ওয়র্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন ওরফে হু- এর একটি সমীক্ষা প্রকাশ করেছে বিএমজে গ্লোবাল হেলথ জার্নাল। যা থেকে জানা যাচ্ছে, দীর্ঘক্ষণ হেডফোন বা ইয়ারফোনে ফুল ভলিউমে গান শোনা, চড়া শব্দের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ থাকার জন্য পৃথিবী জুড়ে প্রায় এক বিলিয়ন অর্থাৎ ১০০ কোটি মানুষ শ্রবণশক্তি হারাতে বসেছেন। তার মধ্যে সিংহভাগ ১২ থেকে ৩৪ বছর বয়সিরা। এই সমস্যা কোনও রাজ্য বা দেশের গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, মহামারির মতো ছেয়ে যাচ্ছে গোটা পৃথিবীতে!
‘‘টানা হেডফোন বা ইয়ারফোনে গান শোনা বা অনেকক্ষণ ধরে কথা বলা অনেকটা স্লো পয়জ়নিংয়ের মতো। ইয়ারফোন হাই ফ্রিকোয়েন্সির শার্প নয়েজ় ক্যারি করে অর্থাৎ উচ্চকম্পাঙ্কের তীক্ষ্ণ শব্দ বহন করে। রাতদিন সর্বক্ষণ ইয়ারফোন ব্যবহার করার ফলে উচ্চকম্পাঙ্কের শব্দ যে স্নায়ুগুলো বহন করে সেগুলো কমজোরি হয়ে পড়ে। সাধারণত ব্যঞ্জনবর্ণ বা কনসোনেন্ট উচ্চ কম্পাঙ্কের। ফলে যখন কোনও সমাবেশে বা ভিড়ের মধ্যে অনেকের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের কথা হয় তখন বাক্যের ব্যঞ্জনবর্ণগুলো বুঝতে অসুবিধে হয়। সব কথা পরিষ্কার ভাবে শোনা যায় না। কানে কম শোনা ছাড়াও যাঁরা প্রতিনিয়ত ইয়ারফোন ব্যবহার করেন এবং লাউড মিউজ়িকের মধ্যে থাকেন তাঁরা এক সময়ে কানের মধ্যে ঝিঁঝি-র মতো শব্দ শুনতে পান। মনোযোগ কমে যায়। স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয় এবং মেজাজ ক্রমশ খিটখিটে হয়ে যায়,’’ বললেন ইএনটি স্পেশ্যালিস্ট ডা. দীপঙ্কর দত্ত।
কিন্তু এই সময়ে দাঁড়িয়ে ইয়ারফোন ব্যবহার না করার নিদান কি পুরোপুরি মেনে চলা সম্ভব? বিশেষ করে কোভিডের পরে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-এর প্রয়োজনেই এর ব্যবহার আরও বেড়েছে। এই বিষয়ে ইএনটি স্পেশালিস্ট ডা. অর্জুন দাশগুপ্ত বললেন, ‘‘ইয়ারফোনে কথা বলা বা সুফি গান, হালকা ভজন জাতীয় লাইট মিউজ়িক ইত্যাদি শোনা যেতে পারে। কিন্তু কেউ যদি সব সময়ে লাউড মিউজ়িক শোনেন তবে অবশ্যই কিছু দিন পরে তাঁর শুনতে সমস্যা হবে। লাইট হোক বা হেভি সারাদিনে একঘণ্টার বেশি ইয়ারফোন ব্যবহার করা ঠিক নয়। ব্যবহার করতে হবে ভাল কোয়ালিটির ইয়ারফোন। খারাপ মানের ইয়ারফোন, ইয়ারপ্লাগ কানের ভিতরে ঠিক মতো বসে না, ফলে সাউন্ড লিক হয়, এতে বাইরের আওয়াজ কানে ঢোকে, শুনতে অসুবিধে হওয়ায় যিনি শুনছেন তিনি ভলিউমটা আরও বাড়িয়ে দেন। এতেই ক্ষতি হয়। ধরুন, আপনি ইয়ারফোনে গান শুনছেন, আর সেই গানের শব্দ ইয়ারফোন ভেদ করে এক মিটার দূর থেকে অন্য একজন শুনতে পাচ্ছেন, তা হলে বুঝতে হবে ভলিউম মাত্রাছাড়া। এই শব্দের মধ্যে ক্রমাগত থাকলে শ্রবণশক্তি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে।’’
অভিভাবকদের জন্য
শ্রবণশক্তি হারিয়ে যাওয়ার সমীক্ষায় চিন্তা বাড়াচ্ছে ছোটদের সংখ্যা। তাদের অতিরিক্ত মোবাইলে আসক্তি এবং সর্বক্ষণ কানে ইয়ারপ্লাগ গুঁজে থাকার প্রবণতার জন্য অনেকটাই দায়ী অভিভাবকেরা। অনেক সময়ে তাঁরা নির্বিঘ্নে কাজ করার জন্য বাচ্চাদের টিভির সামনে বসিয়ে দেন, বা মোবাইল দিয়ে দেন। পাছে সেই টিভি, মোবাইলের শব্দ তাঁদের কাজে ব্যাঘাত ঘটায়, তাই তাঁরাই বাচ্চাদের হেডফোন পরিয়ে দেন। এখান থেকেই অভ্যেস শুরু। এ বিষয়ে ডা. দাশগুপ্ত বললেন, ‘‘ইয়ারফোন তো বাচ্চাদের ক্ষেত্রে আরও বেশি সমস্যা তৈরি করে। অন্য কোনও কিছুর সঙ্গে কমিউনিকেশন হয় না। তা ছাড়া ছোট বয়স থেকে সারাক্ষণ টিভি ও মোবাইলের সামনে বসিয়ে রাখলে ব্রেন ও চোখের গঠনে বাধা পড়ে। দেরিতে কথা বলা শেখে শিশুরা।’’
ব্যবহার করুন সচেতন ভাবে
হতে পারে।
তাই হেডফোন বা ইয়ারপ্লাগের মান যতই ভাল হোক না কেন প্রয়োজনে ব্যবহার করুন এবং ভলিউমের ব্যাপারে অবশ্যই বিশেষ ভাবে সচেতন থাকতে হবে।
ঊর্মি নাথ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy