Advertisement
১৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Jaggery Benefits

গুড় খেলে ভাল থাকে ফুসফুস! শীতের পাতের নলেন গুড় কি রোগবালাই সত্যিই দূরে রাখতে পারে?

গুড় নিয়ে পুষ্টিবিদেরা সম্প্রতি সমাজমাধ্যমের রিলে, ভিডিয়োয় যা বলছেন, তাতে নলেনগুড় খাওয়ার পাপবোধ কিছুটা হলেও কম হতে পারে। কিন্তু তাঁরা যা বলছেন, তার সবটাই কি সত্যি?

ছবি: শাটারস্টক।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮:৪৭
Share: Save:

শীত মানেই স্বাদ কোরকে নলেন গুড়ের স্পর্শ। পিঠে, পায়েস, সন্দেশ, রসগোল্লা, কাঁচাগোল্লা, কিছু না হোক পাটালি বা তরল গুড়ও জিভে স্বাদের তুফান তোলে। একটা মাস অনেকেই যাবতীয় স্বাস্থ্যসচেতনতা শিকেয় তুলে নলেনগুড়ে মন দেন। কারণ, একবার গেলে ‘তিনি’ আবার আসিবেন একটি বছর পর। তবে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে করতে মনে কোনে হালকা পাপবোধ থাকে না তা-ও নয়। ‘বেশি মিষ্টি খাওয়া হয়ে যাচ্ছে’, ‘মোটা হয়ে যাব’, ‘শরীরের ক্ষতি করছি’ জাতীয় ভাবনা বিনবিন করে ঘুরপাক খায় মাথার কোনে। তবে পুষ্টিবিদেরা সম্প্রতি সমাজমাধ্যমের রিলে, ভিডিয়োয় যা বলছেন, তাতে সেই পাপবোধ কিছুটা হলেও কম হতে পারে। কারণ তাঁরা বলছেন, গুড় শরীরের বেশ কিছু উপকারও করে। তার মধ্যে অন্যতম হল ফুসফুসকে ভাল রাখা এবং রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করা।

ছবি: শাটারস্টক।

গু়ড়ের নামগান!

তারকাদের পুষ্টিবিদ রুজুতা দিবেকর যেমন বলছেন, ‘‘রাতের খাবার খাওয়ার পরে মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে হলে এক চামচ গুড় এবং ঘি মিশিয়ে খেলে, আপনার হরমোনর ভারসম্য এবং রোগ প্রতিরোধক শক্তিকে ভাল রাখবে।’’

আরও বিশদে কিছুটা একই কথা বলছেন, পু্ষ্টিবিদ দীপা জৈনও। তবে তাঁর মতে, শুধু গুড়েই যা পুষ্টিগুণ আছে, তা-ও কম নয়। তিনি বলছেন, ‘‘গুড়ে আছে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস এবং জিঙ্ক, সেলেনিয়ামের মতো খনিজ। যা সংক্রমণ ঠেকানোর ক্ষমতাকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি লিভারকে দূষণমুক্ত করে, হজমশক্তিকে ভাল রাখে এমনকি, মহিলাদের হরমোন জনিত সমস্যাও দূরে রাখে। সব মিলিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও থাকে দূরে।’’

ছবি: সংগৃহীত।

গুড় ফুসফুসও ভাল রাখে, সে কথা বলছেন, মুম্বইয়ের পুষ্টিবিদ ড. নিরুপমা রাও। তিনি স্পষ্টই বলছেন, ‘‘গুড় ফুসফুসের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। গুড়ে যে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট আছে, তা আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজাত ফুসফুসের অসুখ এবং সংক্রমণকে দূরে রাখে। এ ছাড়া, গুড়ে অ্যালার্জি রোধক উপাদানও আছে। তাতেও ফুসফুসের সংক্রমণকে দূরে রাখা যায়।’’

পুষ্টিবিদদের পাশাপাশি নয়াদিল্লির এক চিকিৎসক সুরিন্দর কুমারও গুড়ের উপকারিতায় সায় দিয়েছেন। চিকিৎসক কুমার বলছেন, ‘‘গুড়ে আছে, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ফসফরাস এবং আয়রন। যা হাড়, পেশি, স্নায়ু এবং হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখে তো বটেই। এতে থাকা অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট এবং জিঙ্ক এবং সেলেনিয়ামের মতো খনিজ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও ভাল রাখে।’’

ছবি: সংগৃহীত।

নাম নাকি বদনাম!

চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, গুড়ে পুষ্টি আছে ঠিকই কিন্তু তা অত্যন্ত নগন্য। ১০০ গ্রাম গুড়ে প্রোটিন আছে ০.৪ গ্রাম, ফ্যাট ০.১ গ্রাম, আয়রন ১১ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ৭০-৯০ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ১০৫০ মিলিগ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ় ০.৫ মিলিগ্রাম। কিন্তু ওই পরিমাণ পুষ্টি পেতে হলেও ১০০ গ্রাম গুড় খেতে হবে। কিন্তু যে কেউ এক সঙ্গে কতটা গুড় খেতে পারবে? ব়ড়জোর ১ টেবিলচামচ মানে ২০ গ্রাম। তাতে আর কতটুকু পুষ্টি পাওয়া যেতে পারে!

গুড়ে নিহিত চিনির পরিমাণও নেহাত কম নয়। ১০০ গ্রাম গুড়ে ৬৫-৮৫ গ্রাম থাকে সুক্রোজ়, ফ্রুক্টোজ় এবং গ্লুকোজ় থাকে ১০-১৫ গ্রাম। অর্থাৎ গুড় মানে মূলত চিনিই খাওয়া। শুধু তফাৎ এটুকুই পরিশ্রুত সাদা চিনিতে ক্যালোরি ছাড়া কিছুই থাকে না। বদলে গুড়ে অতি সামান্য হলেও পুষ্টিগুণ থাকে। তাই চিনির বদলে গুড় খাওয়া ভাল হলেও নিয়মিত খাদ্যতালিকায় গুড় রাখা খুব স্বাস্থ্যকর হবে না বলেই মনে করছেন চিকিৎসকেরা।

গুড়ের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাবৃদ্ধির দাবি নিয়েও রয়েছে সংশয়। চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, গুড়ে জিঙ্ক এবং ভিটামিন সি আছে সেটা ঠিক। এ-ও ঠিক যে ওই দু’টি উপাদানই সর্দিকাশি, রোগবালাই দূরে রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু গুড়ে ওই দুই উপাদানই রয়েছে অত্যন্ত অল্প পরিমাণে। তাই তা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কতটা সাহায্য করে, তাতে সংশয় রয়েছে। তবে চিকিৎসকেরা বলছেন, জ্বর-সর্দিকাশি হলে অনেকেরই কাজ করার শক্তি বা ইচ্ছে থাকে না। গুড় খেলে তাঁরা ‘এনার্জি’ পেতে পারেন।

অন্য বিষয়গুলি:

jaggery
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy