পল্লবী, বিদিশা, মঞ্জুষাকে দেখে কি কিছু বোঝার উপায় ছিল? ছবি: সংগৃহীত
শহরে আবার এক অভিনেত্রীর রহস্যমৃত্যু। অভিনেত্রী পল্লবী দে এবং মডেল বিদিশা দে মজুমদারের পর এ বার টলিপাড়ার আর এক অভিনেত্রী মঞ্জুষা নিয়োগীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল তাঁর পাটুলির বাড়ি থেকে। পরিবার সূত্রে খবর, বিদিশার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন মঞ্জুষা। তাঁর মায়ের দাবি, বিদিশার মৃত্যুর পরই হতাশায় ভুগতে শুরু করেছিলেন অভিনেত্রী। তার জেরেই আত্মহত্যা।
ঘটনার সত্যতা এখনও তদন্ত সাপেক্ষ। কিন্তু আপাত ভাবে দেখলে বোঝা যায়, শহরের একের পর একে মানুষ আত্মহননের পথ বেঁছে নিচ্ছেন। কেন এমন হচ্ছে, তা বুঝতে গেলে গভীর আর্থ-সামাজিক এবং মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ প্রয়োজন। তবে সাধারণ ভাবে কয়েকটি কারণে মানুষের এই কঠিন পথ বেছে নেওয়ার প্রবণতা তৈরি হতে পারে—
১। পরিবারে এমন ঘটনা আগে ঘটে থাকলে
২। সম্প্রতি কোনও প্রিয়জন আত্মঘাতী হলে
৩। দীর্ঘ কোনও অসুখে ভুগলে
৪। বাইপোলার ডিসঅর্ডার, অবসাদ, উদ্বেগের মতো কোনও মানসিক সমস্যা থাকলে
৫। কোনও মাদক নেশায় আসক্ত হলে
৬। দীর্ঘ মানসিক চাপের পরিস্থিতি তৈরি হলে, কোনও অসহনীয় সম্পর্কে থাকলে
৭। হঠাৎ করে প্রিয়জনের মৃত্যুর মতো কোনও মানসিক আঘাত হলে
৮। শৈশবে কোনও গভীর মানসিক আঘাত পেয়ে থাকলে
৯। কোনও প্রাণঘাতী অস্ত্র সহজলভ্য হলে
১০। অতীতেও আত্মহননের চেষ্টা করে থাকলে
কে কখন কোন পরিস্থিতিতে এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নেবেন, তা আগে থেকে অন্য কারও পক্ষে বোঝা মুশকিল। বাবা-মা, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন ঠিক কী দেখে বিপদের আশঙ্কা করবেন বা সতর্ক হবেন, তা বলা মুশকিল। তবে সাধারণ ভাবে কারও আচরণ, কথাবার্তা বা স্বভাবে হঠাৎ পরিবর্তন হলে, তার দিকে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন মনোবিদরা। কেউ যদি হঠাৎ করেই মৃত্যুর কথা বেশি বলেন, বা তাঁর না-থাকায় সকলের মঙ্গল ভাবা শুরু করেন, কিংবা বার বার প্রকাশ করেন যে, কোনও জটিল পরিস্থিতি থেকে কিছুতেই নিস্তার পাচ্ছেন না, তা হলে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। মন দিয়ে তাঁর কথা শোনার চেষ্টা করতে হবে। তবে সব সময়ে পরিস্থিতি এত সহজ হয় না। কখনও কখনও অনেক ছোট লক্ষণ আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়। হয়তো সময় মতো সেগুলি চোখে পড়লে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া যেতে পারে। জেনে নিন সেগুলি কী—
১। অনেক সময় আচরণের বদল আমরা ধরতে পারি না, কারণ সেগুলির সঙ্গে হয়তো অবসাদ বা মানসিক চাপের সরাসরি কোনও যোগ নেই। কোনও শান্ত ব্যক্তি হয়তো হঠাৎই হিংস্র বা বদমেজাজি হয়ে গিয়েছেন। কিংবা যিনি দীর্ঘ দিন ধরে অবসাদে ভুগছিলেন, হঠাৎই হয়তো খুব শান্ত এবং তৃপ্ত ব্যবহার করছেন।
২। ঘুমের অভ্যাসে বদল যেমন অবসাদের লক্ষণ, তেমনই আত্মহননের দিকে এগোনোর অন্যতম লক্ষণও হতে পারে। স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ক্ষণ ঘুমানো, ঘুম থেকে উঠতে অসুবিধা হওয়া যেমন লক্ষণ। তেমনই হঠাৎ যদি কেউ রাতের পর রাত ঠিক করে ঘুমাতে না পারেন, তা হলেও সতর্ক হতে হবে।
৩। কে গোপনে ঘুমের ওষুধ কিনে জমিয়ে রাখছেন, তা লক্ষ করা অন্য কারও পক্ষে অসম্ভব। তা-ও যদি চোখে পড়ে, কেউ ঘন ঘন ওষুধের দোকানে যাচ্ছেন, তা হলেও সতর্ক হতে হবে।
৪। কোনও আবেগপূর্ণ মুহূর্তেও যদি কেউ নিরুত্তাপ ব্যবহার করেন, যে কোনও কাজে যদি উৎসাহ হারিয়ে ফেলন, প্রায় প্রত্যেক পরিস্থিতিতেই উদাসীন থাকেন, তা হলে তা যেমন অবসাদের লক্ষণ হতে পারে, তেমনই আশঙ্কা থাকতে পারে আত্মহননেরও। সামাজিক ভাবে মেলামেশা বন্ধ না করলেও খেয়াল করা প্রয়োজন, কেউ মানসিক ভাবে খুব বেশি উদাসীন হয়ে পড়েছেন কি না।
৫। অনেক সময়ে আমরা শারীরিক লক্ষণ এড়িয়ে যাই। অনেকেই জানেন না, এগুলিও অবসাদের উপসর্গ হতে পারে। তেমনই কারও মধ্যে আত্মহননের প্রবণতা তৈরি হলেও এমন শারীরিক লক্ষণ দেখা দিতে পারে। দীর্ঘ মাথাব্যথা, গায়ে ব্যথা, পেটে ব্যথা বা হজমের গোলমাল যেমন শারীরিক রোগের লক্ষণ, তেমনই মানসিক সমস্যারও ইঙ্গিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy