী-মেথি ভেজানো জল বা জিরে ভেজানো জল খেলে উপকার পাবেন।
৮) অম্বলে কষ্ট বেশি হলে এক কাপ জলে এক চামচ জোয়ান দিয়ে ভাল করে ফুটিয়ে নিন। তার পর ছেঁকে ঠান্ডা করে জোয়ানের জল অল্প অল্প করে খেতে হবে। এতে গলা-বুক জ্বালার সমস্যা অনেক কমে যাবে।