সুরের জাদু, শরীরের হিল্লোলে ঘণ্টাখানেকেরও বেশি মঞ্চ মাতিয়ে রাখতে পারেন অনায়াসেই। সন্তানের মা হওয়ার পরেও বছর ৪১-এও দিব্যি ফিট গায়িকা সুনিধি চৌহান। শ্রোতাদের মন জয়ে গানের সঙ্গে নাচ, শরীরী ভঙ্গিমাতেও সমান ভাবেই সাবলীল তিনি। এই বয়সে যখন বহু মহিলাই বাতের ব্যথায় কাবু, দু’ পা বেশি হাঁটলে হাঁপিয়ে ওঠেন, তখন কী ভাবে এত ফিট গায়িকা?
গত বছরের শেষে মুক্তি পেয়েছে সুনিধির একটি ভিডিয়ো অ্যালবাম ‘আঁখ’। একটি সাক্ষাৎকারে গায়িকা বলেছিলেন, ‘‘শুটিংয়ের সময় অন্য নৃত্যশিল্পীরা ক্লান্ত হয়ে পড়লেও, আমি টানা এক ঘণ্টার বেশি নাচ করে গিয়েছি। বাকিদের বিশ্রামের দরকার হলেও আমার প্রয়োজন পড়েনি। আমি তিন ঘণ্টা একটানা কাজ করেছিলাম।’’
ফিটনেসের জন্য বি-টাউনের নায়ক-নায়িকাদের যেমন শরীরচর্চার প্রয়োজন হয়, তেমনটাই দরকার হয় সঙ্গীতজগতের কলাকুশলীদেরও। মঞ্চ মাতানোর জন্য জিমে গিয়ে রীতিমতো কসরত করেন গায়ক সোনু নিগমও। নিজেই এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ফুসফুসের জড়তা কাটানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের শরীরচর্চার প্রয়োজন পড়ে তাঁর। সুনিধি জিমে গিয়ে ওজন তোলার পাশাপাশি নজর দেন ডায়েটেও।
আরও পড়ুন:
কিছু দিন আগেই ‘ইন্টরমিটেন্ট ফাস্টিং’ করে ওজন ঝরিয়েছেন গায়িকা। সুনিধি মনে করেন, সকালটা কার্বোহাইড্রেটের বদলে প্রোটিন আর স্বাস্থ্যকর ফ্যাট দিয়েই হওয়া উচিত। দিনে ৮ ঘণ্টায় যা খাওয়ার খেয়ে নেন তিনি। নৈশভোজ সারেন সাড়ে ৭টার মধ্যে। সারা দিনে খিদে পেলে ভরসা রাখেন রকমারি ড্রাই ফ্রুটসে। পাশাপাশি ওজন নিয়ে শরীরচর্চা করেন সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন।
পুষ্টিবিদ অশ্লেষা জোশী বলছেন, ‘‘ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং, প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবার এবং ওজন নিয়ে শরীরচর্চার জোরেই এই বয়সেও রীতিমতো দৌড়ঝাঁপ করার ক্ষমতা রাখেন সুনিধি।’’ চল্লিশোর্ধ্ব মহিলাদের ক্ষেত্রে এই ধরনের ডায়েট, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং যথেষ্ট কার্যকর হতে পারে বলে মনে করেন পুষ্টিবিদ। এর নিয়ম হল, দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে উপোস করে থাকা। শরীরের চাহিদা বুঝে উপোসের সময়কাল ১০ থেকে ১৮ ঘণ্টা হতে পারে। এই ডায়েটের ক্ষেত্রে দিনে ছয় থেকে আট ঘণ্টার মধ্যেই খেয়ে নিতে হয়। বিপাকহারের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে, অতিরিক্ত মেদ গলাতে, ডায়াবিটিসের ঝুঁকি কমাতে এই ধরনের ফাস্টিং সহায়ক। ৩০-এর পর থেকে ধীরে ধীরে মাংসপেশি শিথিল হতে শুরু করে। পেশিশক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে ওজন নিয়ে শরীরচর্চা।
তবে পুষ্টিবিদ মনে করাচ্ছেন, উপকারিতা থাকলেও ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং সকলের ক্ষেত্রে উপযুক্ত নয়। হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হওয়া, ডায়েটে খাবারে পরিমাণ ঠিক না থাকলে পুষ্টির অভাব হতে পারে। তা ছাড়া ওজন নিয়ে শরীরচর্চা করতে হলেও, নিয়ম মেনে প্রোটিনের জোগান থাকা দরকার। ডায়েট এবং শরীরচর্চা চল্লিশের পরেও শরীরকে ফিট রাখবে নিঃসন্দেহে, তবে শরীর এবং প্রয়োজন অনুযায়ী এক এক জনের ক্ষেত্রে তা এক এক রকম হতে পারে।