কোন কোন ডিটক্স পানীয় এখন থেকেই খেতে শুরু করবেন? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
পুজোর সময়ে ভরপুর ভূরিভোজ হবে। তার পরেই বারোটা বাজবে শরীরের। আর আগে থেকেই যদি গ্যাস-অম্বলের সমস্যা থাকে তা হলে তো কথাই নেই। পুজোর সময়টাতে তো বটেই, এখন থেকেই উৎসবের আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে অনেকেই দেদার ভাজাভুজি, রাস্তার খাবার, কড়া পানীয় খেতে শুরু করেছেন। ফলে শরীরে বিপুল পরিমাণে টক্সিন জমা হচ্ছে। এখন থেকেই যদি সুস্থ ও তরতাজা থাকতে হয়, তা হলে শরীর ‘ডিটক্স’ করা খুব জরুরি।
ডিটক্স করা ঠিক কাকে বলে? এই বিষয়ে পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেছেন, “ডিটক্স মানে হল ‘ডিটক্সিফিকেশন’। আসলে পরিবেশ, খাবার ইত্যাদি থেকে প্রতি দিনই কিছু বিষাক্ত পদার্থ আমাদের শরীরে ঢোকে। অ্যালকোহল বা বিভিন্ন রকম ওষুধের উপাদানও এই বিষ প্রবেশের কারণ হতে পারে। সুস্থ থাকার জন্য এই সব টক্সিন বা বিষ শরীর থেকে বার করা প্রয়োজন। তা না হলে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেমন ভেঙে পড়বে, তেমনই বিভিন্ন রোগজীবাণুও বাসা বাঁধবে শরীরে।” পুষ্টিবিদের কথায়, কেবল জল খেয়ে এই সব দূষিত পদার্থ শরীর থেকে পুরোপুরি বার করে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই জরুরি ‘ডিটক্স’ পানীয়।
কেন খাবেন এই পানীয়?
বিভিন্ন রকম মরসুমি ফল, সব্জি, মশলাপাতি জলে ভিজিয়ে রাখলে, তাতে থাকা ভিটামিন, খনিজ ইত্যাদি পুষ্টিকর উপাদান জলে মিশে যায়। তখন সেই জলকেই বলা হয় ‘ডিটক্স ওয়াটার’। অনেকেই ভাবেন, কেবল ফলের টুকরো বা সব্জি কুচিয়ে ডিটক্স জল তৈরি হয়, তা কিন্তু নয়। গ্রিন টি, ঈষদুষ্ণ লেবু- জল, জিরের জল, সারা রাত ভেজানো আদা জল, শসা এবং লেবু জল— এই সবও কিন্তু ডিটক্স পানীয়। অনেকেই রাতভর মৌরী-মেথি ভিজিয়ে রেখে, সকালে তা ছেঁকে পান করেন। এটিও এক প্রকার ডিটক্স পানীয়।
শম্পার কথায়, “আমরা রোজ যে খাবার খাই, তার সবটা হজম হয় না। পরিপাক না হওয়া খাবারও দূষিত পদার্থের মতোই জমা হতে থাকে শরীরে। এই দূষিত পদার্থ বার না করে দিলে তখন তা থেকে হার্টের রোগ, পাকস্থলী ও কিডনির অসুখ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সে কারণেই ডিটক্স পানীয় খেতে বলা হয়, যা শরীরকে বিশুদ্ধ করে।” ডিটক্স-জলের আরও উপকারিতা আছে। যেমন ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বাড়াতেও এই পানীয়গুলি সাহায্য করে। সহজ করে বললে, শরীরের প্রতিটি কোষকে সুস্থ রাখাই এর কাজ।
তবে, ইন্টারনেট ঘেঁটে বা বাজারচলতি কিছু ডিটক্স পানীয় কিনে খেলে কিন্তু লাভ হবে না। কারণ, সকলের শরীরে সব রকম পানীয় কার্যকরী না-ও হতে পারে। তাই কী ধরনের পানীয় খাবেন, কারা খাবেন ও কারা নয়, তা জেনে রাখা খুব জরুরি।
কোন ‘ডিটক্স’ কার জন্য?
