তিনি অভিনেত্রী। দেহসৌষ্ঠব চর্চাকারী নন। অথচ তাঁকে দেখা গেল দিব্যি জিমে গিয়ে ১১০ কেজির ভারোত্তোলন করছেন! যে ধরনের ওজন ওলিম্পিক্সে তোলেন ভারোত্তোলক মহিলারা।
তিনি সামান্থা রুথ প্রভু। দক্ষিণী ছবির নামী নায়িকা তো বটেই, পাশাপাশি বলিউড এবং হলিউডের ওয়েব সিরিজ়েও অভিনয় করে ফেলেছেন। তবে সামান্থাকে গোটা ভারত চিনেছে ‘পুষ্পা’ ছবির ‘উ অন্তাওয়া’ গানে তাঁর নাচ দেখার পরে। আরও বেশি করে চিনেছে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের কঠিন সমস্যা পেরিয়ে মূলস্রোতে ফেরার যুদ্ধ জয়ের পরে। বিয়ে ভাঙার পরে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত সামান্থা প্রকাশ্যে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বহু বার। সেখান থেকে তিনি ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। নিজেকে ভাল রাখার জন্য একের পর এক চেষ্টা করে গিয়েছেন। সেই পর্বেই আরও বেশি করে স্বাস্থ্যসচেতন হয়ে পড়েছিলেন নায়িকা। কারণ সেই পর্বে তাঁর শরীরে একটি বিরল রোগও ধরা পড়ে। যার নাম মায়োসাইটিস। যা আদতে পেশিতে প্রদাহের সমস্যা।

ব্যক্তিগত জীবনের কঠিন সমস্যা পেরিয়ে মূলস্রোতে ফেরার যুদ্ধ জয় করেছেন সামান্থা। ছবি: সংগৃহীত।
মায়োসাইটিসে আক্রান্ত হওয়ায় একটা সময়ে এক এক করে কাজও হারাতে শুরু করেছিলেন সামান্থা। এখন অবশ্য তিনি নিজেকে সুস্থ করে অভিনয়ে ফিরেছেন। পাশাপাশি, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পডকাস্টও চালান। প্রায়ই নিজের স্বাস্থ্যচর্চার ভিডিয়ো পোস্ট করেন। তেমনই এক ভিডিয়োয় সামান্থাকে দেখা গিয়েছে ১১০ কেজির ওজন তুলতে। যা ফিটনেসের দুনিয়ায় নেহাৎ মুখের কথা নয়। সামান্থা ওই ভিডিয়ো পোস্ট করে লিখেছেন, ‘গো বিগ অর গো হোম’ অর্থাৎ ‘হয় বড় কিছু করো, নয়তো বাড়ি যাও’। কিন্তু ফিটনেসের স্বার্থে চাইলেই কি এত বেশি ভারোত্তোলন করা সম্ভব, না করা উচিত?

সামান্থার সেই পোস্ট। ছবি: সংগৃহীত।
বয়স বাড়লে পেশির জোর বৃদ্ধি করার জন্য ওয়েট ট্রেনিংয়ের পরামর্শ দেন বহু ফিটনেস প্রশিক্ষক। কারণ, শরীরকে চালনা করে যে পেশি, হাঁটা-চলা-বসা-কাজ করা সব কিছুই সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয় যে পেশির জোরে, তা বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শিথিল হতে শুরু করে। চল্লিশোর্ধ্ব মহিলা এবং পঞ্চাশোর্ধ্ব পুরুষদের তাই শরীরের নীচের অংশের পেশি অর্থাৎ পেট, কোমর, ঊরু এবং হাঁটু থেকে গোড়ালি পর্যন্ত পেশির বলবৃদ্ধি করতে নিয়মিত ওজন নিয়ে শরীরচর্চা করতে বলা হয়। যার আর এক নাম ওয়েট ট্রেনিং। কারণ ওজন তুললে পেশি সঙ্কুচিত হয়। তার নিয়ন্ত্রণ এবং জোর বাড়ে। সামান্থার বয়স যদিও ৩৭, কিন্তু তিনি এখন থেকেই মন দিয়েছেন পেশির বলবৃদ্ধিতে, কারণ তাঁর যে পেশির রোগ রয়েছে তার জন্যও ওয়েট ট্রেনিং উপকারী।
সামান্থাকে যে শরীরচর্চা করতে দেখা গিয়েছে, তাকে বলা হয় হিপ থ্রাস্ট। যা শরীরের সার্বিক শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি কোমর এবং পায়ের পেশির ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তবে সবার পক্ষে ১১০ কেজির ওজন তোলা সম্ভব নয়, উচিতও নয় বলে জানাচ্ছেন ফিটনেস প্রশিক্ষক পবন বহল। পবন বলছেন, ‘‘আপনার শরীর কতটা ওজন তোলার উপযুক্ত তা বোঝার জন্য প্রথমে হালকা ওজন নিয়ে ওয়েট ট্রেনিং করতে হবে। সঠিক প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে তা করতে হবে। ধীরে ধীরে ওজন বৃদ্ধি করতে হবে। যদি দেখা যায়, আপনার পেটের নীচের অংশের পেশি, মেরুদণ্ডের উপর আপনার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। তবে বুঝতে হবে, আপনার শরীর বেশি ওজন তোলার জন্য ধীরে ধীরে সক্ষম হচ্ছে। মনে রাখবেন, ভুল ভঙ্গিতে ওজন তুললে কিন্তু তা শরীরের ক্ষতিও করতে পারে।’’