গ্রীষ্ম মানেই কেবল আম আর লিচু নয়। অনেকেই আবার তরমুজের অপেক্ষায় বসে থাকেন। আমে যাঁদের পেটের সমস্যা হয়, তাঁদের জন্য তরমুজই উপযুক্ত। তা ছাড়া অতি গরমে ঠান্ডা তরমুজ খেলে শরীরে আরামও হয়। শীতল হওয়ার পাশাপাশি শরীরে জলের ঘাটতি মেটে। কিন্তু গ্রীষ্মে তরমুজ খাওয়ার আনন্দই মাটি হয়ে যেতে পারে সতর্ক না হলে।
গরমে এই ফলের চাহিদা যত বাড়ছে, ততই বৃ্দ্ধি পাচ্ছে ভেজাল তরমুজের সংখ্যা। এই ঘটনা বেশ উদ্বেগজনক বলে জানাচ্ছে ‘ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া’। সম্প্রতি তামিলনাড়ু জুড়ে তল্লাশি চালিয়ে ২,০০০ কেজিরও বেশি এমন তরমুজ পেয়েছে তারা, যেগুলিতে রাসায়নিক ভেজাল মেশানো হয়েছে। দাবি উঠছে, তরমুজকে রাসায়নিক ভাবে মিষ্টি করা হচ্ছে এবং কৃত্রিম রং মেশানো হচ্ছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক।

তরমুজে ভেজাল রয়েছে কি না, অথবা রাসায়নিক রং মেশানো হয়েছে কি না, তা জানতে হলে দু’টি কৌশল প্রয়োগ করা যেতে পারে। ছবি: সংগৃহীত।
তরমুজে ভেজাল আছে কি না, তা কী ভাবে পরীক্ষা করবেন?
‘ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া’র বক্তব্য অনুযায়ী, তরমুজে ভেজাল রয়েছে কি না, অথবা রাসায়নিক রং মেশানো হয়েছে কি না, তা জানতে হলে দু’টি কৌশল প্রয়োগ করা যেতে পারে।
১. তরমুজটিকে অর্ধেক করে কেটে নিতে হবে। লাল দিকটি তুলোর বল দিয়ে ঘষে নিতে হবে। তুলোর বল যদি সাদা থাকে, তা হলে তরমুজটি নির্ভেজাল। যদি লাল হয়ে যায়, তা হলে বুঝতে হবে, কৃত্রিম পদার্থ মেশানো হয়েছে। তরমুজের উপর সাদা কাগজ বা টিস্যুও ঘষতে পারেন। একই ভাবে রং উঠে এলে বুঝতে হবে, ফলটি খাওয়া নিরাপদ না।
২. ফুড সেফটি অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের আধিকারদের পরামর্শ, সকলে যেন বাড়িতেও তরমুজের শুদ্ধতা পরীক্ষা করে নেন। এক গ্লাস জলে এক টুকরো তরমুজ ডুবিয়ে গুণমান পরীক্ষা করা যেতে পারে। যদি ফলের রং একই থেকে যায়, তা হলে ফলটি ভাল। কিন্তু যদি কৃত্রিম রঞ্জক পদার্থ জলে মিশতে শুরু করে, তা হলে তা খাঁটি নয়।
তরমুজে ভেজাল তৈরিতে কোন রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়?
তরমুজের মিষ্টত্ব বাড়াতে এবং অনেক দিন পর্যন্ত টাটকা রাখতে রাসায়নিক পদার্থ মেশানো হচ্ছে। লাল খাদ্যরঞ্জক এরিথ্রোসিন বি সেগুলির মধ্যে অন্যতম। এই রাসায়নিকগুলি শরীরে গিয়ে স্বাস্থ্যে ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে পারে। এর ফলে বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, ডায়েরিয়া, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল অর্থাৎ হজমের বিভিন্ন সমস্যা, মাথা ঘোরা, ঠান্ডা লাগা, কাশি, থাইরয়েড, এমনকি মানসিক স্বাস্থ্যেরও সমস্যা দেখা দিতে পারে। তরমুজ ছাড়াও, অন্যান্য ফলে কৃত্রিম ভাবে পাক ধরানোর জন্য ব্যবহৃত হয় ক্যালশিয়াম কার্বাইড, যা শরীরের ক্ষতি করতে পারে। এর ফলে বমি, ত্বকের আলসার, মাথাব্যথা এবং স্মৃতিশক্তি হ্রাসের মতো স্নায়বিক রোগের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
সঠিক তরমুজ বাছাই করার টিপস
১. খেয়াল রাখবেন, সাধারণত গোলাকার তরমুজগুলিই বেশি মিষ্টি হয়। ডিম্বাকৃতি তরমুজের স্বাদ কম।
২. পাকা, মিষ্টি তরমুজ সাধারণত বাইরে থেকে গাঢ় রঙের হয়। চকচকে তরমুজ দেখলে এড়িয়ে যাওয়াই উচিত।
৩. তরমুজের বাইরের খোসায় সাদা সাদা দাগ থাকলে জানবেন, সেগুলির স্বাদ কম।