১) সবচেয়ে পরিচিত ডিটক্স পানীয় হল ঈষদুষ্ণ জলে লেবুর রস। পুষ্টিবিদের পরামর্শ, গ্যাস-অম্বলের সমস্যা থাকলে অথবা আলসার থাকলে, এই পানীয় খাওয়া যাবে না। যাঁদের শরীরে বেশি পটাশিয়াম সহ্য হয় না, তাঁদের জন্যও এই পানীয় বারণ।
২) তাড়াতাড়ি ওজন কমাতে চাইলে জলে শসার টুকরো ও বিভিন্ন রকম লেবু, যেমন কমলালেবু, বাতাবি লেবু বা মুসাম্বির টুকরো মিশিয়ে সেই জল পান করতে পারেন। বিভিন্ন রকম বেরি জাতীয় ফল, যেমন স্ট্রবেরি, রাস্পবেরি, ক্র্যানবেরিও মেশানো যায় জলে। সেই ডিটক্স জল শরীর তরতাজা তো রাখেই, সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।
৩) পুদিনা পাতা, ধনে পাতা, মশলার মধ্যে আদা, দারচিনি, গোটা হলুদ, লবঙ্গ ইত্যাদি ভিজিয়েও ডিটক্স পানীয় তৈরি করা যায়। এই পানীয়ে এত বেশি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে, যা অকালবার্ধক্য রোধ করতে পারে।
৫) অম্বল-গ্যাসের সমস্যা বেশি থাকলে অথবা অল্প খেলেই গলা-বুক জ্বালা করে যাঁদের, তাঁরা যদি পুজোর সময়ে ভালমন্দ খেতে চান, তা হলে আগে থেকেই ডিটক্স পানীয় খাওয়া শুরু করে দিন। সে ক্ষেত্রে মৌরি-মেথি ভেজানো জল খুবই কার্যকরী হতে পারে। টানা ১০-১২ দিন খেয়ে দেখুন, অনেক সুস্থ থাকবেন। কোনও অ্যান্টাসিড খেতে হবে না।
৬) ডায়াবিটিস, হার্টের রোগ বা উচ্চ কোলেস্টেরল থাকলে, জলে দারচিনির গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে উপকার পাবেন। দারচিনির গুঁড়ো সারা রাত জলে ভিজিয়ে রেখে সকালে ছেঁকে সেই পানীয় খেতে হবে। দারচিনির টুকরোও ভিজিয়ে রাখতে পারেন, তবে তা খুব ভাল মানের হতে হবে।
৭) কিডনির সমস্যা থাকলে বা ঘন ঘন মূত্রনালির সংক্রমণ হলে, ক্র্যানবেরি ভেজানো জল খেতে পারেন। তাতে খুবই উপকার হবে।
৮) ঋতুস্রাব অনিয়মিত হলে বা ঋতুকালীন সময়ে প্রচণ্ড ব্যথাবেদনা ভোগালে, কাঁচা হলুদ, তুলসী ভেজানো জল খেলে উপকার পাবেন। কাঁচা পেঁপে ভেজানো জলও খেতে পারেন। কাঁচা পেঁপে ঋতুস্রাবের সমস্যা দূর করতে পারে।
৯) স্থূলত্ব থাকলে আনারসের টুকরো ভেজানো জল খেতে পারেন। খুব তাড়াতাড়ি ওজন কমবে।
১০) ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে চাইলে পালং শাক, টম্যাটো, শসা ভেজানো জল খেতে পারেন। তবে শাক জাতীয় কিছু পানীয় জলে ভেজানোর আগে তা নুন-গরম জলে ভিজিয়ে রেখে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
ডিটক্স জল কখন খাবেন?
সকালে খালি পেটেই যে ডিটক্স জল খেতে হবে, তা নয়। দু'টি আহারের মাঝে খাওয়াই সবচেয়ে ভাল। প্রাতরাশের ২ ঘণ্টা পরে ডিটক্স জল খেতে পারেন, আবার দুপুরের খাওয়ার এক ঘণ্টা আগেও খেতে পারেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy