সময়ের আগেই গরম পড়ে গিয়েছে। রাস্তায় বেরোলেই তীব্র তাপে অস্বস্তি হচ্ছে শরীরে। বারে বারেই জল পিপাসা পাচ্ছে। জলশূন্যতার লক্ষণও দেখা দিচ্ছে। এই গরমে হিট স্ট্রোক থেকে সাবধানও করছেন চিকিৎসকেরা। তাপমাত্রা এখনই প্রায় ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি, যখন তা ৪০ ডিগ্রির দোরগোড়ায় পৌঁছবে, তখন অস্বস্তি আরও বাড়বে। এর কারণই হল, মানুষের শরীরে তাপমাত্রা সহ্য করার স্বাভাবিক ক্ষমতা রয়েছে। ঠিক কতটা তাপমাত্রা একজন মানুষ সহ্য করতে পারেন, তার হিসাবও আছে। এর চেয়ে বেশি হয়ে যাওয়া মানেই, শারীরিক ক্ষতি সম্ভাবনা।
মানুষ কতটা গরম সহ্য করতে পারে?
এই নিয়ে কানাডার ইউনিভার্সিটি অফ অটোভার একটি গবেষণা রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বহু জনকে নিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছেন। তাঁদের ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ও ৫৭ শতাংশ আর্দ্রতায় টানা ৯ ঘণ্টা রেখে দেখেছেন, বেশির ভাগই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কেউ টানা ৯ ঘণ্টা থাকতেই পারেননি, আর যাঁরা ছিলেন তাঁদের বমি, ডায়েরিয়া, ডিহাইড্রেশনের মতো সমস্যা দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন:
গবেষকেরা জানাচ্ছেন, আগে মনে করা হত মানুষের শরীর সর্বোচ্চ ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট) অবধি তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। কারণ তখন ধরেই নেওয়া হত যে মানুষের শরীরে স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট। কিন্তু এখন এই হিসাব বদলেছে। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্কুল অফ মেডিসিন’-এর গবেষণা প্রমাণ করেছে, মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা যা ছিল, তা কমে গিয়েছে ১ ডিগ্রি ফারেনহাইটেরও বেশি। ফলে, জ্বর মাপার সময় থার্মোমিটারে যে তাপমাত্রাকে (৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস) স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হত, তা এখন নেমে পৌঁছেছে ৯৭.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৬.৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, মানুষের শরীর আগের থেকে ঠান্ডা হয়েছে, ফলে তাপমাত্রা সহ্য করার ক্ষমতাও কমেছে। তাই এখন একজন মানুষ সর্বাধিক ৩৫ ডিগ্রি অবধি তাপমাত্রা সহ্য করতে পারেন। ৪০ ডিগ্রি মানে তা মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর, আর ৫০ ডিগ্রির কাছাকাছি যাওয়া মানে তা বিপজ্জনক।
বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া ও বিপাক প্রক্রিয়ার হারের বাড়া-কমার কারণেই তাপ সহ্য করার ক্ষমতা কমছে মানুষের। গবেষকেরা ব্যাখ্যা করেছেন, ছুটলে, ব্যায়াম করলে, পরিশ্রম করলে বিপাকের হার বাড়ে। আগেকার মানুষ অনেক বেশি পরিশ্রম করতেন। ফলে, তাঁদের বিপাক ও অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার হার ছিল অনেক বেশি। তাপ সহ্য করার ক্ষমতাও ছিল বেশি। কিন্তু এখনকার জীবন উত্তরোত্তর পরিশ্রমবিহীন হয়ে পড়ছে। যন্ত্রনির্ভর আধুনিকতার ফলেই এখন আরও নানা শারীরিক সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। সহ্যশক্তিও অনেক কমে যাচ্ছে।