Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Social Introversion

সাধারণ অন্তর্মুখিতা না কি মানসিক অসুখ? লক্ষণ বুঝবেন কী করে?

আপনি কি সাধারণ ভাবে অন্তর্মুখী, কথা কম বলেন? না কি এটি মূলত এক মানসিক অসুখের লক্ষণ?

কোন পর্যায়ে গেলে অন্তর্মুখিতা হয়ে ওঠে মানসিক অসুখ?

কোন পর্যায়ে গেলে অন্তর্মুখিতা হয়ে ওঠে মানসিক অসুখ? ছবি: ফ্রিপিক।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২৪ ১৬:৪৩
Share: Save:

বহু মানুষই সাধারণ ভাবে অন্তর্মুখী হয়ে থাকেন। তাঁরা মানুষের সঙ্গে মিশতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না, তাঁদের বন্ধু কম থাকে। কিন্তু, কিছু কিছু ক্ষেত্রে, এই অন্তর্মুখিতা দৈনন্দিন সামাজিক জীবন, কর্মজীবনের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। এ ক্ষেত্রে, ব্যক্তি যে কোনও মূল্যে সামাজিকতা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন। এমনকি, এই স্বভাব তাঁর কর্মস্থলে সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই পরিস্থিতিতে বিষয়টিকে আর সাধারণ অন্তর্মুখিতা বলা যায় না। এটি মূলত একটি মানসিক ব্যাধির লক্ষণ বলে মনে করেন মনোবিদেরা। মনস্তত্ত্বের ভাষায় যার নাম, “অ্যাভয়েডেন্ট পার্সোনালিটি ডিজ়অর্ডার”।

“অ্যাভয়েডেন্ট পার্সোনালিটি ডিজ়অর্ডার”-এর লক্ষণ

১) কথা বলা এড়িয়ে চলা: সমালোচনা, অস্বীকৃতি বা প্রত্যাখ্যানের ভয়ে সামাজিক যোগাযোগ, এমনকি পেশাগত ক্রিয়াকলাপগুলিও এড়িয়ে চলা। স্কুলে বা কর্মস্থলে কথা না বলা, কারও সঙ্গে মিশতে স্বাছন্দ্যবোধ না করা মূলত এই সমস্যার লক্ষণ।

২) প্রত্যাখ্যানের ভীতি: উপহাসের পাত্র হওয়ার ভয়ে বা অপমানিত হওয়ার ভয়ে কথা বলা এড়িয়ে চলা, অন্তরঙ্গ সম্পর্ক তৈরি করতে না পারা, বন্ধু বেশি না থাকা, বিব্রত হওয়ার ভয়ে ঝুঁকি নিতে বা নতুন কিছু শুরু করতে দ্বিধা, সর্বদা ভুল করার বা ভুল কথা বলে ফেলার ভীতি— এসব লক্ষণও এই সমস্যার ক্ষেত্রে দেখা যায়।

৩) যে কোনও সামাজিক পরিস্থিতে উদ্বেগ: এই সমস্যায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিরা সামাজিক পরিস্থিতিতে সমালোচনা বা প্রত্যাখ্যান নিয়ে উদ্বেগ, হীনম্মন্যতা বোধে ভোগেন এবং নতুন সামাজিক পরিস্থিতিতে ভীতি অনুভব করেন।

কারণ:

) মানসিক নির্যাতন: ছেলেবেলায় বাড়িতে, স্কুলে বা কোনও জায়গায় মানসিক ভাবে নির্যাতিত হলে এই ধরনের সমস্যা তৈরি হয়।

) কঠোর সমালোচনা: ছোট থেকে অভিভাবকের দ্বারা বা স্কুলে শিক্ষকের দ্বারা কঠোর সমালোচনার সম্মুখীন হলে বড় হয়ে এই ধরনের মানসিক সমস্যা তৈরি হতে পারে।

) উপহাস: বন্ধুদের দ্বারা বা ভাই-বোনেদের দ্বারা উপহাসের পাত্র হলে মানুষ এই ধরনের সমস্যায় ভুগতে পারে।

সমালোচনা বা উপহাসের ভয়ে গুটিয়ে থাকেন এই সমস্যায় ভুক্তভোগী মানুষেরা।

সমালোচনা বা উপহাসের ভয়ে গুটিয়ে থাকেন এই সমস্যায় ভুক্তভোগী মানুষেরা। ছবি: ফ্রিপিক

) ছেলেবেলায় বাবা-মায়ের যত্ন না পাওয়া: ছেলেবেলা স্নেহ-আদরের অভাবে বড় হলে, বাবা-মা সন্তানের মানসিক প্রয়োজনগুলির দিকে নজর না দিলে সেই ব্যক্তির মধ্যে এই সমস্যা তৈরি হতে পারে।

) বন্ধুদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হওয়া: ছেলেবেলা স্কুলে বা পাড়ায় বন্ধুদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হলে মানুষ নিজেকে সমাজ থেকে গুটিয়ে নিতে শেখে।

চিকিৎসা

এই সমস্যায় কগনিটিভ বিহেভেরিয়াল থেরাপি (সিবিটি), সাইকোডাইনামিক থেরাপি এবং স্কিমা থেরাপি সহায়ক হতে পারে। সিবিটি মানুষের চিন্তার ধরনগুলি পরিবর্তন করতে সাহায্য করে। সাইকোডাইনামিক থেরাপির উদ্দেশ্য হল কী ভাবে অতীতের অভিজ্ঞতা এবং দ্বন্দ্ব বর্তমান উপসর্গগুলির কারণ হতে পারে, তা বোঝার চেষ্টা করা। স্কিমা থেরাপিতে প্রারম্ভিক জীবনের অভিজ্ঞতা বোঝার এবং বর্তমানের দৈনন্দিন জীবনযাপনের অভিজ্ঞতার মান উন্নত করার চেষ্টা করা হয়। চিকিৎসক প্রয়োজন বুঝলে এ ক্ষেত্রে ওষুধও ব্যবহার করতে পারেন।

সব মানসিক সমস্যার মতো ঠিক চিকিৎসায় এই সমস্যা থেকেও বেরিয়ে আসা সম্ভব। লক্ষণগুলি চেনা লাগলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE