মনের সঙ্গে মিষ্টির সম্পর্ক কেমন? ছবি: সংগৃহীত।
মাসখানেকের জন্য মা-বাবা বাড়িতে নেই। প্রথম বার গোটা বাড়িতে একা থাকার অধিকার পেয়ে আনন্দে এক রকম আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলেন তিন্নি। স্কুল থেকে সবেমাত্র কলেজে পা দিয়েছেন। বড়রা যাকে বলেন, ‘উড়তে’ শিখেছেন। ঠিক সেই সময়ে এতগুলি দিনের জন্য গোটা বাড়িতে একা থাকার অধিকার পেয়ে নিজেকে যেন ‘একমেবদ্বিতীয়ম’ মনে করতে শুরু করেছিলেন। প্রথম কয়েকটি দিন মন্দ লাগছিল না। সারা রাত জেগে ওয়েব সিরিজ় দেখা, পরের দিন নিজে হাতে খাবার গুছিয়ে নিয়ে কলেজে যাওয়া, যখন যা খুশি খাওয়া, বাড়িতে বন্ধুদের ডেকে আড্ডা, ভিডিয়ো কলে মা-বাবার সঙ্গে কথাবার্তা— সবই চলছিল। তবে, কিছু দিন যেতে না যেতেই তিন্নি খেয়াল করেন, সিরিজ় বা সিনেমা দেখতেও তাঁর আর ভাল লাগছে না। একা থেকেও মনে আনন্দ নেই। বিশেষ বন্ধুর সঙ্গে ঝগড়াও হয়নি। তবু কিছুতেই তিন্নির মন ভাল হচ্ছে না। রাতে কিছুতেই তাঁর ঘুম আসছে না। আর জেগে থাকলেই তো টুকটাক খাবার খেতে ইচ্ছে করে। কখনও চিপ্স, কখনও কুকিজ়, আবার কখনও চকোলেট। ফ্রিজ খুলে তন্ন তন্ন করে আইসক্রিমের খোঁজও চলেছে। মোট কথা রাত হলেই মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। আচ্ছা, মন খারাপ থাকলে কি মিষ্টি খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে?
গবেষণা বলছে, পারে। ‘জামা নেটওয়ার্ক ওপেন’ জার্নালে সেই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। মনোরোগ চিকিৎসক গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “এই ধরনের উপসর্গকে আমরা ‘কার্বোহাইড্রেট ক্রেভিং’ বলে থাকি। সাধারণ মন খারাপ যেমন ডিপ্রেশন নয়, তেমন ডিপ্রেশন হলেই যে সকলের চকোলেট খেতে ইচ্ছে করবে, তা-ও নয়। ডিপ্রেশনের অনেকগুলি স্তর আছে। এই উপসর্গ অ্যাটিপিক্যাল ডিপ্রেশনের। এই ধরনের ডিপ্রেশনের কোনও কারণ থাকে না। এমনি এমনিই মন খারাপ করে।”
তবে, শুধু একাকিত্ব বা মন খারাপ থেকে মিষ্টি খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে, এ কথা ঠিক নয়। উদ্বেগ বোধ থেকেও এই ধরনের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। মনোবিদ দেবশিলা বসু বলেন, “বেশির ভাগ সময়েই আমরা দেখি পরীক্ষার আগে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ‘বিঞ্জ ইটিং’-এর ঝোঁক বৃদ্ধি পায়। অনলাইন গেম, ধূমপানের মতো মিষ্টি খাওয়াটাও এক প্রকার নেশা হয়ে দাঁড়ায়। শুধু বড়দেরই নয়, এই সমস্যা হতে পারে ছোটদেরও। তাই আমরা এই ধরনের খাবার কম খেতে বলি। শারীরিক কসরত করার পরামর্শ দিই। অনলাইনে নয়, শিশুদের বাড়ির বাইরে গিয়ে খেলাধুলো করতে বলা হয়।”
মনের অসুখ হলে যেমন মিষ্টি খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে, তেমনই বেশি মিষ্টি খেলেও কিন্তু অবসাদ, উদ্বেগ বেড়ে যেতে পারে। এই চক্রব্যূহ থেকে নিষ্কৃতি পেতে গেলে কী করতে হবে? পুষ্টিবিদ ও যাপন সহায়ক অনন্যা ভৌমিক বলেন, “মানসিক স্বাস্থ্য এবং ডায়েট— একসঙ্গে এই দু’টি বিষয়ের উপর নজর দিতে হবে। ওজন বেড়ে যাবে জানার পরেও অনেকে এই ধরনের ‘কমফোর্ট ফুড’ খাওয়া ছাড়তে পারেন না। আবার, একই সঙ্গে মনের মধ্যে অদ্ভুত অপরাধবোধও কাজ করতে থাকে। সেখান থেকেও কিন্তু অবসাদ আসে।”
মিষ্টি খাবারের প্রতি আসক্তি নিয়ন্ত্রণ করবেন কী ভাবে?
১) শরীরে জলের অভাব হতে দেওয়া যাবে না। অনন্যার মতে, অনেক সময়ে ডিহাইড্রেশন থেকেও মিষ্টি খাবার খাওয়ার ঝোঁক বেড়ে যেতে পারে। তবে, কৃত্রিম মিষ্টি দেওয়া নরম পানীয় খেলে চলবে না।
২) কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট রয়েছে এমন খাবার যেমন ওট্স, কিনোয়া, ফল, মিষ্টি আলুর মতো খাবার খেতে পারলে ভাল।
৩) পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন খেতে হবে। এই প্রোটিন কিন্তু রক্তে ইনসুলিন ‘সেনসিটিভিটি’ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
৪) ম্যাগনেশিয়াম-যুক্ত খাবার, যেমন বাদাম, শাক-সব্জি, বিভিন্ন রকমের বীজ খেলেও রক্তে শর্করা বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা রুখে দেওয়া যেতে পারে।
৫) এক বারে অনেকটা খাবার না খেয়ে, সারা দিন ধরে অল্প অল্প করে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy