Advertisement
E-Paper

ক্যানসারের উপশম চিকিৎসায় সচেতনতা কবে আসবে

পরিবারের কেউ ক্যানসারে আক্রান্ত হলে বদলে যায় পরিবেশ। কেউ পাশে থাকেন, কেউ দূরে সরিয়ে দিতে চান। অনেকে আবার বুঝে উঠতে পারেন না, কী ভাবে সামলাবেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২২ ০৭:৩২
Share
Save

ক্যানসারের অন্তিম পর্বে যখন আর চিকিৎসা কাজে আসে না, তখন প্রয়োজন উপশম চিকিৎসার। অথচ ওই চিকিৎসার পরিকাঠামো নেই সরকারি, বেসরকারি কোনও হাসপাতালেই। ফলে রোগী এবং তাঁদের পরিবার এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। এমন ক্ষেত্রে রোগীকে বাড়িতে রেখে পরিষেবা দেওয়ার মতো অর্থ, লোকবল বা স্থানাভাব পরিবারের কাছে বড় সঙ্কট হয়ে দাঁড়ায়। আজ, ৭ নভেম্বর জাতীয় ক্যানসার সচেতনতা দিবসের প্রাক্কালে উঠে আসছে সেই প্রসঙ্গই।

পরিবারের কেউ ক্যানসারে আক্রান্ত হলে বদলে যায় পরিবেশ। কেউ পাশে থাকেন, কেউ দূরে সরিয়ে দিতে চান। অনেকে আবার বুঝে উঠতে পারেন না, কী ভাবে সামলাবেন। এমনও দেখা যায়, রোগীকে হাসপাতালে আনার লোক নেই। কী ভাবে নিয়ে আসবেন, কত দিন পর পর আসতে হবে? এমন সব প্রশ্নের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় ক্যানসারের উপশম চিকিৎসা। এই যন্ত্রণা লাঘব করতে ইএম বাইপাসের ধারে মেডিকা হাসপাতাল চালু করতে চলেছে ‘দুয়ারে উপশম’ চিকিৎসা পরিষেবা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাঁদের ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে এমন রোগীর কথা জানতে পারলে তাঁর বাড়িতে গিয়ে উপশম চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। তা হবে স্বল্প খরচে। রবিবার পরিষেবার উদ্বোধন করে হাসপাতালের অঙ্কোলজি বিভাগের অধিকর্তা-চিকিৎসক সৌরভ দত্ত বলেন, ‘‘রোগী বুঝে প্রয়োজনে বিনামূল্যে এই পরিষেবা দেওয়া হবে।’’

এই উপলক্ষে এ দিন সকাল সাড়ে ন’টায় সচেতনতামূলক এক পদযাত্রা হয় কিশোর ভারতী স্টেডিয়াম থেকে হাসপাতাল পর্যন্ত। উপস্থিত ছিলেন চন্দন সেন, অনুপম রায়, কল্যাণ সেন বরাট, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। এ দিন ক্যানসার এবং উপশম চিকিৎসা সম্পর্কে সামগ্রিক সচেতনতা সংক্রান্ত আলোচনাচক্রের আয়োজন হয়েছিল সায়েন্স সিটি প্রেক্ষাগৃহে। চিকিৎসক, মনোরোগ চিকিৎসক, ক্যানসার নিয়ে কাজ করা সমাজকর্মীরাও অংশ নেন। ছিলেন ক্যানসার-জয়ীদের পাশাপাশি এই রোগে মাকে হারানো ছেলেও।

সমাজকর্মী অনুপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মানুষকে বোঝাতে হবে, ক্যানসার হলে তাকে নিয়েই বাঁচতে হবে। তাই ভয় না পেয়ে জীবনকে উপভোগ করুন।’’ একই বক্তব্য সমাজকর্মী নীলেন্দু সাহারও। ক্যানসার থেকে সুস্থ হয়ে ওঠাকেয়া দে জানাচ্ছেন, ১৫ বছর ৮ মাস আগে তাঁর ক্যানসার ধরা পড়েছিল। বাঁচবেন না ভেবে প্রথমে চিকিৎসা করাতে চাননি। এখন কেয়ার মন্তব্য, ‘‘চিকিৎসা করলে এবং মনের জোর রাখলে কিছু ক্ষেত্রে এই রোগকে হারানো সম্ভব।’’

চিকিৎসক সায়ন দাসের পর্যবেক্ষণ, ‘‘ক্যানসার আবারফিরে এল না তো, এই ভেবে সুস্থ হয়ে ওঠা বহু রোগীই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে থাকেন। সিনেমায় ট্র্যাজিক দৃশ্য হিসাবেও এই রোগই বেছে নেওয়া হয়। এমন ভাবনাচিন্তা বদলের সময় এসেছে। রোগীর বাড়ির লোককে প্রশিক্ষণ দিয়ে উপশম চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে রোগের যন্ত্রণা কিছু হলেও কমানো সম্ভব।’’ চিকিৎসক সুদীপ দাসের আবার মত, ‘‘ক্যানসার বিভিন্ন ধরনের হয়। তার পর্যায়েও রয়েছে বিভিন্নতা। কার কত তাড়াতাড়ি বা কত দেরিতে রোগ ছড়িয়েছে, এ নিয়ে আগাম ধারণা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা উচিত।’’ আলোচনায় উপস্থিত মনোরোগ চিকিৎসক অরুণিমা দত্তের পরামর্শ, ‘‘পরিবারের লোক অবশ্যই পাশে থাকবেন। তবে চিকিৎসকদেরও আরও মানবিক হতে হবে।’’ এই বিষয়ে আশাবাদী ক্যানসার চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘বাড়িতে উপশম চিকিৎসাপৌঁছে দেওয়ার এমন চেষ্টারই ভবিষ্যতে আরও প্রসার ঘটাতে হবে।’’

ক্যানসারে মাকে হারিয়েছেন অয়ন চৌধুরী। তিনি নিজের অভিজ্ঞতায় জানালেন, মায়ের অসুস্থতারসময়ে দু’মাসে ১৩ কেজি ওজন কমেছিল ছেলের। মাথার চুলও পড়ে যায়। ক্যানসার রোগীর পরিবারেরউপর দিয়ে ঝড় কী ভাবে যায়, সেটা কল্পনা করা হয়তো অসম্ভব। তবে রোগের সঙ্গে লড়াইয়ে একটুভাল ভাবে বাঁচার বন্দোবস্তকরলেও অনেকটা উপশম হয়।’’

cancer awareness Cancer Fight

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}