ওজন ঝরাতে, ওজন বাড়াতে, দেহসৌষ্ঠবের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে, প্রতিযোগিতার জন্য অথবা শুধুই সুস্থ থাকতে... জিমে গিয়ে ঘাম ঝরানোর বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। কিন্তু অনেক সময়েই দেখা যায়, শরীরের ঊর্ধ্বাংশের প্রতি মন দিতে গিয়ে অবহেলিত হয় পা দু’টি। অনেকেরই দেহের উপরের অংশ ও হাতের পেশি সুঠাম হলেও তুলনায় পা দু’টি সরু মনে হয়। শারীরচর্চার উদ্দেশ্য যা-ই হোক, এই অসম দৈহিক গড়ন কখনওই কাম্য নয়। তাই সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন আলাদা করে মন দিয়ে পায়ের এক্সারসাইজ় করা প্রয়োজন।
শুরুর কথা
ফিটনেস বিশেষজ্ঞ অজয় সরকার প্রথমেই মনে করিয়ে দিলেন লেগ এক্সারসাইজ়ের কিছু গোড়ার কথা। ‘‘জেনেটিক গঠন অনুযায়ী পায়ের পেশির গড়ন নির্ভর করে। পা দু’টিকে কেমন দেখানো দরকার, তার চেয়ে অনেক বেশি জরুরি কোনও ব্যক্তির দৈর্ঘ্য, ওজন ও বিএমআই অনুযায়ী তাঁর পায়ের মাসল কেমন হওয়া উচিত, তা জেনে এক্সারসাইজ় শুরু করা। শরীরের বাকি অংশের অনুপাতে পায়ের পেশির গঠন ঠিক কেমন হওয়া উচিত, তা নির্ধারণ করার উপায় রয়েছে। আর সেই সমতা বজায় থাকলে তবেই একজনকে দেখতে সুন্দর লাগবে সার্বিক ভাবে। পায়ের পেশিগঠনের চাহিদা একজন খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে এক রকম হবে, আবার একজন অফিসযাত্রীর ক্ষেত্রে অন্য রকম। স্বাভাবিক ভাবেই কারও পায়ে ভাল কাফ মাসল, হ্যামস্ট্রিং, গ্লুটস থাকলে তাঁর পা দু’টি অন্যদের তুলনায় দেখতে ভাল লাগবে। তাই পায়ের ব্যায়ামে মন দেওয়ার আগে তা সম্পর্কে ভাল করে জেনে তবেই শুরু করা দরকার,’’ বললেন তিনি।
হালকা থেকে ভারী
যাঁরা বিগিনার, অর্থাৎ সদ্য শারীরচর্চা শুরু করেছেন, তাঁদের উচিত ট্রেনারের পরামর্শ মেনে ছোট ছোট পদক্ষেপে শুরু করা। মেশিন এক্সারসাইজ় বা ওজন নিয়ে ব্যায়াম করার আগে কিছু বেসিক পায়ের এক্সারসাইজ় অভ্যেস করতে পারেন। প্রথমেই ওজন নিয়ে ভারী এক্সারসাইজ় করতে গেলে ইনজুরির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ফিটনেস বিশেষজ্ঞ গুরুপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় পরামর্শ দিলেন কয়েকটি পায়ের এক্সারসাইজ়ের—
n স্কোয়াটস: ওয়ার্ম-আপ করে নিন ওঠবোস করে। এ বার স্কোয়াট, হাফ স্কোয়াট ও সুমো স্কোয়াট দিয়ে শুরু করুন। প্রথম প্রথম ওজন ছাড়াই শুরু করুন। একটু অ্যাডভান্সড লেভেলে হাতে ওজন নিয়ে স্কোয়াট করতে পারেন। পায়ের শেপ ঠিক করার পাশাপাশি গ্লুটস, ইনার থাই মাসলসের জোর বাড়ায় এই ব্যায়াম। পা ও পশ্চাদ্দেশের পশ্চার ও বডি-ব্যালান্স ঠিক করতে স্কোয়াটের জুড়ি নেই।
n লাঞ্জেস: লোয়ার বডি পার্টের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যায়াম। কোর স্ট্রেংথ বাড়াতেও এর জুড়ি নেই। পায়ের মাসল ডেভেলপমেন্টের প্রাথমিক পর্যায়ে লাঞ্জেস শুরু করা দরকার। প্রথমে ওজন ছাড়া এবং পরবর্তীকালে হাতে ওজন নিয়ে করা দরকার। হাঁটুর জোর বাড়াতেও কাজে লাগে লাঞ্জেস।
এক্সারসাইজ়ের পাশাপাশি পরিমিত ডায়েট ও বিশ্রামও দরকার। তবেই ব্যায়ামের সম্পূর্ণ উপকারিতা প্রতিফলিত হয়। পেশি গঠনের এক্সারসাইজ় মানেই শুধুই প্রচুর প্রোটিন খেতে হবে, এ ধারণা ভুল। শরীরের চাহিদা ও ডায়াটিশিয়ানের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়েট-চার্ট ঠিক করা উচিত। দরকার হলে প্রোটিন পাউডার খেতে হতে পারে। নয়তো মাছ-মাংস-ডিম-ছানা-ডাল ইত্যাদি প্রোটিনের স্বাভাবিক উৎসের উপরে নির্ভর করুন। এক্সারসাইজ়ের সময়ে পেশির কোষের যে ভাঙন হয়, তা মেরামতের চাহিদা তৈরি হয়। সেই অনুযায়ী খাবারের জোগান দেওয়া প্রয়োজন। আর বিশ্রামের সময়ে সেই পুষ্টিগুণ শোষণ করে দেহের কোষ। তাই যথেষ্ট বিশ্রামও দরকার।
লোয়ার বডি পার্টের জন্য নিয়মিত ভাবে সপ্তাহে এক-দু’দিন বরাদ্দ করলে দেখবেন, সৌন্দর্য-বৃদ্ধির পাশাপাশি পা দু’টির পেশিগঠনও মজবুত হয়েছে, যা প্রত্যয়ী করে তুলবে আপনাকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy