বাড়িতে নিয়মিত করা যায় ক্যালিসথেনিক এক্সারসাইজ়।
ইদানীং বেশ জনপ্রিয় হয়েছে ক্যালিসথেনিক ওয়ার্কআউট। এর জন্য প্রয়োজন হয় না কোনও সরঞ্জাম। অ্যাক্রোব্যাট ও জিমন্যাস্টিকের সঙ্গে বেশ কিছুটা মিল রয়েছে এর। ক্যালিসথেনিক একবার শিখে গেলে সারা জীবন করা যায়। সময়ের অভাবে প্রশিক্ষকের কাছে যেতে না পারলেও অসুবিধে থাকে না। ফিটনেস বিশারদ গুরুপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “শরীরের বিভিন্ন পেশির সমন্বয়ে হয় ক্যালিসথেনিক।”
‘ক্যালিসথেনিক’ শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘ক্যালস’ যার অর্থ সৌন্দর্য, এবং ‘স্থেনস’ যার অর্থ শক্তি থেকে এসেছে। শরীরের কার্ডিয়োভাসকুলার সিস্টেমকে উন্নত করার সঙ্গে পেশিকে শক্তিশালী করে তোলে ও অঙ্গবিন্যাসে সহায়ক। ক্যালিসথেনিক আসলে নিজের শরীরের ওজনের সাহায্যে ধীরে ধীরে শক্তি বাড়ানোর অনুশীলন। কত বার, কত ওজন তোলা হচ্ছে সে দিকে নজর না দিয়ে নতুন ক্ষমতা আয়ত্ত করে শরীর কতটা চাপ নিতে প্রস্তুত, সেটাই দেখা হয়। ফিটনেস ট্রেনার সৌমেন দাসের কথায়, “সব বয়সের মানুষই এই ব্যায়াম করতে পারেন। ছোট থেকেই ক্যালিসথেনিকের অভ্যাস জরুরি।” ফুটবল, ক্রিকেট কিংবা যে কোনও আধুনিক অ্যাথলেটিক্সেও এখন ক্যালিসথেনিক ব্যায়াম অনেকটা জায়গা জুড়ে থাকে। ফিটনেস বাড়াতে পুলিশের ট্রেনিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশও হয়ে উঠেছে এই ব্যায়াম।
কী করবেন ক্যালিসথেনিকে?
ক্যালিসথেনিকের মূলত চারটি অংশ। পুশ আপ, পুল আপ, কোর অর্থাৎ অ্যাব ও পায়ের ব্যায়াম। তবে কে, কী ভাবে করবেন, তা নির্ধারণ করবেন অবশ্যই প্রশিক্ষক। গুরুপ্রসাদ বললেন, “ক্যালিসথেনিক খুব কঠিন নয়, শুধু মানসিক ভাবে একটু জোর রাখলেই হবে। দৈনন্দিন জীবনে কাজের ফাঁকে, অফিসে বসে সেরে নেওয়া যায় এই ব্যায়াম।” পুশ আপ-এর মধ্যে থাকে ব্যাক পুশ আপ, বেঞ্চ পুশ আপ ইত্যাদি। পুল আপের জন্য প্রথম প্রথম যে কোনও উঁচু রড ধরে ঝুললেই হতে পারে। খেলার মাঠের গোলপোস্ট পুলআপের জন্য বেশ ভাল জায়গা। কোরের জন্য প্রথমে সোজা হয়ে টানটান শুয়ে পড়ুন। মাথার পিছনে হাতদুটো রেখে আঙুল লক করে নিন। এ বার মাটি থেকে উপর দিকে পা চার ইঞ্চি তুললে আপনাআপনি উঠবে হাত ও মাথা। এতে চাপ পড়বে পেটের পেশির উপরে। ফলে কমবে পেটের চর্বি। পাশাপাশি ক্যালিসথেনিকে আর্চ বা যোগাসনের মতো ধনুরাসনও করা হয়। এর একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ পায়ের ব্যায়াম। ফলে পায়ের পেশি মজবুত হয়। পায়ের জন্য করা হয় স্কোয়াট, জাম্পিং স্কোয়াট। এতে পায়ের সঙ্গে হিপ, কোমর, পেটের পেশিরও ব্যায়াম হয়। এ ছাড়াও এই ব্যায়ামের মধ্যে করা হয় এয়ার স্কোয়াট, বুলগেরিয়ান স্প্লিট স্কোয়াট, ব্যাকওয়ার্ড লাঞ্জ, সিঙ্গল-লেগ ব্রিজ, গ্লুট ব্রিজ, প্লায়ো লাঞ্জ, সিঙ্গল-লেগ হাফ স্কোয়াট ইত্যাদি। তবে প্রশিক্ষক সৌমেন দাস বললেন, “প্রতিটি ব্যায়ামই অন্তত ১০ থেকে ২০ বার দু’-তিন সেটে করা প্রয়োজন।” যত বেশিবার একই ধরনের ক্যালিসথেনিক ব্যায়াম করা যাবে সুফল তত বেশি মিলবে। এর মধ্যে ‘হিউম্যান ফ্ল্যাগ’ ব্যায়ামটি সত্যি চোখে পড়ার মতো। হিউম্যান ফ্ল্যাগের ক্ষেত্রে হাতের কবজি একে অপরের উপরে রাখা অত্যন্ত জরুরি। কারণ পতাকার ডান্ডা ধরে ওঠার সময় ঘুরে গেলে চলবে না। দ্বিতীয়ত হাত মেলে ধরতে হবে। নীচের হাত শরীরের উপর চাপ সৃষ্টি করে, তাই সেটিকে সম্পূর্ণ সোজা রাখতে হয়। উপরের হাত শরীর টেনে ধরে। এ ভাবে দুটি বিপরীতমুখী শক্তি সৃষ্টি হয়। এক হাত চাপ দেয়, অন্য হাত টান মারে। হাতের শক্তি কাজে লাগিয়ে শরীরকে ঠিক অবস্থানে রাখতে হয়। তবে নতুন যাঁরা ব্যায়াম করছেন, তাঁরা হুট করে একা এটি করতে যাবেন না।
কেন করবেন ক্যালিসথেনিক?
ক্যালিসথেনিকে শারীরিক নমনীয়তা, সহনশক্তি, মনোবল, একাগ্রতা বাড়ে। নিয়ন্ত্রণ করে অতিরিক্ত রাগ। বাড়ায় মেটাবলিজম রেট, কমায় ফ্যাট। আর্থ্রাইটিসের মতো সমস্যায় উপকার পাওয়া যায়। ডায়াবেটিক রোগী বা হার্টের রোগীর জন্যও ক্যালিসথেনিক বেশ ভাল। গুরুপ্রসাদ বললেন, “রোজ অন্তত ২০-৩০ মিনিট ক্যালিসথেনিক করলেই যথেষ্ট।”
ক্যালিসথেনিকে যে কোনও দিন যে কোনও ব্যায়াম করলে তাতে উপকার পাওয়া যাবে না। বরং ক্ষতি হতে পারে শরীরের। সৌমেনের মতে, “যে দিন কাঁধের ব্যায়াম করা হবে সে দিন সাইড থাই, ইনার থাই, হিপ-এর ব্যায়াম করতে হবে। আবার চেস্টের সঙ্গে বাইসেপ, আপার থাই হবে।” এই সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে ব্যক্তির শরীর ও ক্ষমতার উপর। প্রশিক্ষকের পরামর্শ মেনে চলাই ভাল। শরীরের কোথাও চোট থাকলে সতর্ক হতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy