ভেগানিজ়ম হল এমন এক খাদ্যাভ্যাস, যেখানে মানুষ খাবারে প্রাণিজ দ্রব্য সম্পূর্ণ ভাবে এড়িয়ে চলেন। ছবি: শাটারস্টক।
বিরাট কোহলি থেকে সোনাম কপূর, আমির খান থেকে কঙ্গনা রানাউত— বলিপাড়ায় ইদানীং অনেকেই ভেগান খাদ্যাভাস মেনে চলছেন। এই তারকাদের প্রভাব কিন্তু পড়েছে ঘরে ঘরে। অনেকেই এখন ভেগান ডায়েট মেনে চলছেন। ভেগানিজ়ম হল এমন এক খাদ্যাভ্যাস, যেখানে মানুষ খাবারে প্রাণিজ দ্রব্য সম্পূর্ণ ভাবে এড়িয়ে চলেন। তার মানেই যে তিনি শুধু মাছ, মাংস বা ডিম খান না, তা নয়। দুধও বাদ। ফলে যে কোনও প্রাণীর দুধ থেকে তৈরি মাখন, ঘি, পনির, ছানা কিংবা মধু— সব কিছুই তাঁদের ডায়েটে ব্রাত্য।
বহু তারকা নিয়মিত ভেগানিজ়মের প্রচার করছেন। আর বাড়তি বয়সের শিশুরাও তা দেখে সেই ধারায় গা ভাসাচ্ছে। অনেক বাবা-মা-ও আবার চাইছেন তাঁদের শিশুরা যেন ভেগান ডায়েট মেনে চলে।
শিশুরা কেন বেছে নিচ্ছে এই ডায়েট? শুধু তাদের পছন্দের কোনও তারকা ভেগান মন্ত্রে বিশ্বাস করেন বলে? না কি এর পিছনে সত্যিই লুকিয়ে রয়েছে অন্য কোনও রহস্য? এই ডায়েট বেছে নেওয়ার প্রথম কারণটিই হতে পারে সহমর্মিতা। শুধুমাত্র পশুপাখির প্রতি দয়া এবং মায়ার কারণেও অনেক শিশু বেছে নিচ্ছে এই খাদ্যাভ্যাস। অনেকে আবার পারিবারিক কারণে এই খাদ্যাভাসে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। স্বাস্থ্য সচেতনতা বা পশুপ্রেম ছাড়াও ভেগানরা পরোক্ষ ভাবে নিজের পরিবেশ বাঁচানোর কাজেও সাহায্য করছেন। যে হেতু ভেগান ডায়েট মূলত শাক-আনাজের উপর নির্ভর করেই থাকে, তাই গাছও লাগাতে হয় বেশি পরিমাণে। এর ফলে পরোক্ষ ভাবে গ্রিন হাউস গ্যাসের কুপ্রভাব, জলের অপচয়, খরার সমস্যা মোকাবিলার কাজেও লাগে। এই ভাবনা থেকেও অনেকে এই খাদ্যাভাস মেনে চলে।
এ বার প্রশ্ন হল শিশুদের জন্য কি এই খাদ্যাভ্যাস আদৌ ভাল?
শিশুরা যদি ভেগান খাদ্যাভাসে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তা হলে কি তাঁদের সামগ্রিক বৃদ্ধির উপর প্রভাব পড়তে পারে? এই প্রশ্ন অনেক বাবা-মায়ের মনেই থাকে? পুষ্টিবিদ অনন্যা ভৌমিক বলেন, ‘‘ভেগান ডায়েট মোটেই ক্ষতিকারক নয়। তবে সমস্যা হয় যখন নেটমাধ্যম দেখে বা কারও কথা শুনে ৯-১০ বছরের শিশুরা এই ডায়েট মেনে চলতে শুরু করে। পুষ্টিবিদের পরামর্শ না নিয়ে এই ডায়েট শুরু করলে কিন্তু শরীরে পুষ্টির নানা উপাদানের ঘাটতি হতে শুরু করে। নিয়ম মেনে না চললে ভেগান ডায়েটের ক্ষেত্রে কিন্তু শরীরে ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি ১২, জিঙ্ক, ক্যালশিয়াম, আয়রন ও ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের ঘাটতি হয়। যেমন এই ডায়েটের ক্ষেত্রে আমরা শনের বীজ, চিয়া বীজ বেশি করে রাখার কথা বলি, যাতে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের ঘাটতি না হয়। শরীরে কোন পুষ্টিগুণের কতটা অভাব হচ্ছে, তা দেখে আমরা বেশ কিছু সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার কথাও বলি। শিশুদের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে। নিয়ম জেনে ভেগান ডায়েট করলে, তা শিশুদের বৃদ্ধির উপর কোনও কুপ্রভাব ফেলবে না। তবে আবারও বলছি বছরে অন্তত এক বার পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে হবে। শরীরে কোনও পুষ্টিগুণের অভাব হচ্ছে কি না, নিয়মিত পরীক্ষার মধ্যে রাখতে হবে বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। ভেগান ডায়েট মেনে চলা কিন্তু স্বাস্থ্যের পক্ষে বেশ ভাল।’’
পুষ্টিবিদ রেশমী রায়চৌধুরী আবার বললেন, ‘‘কেউ পরিবার সূত্রে ভেগান হয়, কেউ আবার পরিবেশের কথা ভেবে। কেউ শরীরের কথা ভেবে ভেগান ডায়েট মেনে চলেন, কেউ আবার ধর্মীয় কারণে। ভেগান ডায়েটে যেহেতু দুগ্ধজাত খাবার একেবারেই খাওয়া যায় না, তাই শিশু বাড়তি বয়সে কিন্তু অনেক পুষ্টিগুণের অভাব হতে পারে। সঠিক নিয়মে খাবার না খেলে প্রোটিনের ঘাটতি হয় মারাত্মক ভাবে। তাই শিশু যদি ভেগান হতে যায়, তা হলে কিন্তু বাবা-মাকে তার ডায়েটে পর্যাপ্ত পুষ্টিগুণ থাকছে কি না, সে দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। ক্যালশিয়াম, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, আয়রনের অভাব যেন শরীরে না হয়। তার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ শাক-সব্জি, সয়া দ্রব্য, ড্রাই ফ্রুটস খেতে হবে। প্রয়োজনে নিতে হবে সাপ্লিমেন্ট। পুষ্টিবিদের পরামর্শ মেনে সাপ্লিমেন্ট খেলে ক্ষতি নেই। সাধারণ খাবারের তুলনায় সাপ্লিমেন্ট কিন্তু শরীরে অনেক কম মাত্রায় শোষিত হয়। সে দিকটাও মাথায় রাখতে হবে। পুষ্টিবিদের পরামর্শ মেনে শিশুরা যদি এই ডায়েট মেনে চলে, তা হলে কিন্তু হার্টের রোগ, ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকটাই কমে। তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে ৯ থেকে ১৩ বছর বয়সে হাড়ের গঠণ ও বৃদ্ধি হয়, তাই এই সময়টা ভেগান ডায়েট মেনে না চলাই শ্রেয়। না হলে ভবিষ্যতে অস্টিয়োপোরেসিসের মতো রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy