মরসুম বদলের সময়ে অ্যাডিনোভাইরাসের উপদ্রব বাড়ে। যে কারণে সর্দিকাশি, জ্বর লেগেই থাকে। কিন্তু এখন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের প্রকোপ সাংঘাতিক ভাবে বাড়ছে, এমনটাই জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। ‘ইনফ্লুয়েঞ্জা এ’ ও ‘ইনফ্লুয়েঞ্জা বি’ দুই প্রজাতির ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটছে। সূত্রের খবর, গত বছর থেকেই এই দুই প্রজাতির ভাইরাস ধীরে ধীরে সক্রিয় হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েছে। আর এখন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের কারণেই নতুন নতুন উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। আক্রান্তদের তালিকায় শিশু ও বয়স্কেরাই বেশি। কী ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে, তা জানিয়েছেন হু-এর গবেষকেরা।
মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার জানাচ্ছেন, গত বছর ডিসেম্বরে ইনফ্লুয়েঞ্জার দুই প্রজাতির অস্তিত্ব চোখে না পড়লেও জানুয়ারি থেকেই এদের প্রকোপ দেখা দিতে শুরু করছে। এ রাজ্যেও ফেব্রুয়ারি থেকে ফ্লু-এর ভাইরাস মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে বা কোনও কোমর্বিডিটি থাকলে, ঝুঁকি বাড়ছে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে শিশুদের ক্ষেত্রে ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রাণঘাতী হতে পারে।
আরও পড়ুন:
মোটামুটি তিন ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয় মানুষ। একটি সাধারণ, মরসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জা। দ্বিতীয়টি হল মহামারির আকার ধারণ করে, এমন ইনফ্লুয়েঞ্জা। যেমন ১৯১৮ সালের স্পেনীয় ইনফ্লুয়েঞ্জা। তৃতীয়টি হল জ়ুনোটিক ইনফ্লুয়েঞ্জা। যা প্রাণী থেকে ছড়ায়। যেমন, বার্ড ফ্লু, সোয়াইন ফ্লু ইত্যাদি। আগে ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে মাথাব্যথা, নাক দিয়ে জল পড়া, কাশি এবং গায়ে ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দিত। কিন্তু এখন উপসর্গেও অনেক বদল এসেছে। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, এমন কিছু লক্ষণ দেখা দিচ্ছে, যা আগে তেমন ভাবে দেখা যায়নি।
কী কী সেই লক্ষণ?
নিউমোনিয়ার লক্ষণ দেখা দিচ্ছে অনেকেরই। ইনফ্লুয়েঞ্জা-এ ভাইরাসেরই ‘এইচ ১ এন ১’ এবং ‘এইচ ৩ এন ২’ প্রজাতির সংক্রমণ হলে ‘অ্যাকিউট নিউমোনিয়া’ হচ্ছে অনেকের। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফুসফুস। প্রবল শ্বাসকষ্ট দেখা দিচ্ছে।
আরও এক ধরনের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে, তা হল বুকে ব্যথা। রোগীরা জানাচ্ছেন, শ্বাস নিতে গেলেই বুকে যন্ত্রণা হচ্ছে। হৃৎস্পন্দনের হারও বাড়ছে। যাঁদের আগে থেকেই হার্টের রোগ রয়েছে, তাঁদের মায়োকার্ডাইটিসের লক্ষণ দেখা দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে হৃদ্পেশিতে প্রচণ্ড প্রদাহ হয়। বুকে চাপ চাপ ব্যথা অনুভূত হয়।
শরীরে জলশূন্যতা দেখা দিচ্ছে অনেকের। সেই সঙ্গেই বমি ভাব, ডায়েরিয়া, মুখের ভিতর শুকিয়ে যাওয়া, গাঢ় রঙের প্রস্রাব হচ্ছে। চোখ ফুলে যাচ্ছে, প্রচণ্ড ক্লান্তি ভাব দেখা দিচ্ছে।
শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছে, আচমকা, জ্ঞান হারিয়ে ফেলার মতো লক্ষণও দেখা দিচ্ছে অনেকের। চিকিৎসকের কথায়, ইনফ্লুয়েঞ্জা ধরা পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ মতোই ওষুধ খেতে হবে। নিজে থেকে অ্যান্টিবায়োটিক খেলে হিতে বিপরীত হবে। জ্বর থাকলে হালকা প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে। আর প্রচুর পরিমাণে জল ও তরল খাবার খেতে হবে। শ্বাসকষ্ট শুরু হলে দ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াই ভাল।